টাঙ্গাইলে বিএনপি নেতার ওপর হামলার বিচার দাবি
Published: 6th, March 2025 GMT
টাঙ্গাইলে জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খোন্দকার আনিছুর রহমানের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকাল ১১টায় টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান খোন্দকার আনিছুর রহমান।
লিখিত বক্তব্য তিনি বলেন, “জীবন নামে এক ছেলে আওয়ামী লীগের এমপি ছোট মনিরের সাথে চলাচল করে বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতেন। সেই ছেলে আবার জাতীয় নেতা সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সাথে সাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে। সেই ছবি আমার ফেসবুকে শেয়ার হয়েছিল। গত ৩ মার্চ রাতে শহরের রেজিষ্ট্রিপাড়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জেলা যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার রাশেদুল আলম রাশেদ তাকে ডেকে নিয়ে কথা কাটাকাটি করে। এক পর্যায়ে রাশেদের সাথে থাকা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি খন্দকার আসাদুজ্জামানের ভাতিজা আব্দুল্লাহ হেল কাফি আমার ওপর হামলা করে।”
এ ঘটনায় বিচারের দাবিতে বুধবার টাঙ্গাইল সদর থানা ও জেলা বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জেলা যুবদলের আহ্বায়ক রাশেদুল আলম বলেন, “আনিছুর রহমান দলের নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালান। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির নেতাদের কাছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যে কারণে তিনি আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। তার ওপর হামলার কোনো প্রমাণ দিতে পারবেন না তিনি।”
জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামীল শাহীন বলেন, “আনিছুর রহমানের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
টাঙ্গাইল/কাওছার/এসবি
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসনের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই
বালতিতে ককটেল নিয়ে ‘খইয়ের মতো’ ফোটানোর ঘটনার পর শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বিলাসপুর, যে স্থানটি কয়েক দশক ধরে ক্রমবর্ধমান ককটেল–সন্ত্রাসের শিকার, তা একদিকে যেমন সমাজের নৃশংস চিত্রের প্রতিফলন, তেমনি এটি আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সক্ষমতা ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গীকারের সংকটের প্রতীকও বটে।
গত ২৫ বছরে ককটেল বিস্ফোরণের ফলে বিলাসপুরে সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন এবং শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তবে যে হতাশাজনক বিষয়টি বারবার সামনে আসে, তা হলো প্রশাসন ও রাজনীতিকেরা একে অপরকে দোষারোপ করলেও সহিংসতাকে দমন করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসন কেন এই অব্যাহত সহিংসতা দমন করতে পারছে না? বিশেষত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কী ধরনের অক্ষমতা বিদ্যমান, যার কারণে ধারাবাহিকভাবে এসব ঘটনা ঘটে আসছে?
বিলাসপুরের ককটেল–সন্ত্রাসের বিষয়টি কেবল প্রশাসনিক দুর্বলতার ফল নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘকালীন রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, যা সময়ের সঙ্গে আরও জটিল হয়ে উঠেছে। এই সহিংসতার কেন্দ্রে আছেন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) বর্তমান চেয়ারম্যান কুদ্দুস ব্যাপারী এবং পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জলিল মাদবর—দ্বিধাবিভক্ত দুটি রাজনৈতিক পক্ষ। এই পক্ষগুলো একে অপরের রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে।
প্রশাসনের ‘অতি শিগগির তদন্ত’ ও ‘দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা’ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি, যেগুলো কেবল রাজনৈতিক কাগুজে প্রতিশ্রুতি হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোনো কার্যকর ফলাফল আনতে পারেনি।
তবে বর্তমানে কেবল প্রশাসনিক পদক্ষেপেই সমাধান সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন ককটেল তৈরির স্থানগুলোর সঠিক শনাক্তকরণ এবং এর পেছনে থাকা শক্তিশালী চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। তবে এই পদক্ষেপগুলো কার্যকর হবে তখনই, যখন প্রশাসন রাজনৈতিক প্রভাব অতিক্রম করে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে।
এটি স্পষ্ট, একমাত্র প্রশাসনিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে না। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেন রাজনীতিকেরা এই সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন।
প্রশাসন, রাজনীতি ও সমাজ—এই তিন স্তম্ভের সমন্বয়ে বিলাসপুরের মতো অস্থির অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সুনির্দিষ্ট, কার্যকর পদক্ষেপ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, যা প্রশাসন, রাজনীতিক ও সমাজের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সম্ভব হবে। সুষ্ঠু আইনি কাঠামো, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক উদ্যোগের মাধ্যমে যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, কেবল তাতেই স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
যত দিন পর্যন্ত না প্রশাসন ও রাজনীতি একত্রে কাজ করে এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসবে, তত দিন পর্যন্ত বিলাসপুরের ককটেল–সন্ত্রাসের মতো ঘটনা অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকবে।