বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জননিরাপত্তা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি এবং চলতি বছর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা কঠিন হবে। নতুন প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

গত বছরের আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণবিক্ষোভে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নোবেল বিজয়ী ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলতি মাসে জানিয়েছে, ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে যদিও অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। 

নাহিদ ইসলাম বলেন, “স্বল্পমেয়াদী সংস্কার কিছুটা হলেও ঘটেছে, কিন্তু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী নয়। বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং পুলিশিং ব্যবস্থায়, আমি মনে করি না যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব।”

সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন নাহিদ ইসলাম। তিনিই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ যিনি ড. ইউনূসের নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বলে মন্তব্য করেছে রয়টার্স।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে, তার যুব নেতৃত্বাধীন দলটি জাতীয় রাজনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে পুনর্গঠন করতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল আধিপত্য বিস্তার করেছিল। এই দলগুলো আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তাদের যুক্তি হচ্ছে, ক্ষমতা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অস্থিরতার ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে হাসিনার সরকারের প্রতীকগুলোতে আক্রমণ এবং ছাত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে হামলার খবরও পাওয়া গেছে, যদিও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বলেছে যে এই প্রতিবেদনগুলো অতিরঞ্জিত।

নাহিদ ইসলাম জানান, গত সপ্তাহে গঠিত এনসিপি যেকোনো সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

তবে তিনি জানান, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে, ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ - যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দল এবং ছাত্রকর্মীদের সাথে পরামর্শ করে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করছে - এর উপর ঐকমত্য অর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই নথিটি বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন এবং গত বছরের সহিংসতায় নিহত এক হাজার জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তৈরি করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার কথা বলার পর, ছাত্র বিক্ষোভকারীরা সংবিধান পরিবর্তনের আহ্বান প্রত্যাহার করে নেয়।

নাহিদ বলেন, “যদি আমরা এক মাসের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারি, তাহলে আমরা অবিলম্বে নির্বাচনের ডাক দিতে পারি। কিন্তু যদি আরো সময় লাগে, তাহলে নির্বাচন স্থগিত করা উচিত।”

এনসিপি প্রধান জানান, বাংলাদেশের অনেক ধনী ব্যক্তি তার দলের অর্থায়নে সহায়তা করছেন। শিগগিরই তারা একটি নতুন অফিসের জন্য এবং নির্বাচনের জন্য তহবিল তৈরির চেষ্টা করবেন।

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম র জন ত ক সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

কম সংস্কার চাইলে ডিসেম্বরে নির্বাচন, বেশি চাইলে জুনের মধ্যে

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আগে কম সংস্কার চায় তাহলে নির্বাচন ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হবে। আর যদি একটু বেশি সংস্কার চায় তাহলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। 

আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রাক্তন দুই মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মিলাম ও ড্যানিলোভিচের সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানায়।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস কূটনীতিকদের বলেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশ করা সংস্কারের বিষয়ে সংলাপ শেষ হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। জুলাই সনদ আমাদের পথ দেখাবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই সনদে প্রদত্ত সুপারিশের কিছু অংশ বাস্তবায়ন করবে এবং বাকিগুলো রাজনৈতিক সরকারগুলো বাস্তবায়ন করবে।

দুই প্রাক্তন কূটনীতিক প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাধীনতা অধিকারের কাজ এবং দেশকে গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এর কাজ সম্প্রসারণের পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। এ সময় ড. ইউনূস অলাভজনক গোষ্ঠীর কাজ এবং বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সমর্থন করার জন্য দুই কূটনীতিকের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।

রাষ্ট্রদূত মিলাম ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রশংসা করে তিনি বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশে ব্যাপক সংস্কার বাস্তবায়ন এবং সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বড় সুযোগ এনে দিয়েছে।

ঢাকায় নিযুক্ত সাবেক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত জন ড্যানিলোভিচ বলেন, ভুয়া সংবাদ এবং বিভ্রান্তির হুমকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ইতিবাচক বক্তব্য এবং গুরুতর প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

তারা বর্তমান বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক, রোহিঙ্গা সংকট এবং বহুল নির্যাতিত মিয়ানমার শরণার্থীদের জন্য সাহায্য হ্রাসের প্রভাব, পূর্ববর্তী শাসনামলে চুরি হওয়া কোটি কোটি ডলার পুনরুদ্ধার, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রচেষ্টা এবং আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়েও আলোচনা করেন।

রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক মানবাধিকার সংস্থা রাইট টু ফ্রিডমের সভাপতি এবং নির্বাহী পরিচালক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ