গাজীপুরের কালীগঞ্জে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মালিককে না পেয়ে কর্মচারীদের মারধরের পর তাদের কাছ থেকে অফিস রুমের চাবি নিয়ে খুলে নগদ পাঁচ লক্ষাধিক টাকা লুঠ করে নেয় সন্ত্রাসীরা। পরে কর্মচারীদের মাধ্যমে মালিকের কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করে চলে যায়। 

পাশাপাশি চাঁদা না দিলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুণ দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া এবং মালিককে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়।

ঘটনাটি গত মাসের ৭ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর-আজমতপুর-ইটাখোলা আঞ্চলিক সড়কের উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামে এলপিজি অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। 

এ ঘটনায় রিফুয়েলিং স্টেশন মালিক বাদী হয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি একই গ্রামের রতন খান প্রধান করে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৭/১৮ জনকে অভিযুক্ত করে কালীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে মামলার প্রধান আসামি রতন খানকে (৪৯) পুলিশ গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। এর আগে বুধবার (৫ মার্চ) উপজেলার মৈশাইর থেকে কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর কাশেম গ্রেপ্তার করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

আলাউদ্দিন। 

গ্রেপ্তার রতন খান উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের মৈশাইর গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী জামিল ওয়াহেদ মুহিদ ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৈশাইর গ্রামের মৃত মোতাহার হোসেনের ছেলে এবং ওই এলাকার এলপিজি অটোগ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী। তিনি বাংলাদেশ এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন এন্ড কনভারসন ওয়ার্কসপ ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা উত্তর জোনের সাবেক সভাপতি। 

ওসি আলাউদ্দিন বলেন, “ঘটনার পর থেকেই আমরা রিফুয়েলিং স্টেশনের মালিককে তার প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে তাগিদ দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তিনি নিরাপত্তাহীনার অজুহাতে তা খোলেননি। অবশেষে গত ৪ মার্চ আমি কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান স্যার, থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. আশরাফুল ইসলাম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর কাশেমকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে এসেছি। আমরা তাদের সকল নিরাপত্তার ব্যাপারে আস্বস্ত করেছি।”   

জানা গেছে, গত মাসের ৭ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। প্রতিষ্ঠান মালিকের ভাষ্য অনুযায়ী চাহিদাকৃত চাঁদার টাকা না দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুললে তা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় সন্ত্রাসীরা। এ জন্য নিরাপত্তাহীনতার কারণে প্রায় এক মাস সময় ধরে বন্ধ ছিল।

প্রতিষ্ঠান মালিক ও মামলার বাদী জামিল ওয়াহেদ বলেন, “রিফুয়েলিং স্টেশনটি একটু স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে গ্যাস নিয়ে কাজ। তাছাড়া ঘটনার পর থেকে রতন খান আমাকে এবং আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের হুমকি- প্রদান করছিল। ম্যানেজার ভয়ে ছুটির অজুহাতে বাড়ি চলে গেছে। আমিও নিরাপত্তায়হীনতায় ভুগছিলাম প্রতিষ্ঠান খুলতে। কারণ শত্রুতা করে কেউ কোন ক্ষতি করার চেষ্টা করলে আমি একেবারে পথে বসে যেতাম। থানা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন আমার এখানে এসে প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে গেছে। পাশাপাশি আমার মামলার মূলহোতা রতন খানও গ্রেপ্তার হয়েছে।” 

উল্লেখ্য, এর আগে বিষয়টি নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ‘পাঁচ লাখ টাকা লুটে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে তালা, আরো ১০ লাখ দাবি’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার হয়।

ঢাকা/রফিক/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রতন খ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

১৪ বছর আগের ঘটনায় ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা, জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বর্তমান এএসপি মো. মিজানুর রহমান এবং একই থানার সাবেক এসআই মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১৪ বছর আগের একটি ঘটনায় করা মামলা জুডিশিয়াল (বিচার বিভাগীয়) তদন্তের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার বিকেলে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক এ.কে.এম ছিফাতুল্লাহ্ এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আজহারুল ইসলাম। মামলার তদন্ত করবেন ৭ নম্বর আমলি আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসাইন।

আদালত সূত্র জানায়, ১৭ এপ্রিল ঈশ্বরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মো. মিজানুর রহমান ও একই থানার সাবেক এসআই মো. মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেন গিয়াস উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মরিচারচর গ্রামের মৃত শাহেদ আলীর ছেলে। পরে বিচারকের নির্দেশে আবেদনটি আমলে নিয়ে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।

জানা যায়, মো. মিজানুর রহমান পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হয়েছেন। তিনি বর্তমানে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে কর্মরত। আর মো. মাজহারুল ইসলাম পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ পরিদর্শক হয়েছেন।

নিহত শফিকুল ইসলামের ছেলে সুমন বলেন, আমার বাবাকে কয়েকজন মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এর মধ্যে এক নম্বর আসামি ছিলেন নজরুল ইসলাম। তার নাম কেটে দিয়ে অন্যজনের নাম লেখা হয়। এরই মধ্যে চার্জশিট হয়ে গেছে। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নজরুল ইসলামের নাম সরিয়ে দিয়েছেন।

মামলার আইনজীবী শাহজাহান কবির সাজু সমকালকে বলেন, গিয়াস উদ্দিন যে মামলাটি করেছেন, তাতে এক নম্বর আসামির নাম কেটে দেন সাবেক ওসি ও এসআই। তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছেন।

মামলা ও বাদী সূত্রে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে প্রতিবেশী নজরুল ইসলামের পরিবারের বিরোধ ছিল। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে শফিকুল ইসলামের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। দীর্ঘদিন ঢাকা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। পরে ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি মারা যান শফিকুল। এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই গিয়াস উদ্দিন থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মো. মিজানুর রহমান মামলা নেননি।

অপরদিকে ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগ করলে থানায় এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে পুলিশকে নির্দেশ দেন বিচারক।

বাদীর পরিবারের অভিযোগ, ওসি মো. মিজানুর রহমান এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ না করে এসআই মো. মাজরুল ইসলামের মাধ্যমে বাদী গিয়াস উদ্দিনকে বলেন, মামলাটি থানায় এসেছে, বাদীর টিপসই লাগবে। পরে ভুল বুঝিয়ে তার টিপসই নেওয়া হয়। পরে আদালত থেকে বাদী মামলার কপি তুলে দেখেন, নালিশি মামলার ১ নম্বর আসামি নজরুল ইসলামের নাম বাদ দিয়ে বাদীর ভাতিজা আবদুর রশিদের নাম লিখে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৪ বছর আগের ঘটনায় ওসি-এসআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা, জুডিশিয়াল তদন্তের নির্দেশ
  • জুলাই আন্দোলনে শহীদ কন্যার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • রাজধানীতে জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার
  • জুলাই আন্দোলনে শহীদের মেয়ের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার