নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “নৌযানে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত ভাড়া আজ থেকেই তালিকা আকারে প্রকাশ করতে হবে। যদি কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নেয়, তবে শুধু জরিমানা নয়, সেই লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে।”

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সচিবালয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতর ২০২৫ উপলক্ষে নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে প্রস্তুতিমূলক সভা শেষে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন।

নৌপরিবহন উপদেষ্টা বলেন, “নির্ধারিত ভাড়ার বেশি নেওয়া যাবে না। যাত্রীদের নির্ধারিত ভাড়া তালিকাভুক্ত করে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হলে শুধু জরিমানা নয়, সেই লঞ্চের রুট পারমিটও বাতিল করা হবে।”

আরো পড়ুন:

খুলনার নৌপরিবহন মালিক গ্রুপে প্রশাসক নিয়োগ

‘মোংলা বন্দরকে আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে’

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “কোনো লঞ্চ নির্ধারিত সিরিয়ালের বাইরে ছেড়ে যেতে পারবে না। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা যাবে না। শুধু সদরঘাট নয়, রাস্তা থেকে যাত্রী তোলা যাবে না। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদারকি করবে, নৌবাহিনীও সহযোগিতা করবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপ্রয়োজনে লঞ্চে চেক করে সময় নষ্ট করবে না। ফিটনেস সনদ ছাড়া কোনো লঞ্চ চলতে পারবে না এবং নির্ধারিত গতিসীমার বেশি চালানো যাবে না।”

উপদেষ্টা বলেন, “সদরঘাট এলাকায় জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত এমন বিশৃঙ্খলা থাকে যে, তিন ঘণ্টা আগে রওনা দিলেও অনেকে লঞ্চ ধরতে পারেন না। তাই রাস্তা পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রয়োজনে রেকার দিয়ে অবৈধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হবে।”

উপদেষ্টা ড.

সাখাওয়াত বলেন, “এসব সিদ্ধান্ত ১৫ রমজান থেকে কার্যকর হবে। ১৫ রমজান থেকে রাতে স্পিডবোট চলবে না। এছাড়া ঈদের পাঁচ দিন আগে ও পরের পাঁচ দিন বাল্কহেড (বালুবাহী নৌযান) চলাচল বন্ধ থাকবে। ফেরিতে বাস যাত্রীসহ উঠতে পারবে না। বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে ফেরিতে উঠাতে হবে এবং ফেরি থেকে বাস নামার পর যাত্রীরা আবার উঠতে পারবেন।”

সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দপ্তর/সংস্থার প্রধান, জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ পুলিশ, কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন পর বহন ন উপদ ষ ট ন পর বহন র বহন

এছাড়াও পড়ুন:

বাহিনীর যেসব সদস্য গুমে জড়িত তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়: কমিশনপ্রধান

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের প্রধান বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে গুমের সঙ্গে জড়িত কতিপয় ব্যক্তির জন্য পুরো বাহিনী আতঙ্কগ্রস্ত বা প্যানিক স্ট্রিকেন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার গুলশানের গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কমিশনপ্রধান। তিনি বলেন, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যেসব সদস্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নাগরিকদের গুম করার অভিযোগ আছে, তাঁদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অনুসন্ধান করছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, অপরাধীরা অনেক সময় আইনের হাত থেকে বাঁচতে তার ধর্ম, কমিউনিটি, সামাজিক গ্রুপ, ইত্যাদির আড়ালে লুকাতে চেষ্টা করে। এই প্রবণতাকে বলা হয় আইডেনটিটি বেজড ডিফেন্স বা কমিউনিটি শিল্ডিং। কিন্তু বিচার কখনো ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে হয় না, তা হয় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে। কারণ, ফৌজদারি অপরাধ একটি ব্যক্তিগত দায়, এতে কমিউনিটিকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হলে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর কালিমা মোচন হবে এবং বাহিনীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং সবাই আইনের অধীন। এটাই আইনের শাসনের মর্মবাণী। তাই গুমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায় পুরো বাহিনীর ওপর বর্তায় না। এই কমিশন ‘কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট, ১৯৫৬’–এর অনুবলে গঠিত হয়ে সম্পূর্ণ পক্ষপাতমুক্ত ও স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এ জন্য এই কমিশনের কাজে কোনো বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

কমিশন জানায়, বগুড়া পুলিশ লাইনসেও গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া গেছে। গত ১৫ বছরের মধ‍্যে এটি তৈরি করা হয়েছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি ও র‍্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া মাত্রই তা পরিদর্শন করে অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করে কমিশন। যেমন কমিশন গঠনের কয়েক সপ্তাহের মাঝেই ডিজিএফআইয়ের জেআইসি (আয়নাঘর) এবং র‍্যাব হেডকোয়ার্টারের টিএফআই পরিদর্শন করে আলামত ধ্বংসের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের কয়েকজন সদস্য এই দুটিসহ মোট তিনটি গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করা হয়েছে।

কমিশন জানায়, এখন পর্যন্ত কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্য থেকে প্রায় এক হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে আসা ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দী রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। আবার গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে।

কমিশনপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছ থেকে ৫ আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন করা ব্যক্তিদের তথ্য চাওয়া হলে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ তথ্যের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনো পাওয়া যায়নি। পুলিশ এবং বিজিবির পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রাপ্তি সাপেক্ষে অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ্ নামে গুমের শিকার ব্যক্তিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর বর্ডার দিয়ে পুশইন করার ব্যাপারে কমিশন জানে। এ বিষয়ে কমিশনের অনুসন্ধান চলছে বলে জানান কমিশনপ্রধান।

কমিশনপ্রধান আরও বলেন, ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী থাকা বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন কারাগারে গত দুই-আড়াই বছরে আটক ১ হাজার ৬৭ জন বাংলাদেশির নাম–ঠিকানাসহ একটি তালিকা পাওয়া গেছে। আরও তথ্য পাওয়া গেলে কমিশনে প্রেরণ করা হবে বলে লিখিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাপ্ততালিকায় গুমের শিকার কোনো ব্যক্তির নাম আছে কি না তার অনুসন্ধান চলমান।

কমিশনপ্রধান বলেন, কমিশন অব ইনকোয়ারি অ্যাক্টের ধারা ১০ এ(১) ও (২) অনুযায়ী কমিশনে দাখিল করা গুমসংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মধ্য থেকে মোট ৭৪টি অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন গণসচেতনতামূলক কর্মশালায় অংশগ্রহণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ভিকটিম পরিবারসহ অংশীজনদের গুমসংক্রান্ত অপরাধ ও এর দায়সংক্রান্ত বিষয়ে অবহিত করেছেন।

কমিশন জানায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা এবং অনুরূপ যেকোনো বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসমষ্টি কর্তৃক যেকোনো জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাঁদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল, তা নির্ধারণ করার জন্য কমিশন গঠিত হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অস্থিরতার কারণে এ বছর নির্বাচন কঠিন হবে
  • আবু সাঈদ হত্যা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে: আইজিপি
  • ঈদযাত্রায় নৌপথে অতিরিক্ত ভাড়া ও যাত্রীবহন করলে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা
  • নৌযানে অতিরিক্ত ভাড়া নিলে রুট পারমিটও বাতিল হবে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা
  • অপারেশন ডেভিল হান্ট: সরকার নিজের কথা শুনুক
  • ছয় ট্রলারসহ ৫৬ বাংলাদেশিকে নিয়ে গেল মিয়ানমার
  • চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রকাশ্যে টাকা ছিনতাই
  • বাহিনীর যেসব সদস্য গুমের সঙ্গে জড়িত, তা তাদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়: মইনুল ইসলাম
  • বাহিনীর যেসব সদস্য গুমে জড়িত তা তাঁদের ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়: কমিশনপ্রধান