অস্ত্র ঠেকিয়ে তিন অটোরিকশাচালক ও শ্রমজীবীর ঘরে ডাকাতি
Published: 6th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের পটিয়ার ভাটিখাইন এলাকার করল গ্রামে গভীর রাতে অস্ত্র ঠেকিয়ে তিনটি বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার শিকার তিনটি পরিবারই নিম্ন আয়ের। ডাকাতেরা তাদের ঘর থেকে নগদ টাকা, সোনার গয়না, মুঠোফোন সেটসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ভাটিখাইন ইউনিয়নের করল এলাকার সিএনজিচালক আবু তাহের এবং দিনমজুর তৌহিদুল আলম ও তাঁর ছোট ভাই ওবাইদুল আলমের ঘরে ডাকাতি হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িতে গেলে গৃহকর্তা সিএনজিচালক আবু তাহের বলেন, তাঁরা পরিবারের সবাই রাত ১১টার দিকে খাওয়াদাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েন। তাঁর স্নাতকপড়ুয়া ছেলে এহসান তাঁদের একটি কক্ষে বসে পড়ছিল। রাত প্রায় ১টা ৪৫ মিনিটের দিকে তাঁর ছেলে হঠাৎ বাইরে ডাকাত ডাকাত চিৎকার করে ওঠে। এ সময় ছেলের কাছে গিয়ে দেখেন, সাত-আটজনের মতো অচেনা লোক ঘরে ঢুকে পড়েছে। তারা অস্ত্রের মুখে তাঁদের বেঁধে মারধর করতে থাকে। এরপর চাবি নিয়ে আলমারি খুলে নগদ ২৫ হাজার টাকা, মোবাইল সেটসহ ৬০ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
আবু তাহেরের পাশের ঘরে দিনমজুর ওবাইদুল আলমের ঘরে এর কিছুক্ষণ পর ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ওবাইদুল বলেন, রাতে ঘরের বাইরে পুকুরে তিনি হাত-মুখ ধুতে গিয়ে অচেনা লোকজন দেখে ডাকাত বলে চিৎকার দেন। এ সময় তারা তাঁকে অস্ত্র দিয়ে জোরে আঘাত করে। এরপর তাঁরা ঘরে ঢুকে তাঁর স্ত্রীর এক জোড়া কানের দুল, নগদ ৯ হাজার টাকাসহ প্রায় ১৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
ওবাইদুলের ভাই তৌহিদুল আলমের বাড়িতেও ওই রাতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। তাঁদের মা রাশেদা বেগম বলেন, ডাকাতেরা তাঁর হাতের এক জোড়া চুড়ি, স্বর্ণের ৫ আনা ভরি দুল এবং আলমারি থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা নিয়ে যায়।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জায়েদ মো.
এদিকে পটিয়ার ভাটিখাইনে ডাকাতির ঘটনার এক দিন আগে গত মঙ্গলবার মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাত দলের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অজ্ঞাতনামা আরও ৮-৯ জন পালিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একাধিক দেশি অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড ক ত র ঘটন দ ল আলম আলম র এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড, গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা
চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলায় জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা দিয়েছে। আজ বুধবার বেলা তিনটায় পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ২৮ শতাংশ।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে ৩৩ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এটি জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২৮ মার্চ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও ওই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, কাল বৃহস্পতিবার ও পরশু শুক্রবার তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এরপর দুই দিন স্থিতিশীল থাকার পর ২৭ এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৪ মার্চ জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ওই দিন বেলা তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৬ মার্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ মার্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৮ মার্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ মার্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ মার্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল ২২ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলো।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে গত ১৪ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ১১ দিন জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। যার মধ্যে আট দিন মৃদু ও বাকি তিন দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে।
এদিকে জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলায় জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা দিয়েছে। মানুষের বাইরে চলাচল সীমিত হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। শহরে মানুষের আনাগোনাও কমে গেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়েছে। খায়রুল ইসলাম নামের একজন কাপড় বিক্রেতা বলেন, ‘দিনির বেলা গিরামের খদ্দের বেশি আসে। তাপ বাইড়ে যাওয়ায় খদ্দের বাজারে আসা কুমে গিয়েচে। বেচাকিনা না থাকায় শুয়েবসে কাটাতি হচ্চে।’
এদিকে তাপপ্রবাহের মধ্যেই মেঘের ঘনঘটা কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ঝড়বৃষ্টির আগেই ভুট্টা ও বোরো ধান ঘরে তোলার মৌসুমে কৃষিশ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। সুযোগ বুঝে শ্রমিকেরা অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ মজুরি দাবি করছেন।
দুপুরে সদর উপজেলার বোয়ালমারী মাঠে কথা হয় কৃষক আবুল কাশেমের সঙ্গে। কচুখেতে সেচ দিচ্ছিলেন তিনি। রোদ থেকে রক্ষা পেতে শ্যালো মেশিনের পাশে মোটা চটের ছাউনি দিয়েছেন। জমিতে সেচনালা তদারকির মাঝে মাঝে ছাউনির নিচে এসে বসছেন এবং শ্যালো মেশিন থেকে চোখেমুখে পানি ছিটাচ্ছেন। কচুর পাশাপাশি ভুট্টা ও ঢ্যাঁড়স আবাদ করেছেন এই কৃষক।
আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোইদ আর গরমে টিকা যাচ্চে না। মন বলচে না মাঠে আসি। বাড়ি বইস থাকারও উপায় নেই। জনের দাম (শ্রমিকের মজুরি) অ্যাকন ৭০০ থেকে ৮০০ ট্যাকা। আগে যেকেনে ছিল ৪০০ ট্যাকা। একই সুমাইতি ধান কাটা, ভুট্টা তুলা, পাট নিড়ানি, কচু নিড়ানির কারণে বেশি ট্যাকা দিয়েই জোন পাওয়া যাচ্চে না। তাই নিজিই জমিতি আসিচি।’