অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যেতে বললেন পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 6th, March 2025 GMT
অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাকে আদালত যা বলেছেন, দেশের আইন যেভাবে বলেছে, সেভাবেই কাজটা করতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় মিলনায়তনে ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানবাধিকার, পরিবেশের গুরুত্বসহ আইন প্রয়োগ’ শীর্ষক এক কর্মশালায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে উপদেষ্টা এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে কর্মশালায় অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পরিসংখ্যান দেখি, বাংলাদেশের বাতাস হচ্ছে পৃথিবীর সব চাইতে দূষিত বাতাস। ১০ বছর ধরে এই ট্রেন্ড চলছে। আমি যখন অনুরোধ করছি, ইটভাটাগুলো ভেঙে দেন, তখন অনেকের (জেলা প্রশাসক) সহায়তা পাই, অনেকের পাই না। তখন আপনারা শ্রমিকস্বার্থ নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু দেশের আইনানুযায়ী যে প্রতিষ্ঠানটি চলতে পারে না, ওটা চলবে না। ওই দায়িত্বের মধ্যে আপনার ঢোকার দরকার নেই। আপনাকে আদালত যা বলেছেন, দেশের আইন যেভাবে বলেছে, সেভাবেই কাজটা করতে হবে।’
ইটভাটার মালিকেরা জমি থেকে মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘মানুষের জমি থেকে ৪০ ফুট মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এক লোক ফোন করেছেন, তাঁর সবজিবাগান থেকে গাছসহ মাটি তুলে নিয়ে যাচ্ছেন ইটভাটার মালিকেরা। বান্দরবানের লামাতে পাহাড় কাটছে ইটভাটার জন্য। ইটভাটাকে থামাতে হবে। আমি শিওর (নিশ্চিত), রংপুরেও এই সমস্যা হচ্ছে। রাতারাতি সব ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ আমাদের কম। কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযানে না যাব, আমি আপনার বাচ্চার জন্য বাতাস নিরাপদ করতে পারব না।’
একটি বাসযোগ্য দেশ গড়তে নিরাপদ খাদ্য, পানি ও বাতাসের ওপর গুরুত্ব দেন পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘পরিবেশ মানে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা। ভূমিদস্যু, বালুখেকো, পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। এটা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ পরিবেশগত অপরাধকে দুর্বল না ভাবতে পুলিশ সদস্যেদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে বড় অপরাধ। এটা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বড় অপরাধ। ভারতের আদালত এক রায়ে বলেছিলেন, খুন করে একটা মানুষ একজনকে মেরে ফেলে, কিন্তু বায়ুদূষণ দিয়ে প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। সুতরাং পরিবেশের অপরাধ বিষয়ে পুলিশের ধারণা পরিবর্তন করতে হবে।’
কর্মশালায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনায় চীন একটি মহাপরিকল্পনা করে দেবে। তবে সরকার তিস্তাপারের মানুষের কথা শুনতে চায়। এ জন্য তিস্তাপারের পাঁচ জেলার প্রশাসকদের গণশুনানির আয়োজন করতে বলেন তিনি।
কর্মশালায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মজিদ আলী, আট জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, জেলা ও দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইটভ ট র উপদ ষ ট ল ইসল ম র জন য পর ব শ অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
বিচারে গাফলতি দেখলে আবারও মাঠে নামবে ছাত্র-জনতা: মীর স্নিগ্ধ
জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রমে বিন্দু পরিমাণ গাফিলতি দেখলে আবু সাঈদের মতো বুক চিতিয়ে, মীর মুগ্ধের মতো পানি নিয়ে ছাত্র-জনতা আবারও মাঠে নামবে বলে মন্তব্য করেছেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহায়তায় আয়োজিত ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে হতাহতদের’ আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘আহত যোদ্ধাদের পাশে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পূর্ব গজালিয়া এলাকার শহীদ ছাত্রদল নেতা নুরুল আমিনের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা এবং জেলার আহত ৪৭ যোদ্ধাকে এক লাখ টাকা করে চেক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে স্নিগ্ধ বলেন, আন্দোলনে শহীদদের ও আহতদের এই ত্যাগ কোনোভাবে পূরণ করা সম্ভব নয়। দেশের জন্য ত্যাগের সাহস সবার থাকে না। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন সবসময় তাদের পাশে থাকবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, কক্সবাজারে আহত ও শহীদ পরিবারগুলো বর্তমানে অত্যন্ত কষ্টে দিনযাপন করছে। প্রশাসন সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। রমজানের শুভেচ্ছা উপহার প্রদানসহ ইতোপূর্বেও এসব সাহসী যোদ্ধাদের সহায়তা করা হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্দোলনে কক্সবাজার জেলায় ৪ জন শহীদ এবং ৮২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ৬২ জনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। এদের মধ্যে একজন শহীদসহ আহত ৪৮ জনকে বৃহস্পতিবার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে জেলার আরও ৩ শহীদ পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।