অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি নিয়োগের প্রতিবাদে ট্যুরিজম বিভাগের শিক্ষার্থীদের অবস্থান, হাতাহাতি
Published: 6th, March 2025 GMT
অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি করার আদেশ প্রত্যাহার ও নিজ বিভাগ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালন শুরু করেন। এদিকে বেলা দেড়টার কিছুক্ষণ আগে প্রশাসন ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নামাজ পড়তে ভবন থেকে বের হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাঁধা দেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়।
এ ঘটনার জড়িতদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোক্তার হোসেন। পরে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন।
গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদ স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনকে সবেতন ও প্রেষণে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি করা হয়। একই সঙ্গে ট্যুরিজম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদারকে বিভাগীয় সভাপতির রুটিন দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
আজকের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নিজ বিভাগ থেকে যোগ্যতার ভিত্তিতে সভাপতি নিয়োগের দাবি জানান।
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাইফ রহমান বলেন, ‘আমাদের বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রাতের আঁধারে ফাইন্যান্স বিভাগের এক শিক্ষককে সভাপতি নিয়োগ দিয়েছে। এতে রীতিমতো আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। আমাদের বিভাগে যোগ্য শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি নেব? আগের সভাপতিও অন্য বিভাগের ছিলেন। আমাদের কিছু না জানিয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে বিদেশে চলে গেছেন। আমরা আর অন্য বিভাগ থেকে সভাপতি চাই না।’
দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি জানিয়ে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা এখানেই অবস্থান করব।’
কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে হাতাহাতিএদিকে বেলা দেড়টার কিছুক্ষণ আগে প্রশাসনিক ভবনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নামাজ আদায় করতে ভবন থেকে বের হতে চাইলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের বাঁধা দেন। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। এ সময় ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাজু সরদার অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে বেলা সোয়া তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান উপাচার্যের বরাত দিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত সভাপতি বিভাগে যোগদান করবেন না।
এ ঘটনার পর জড়িত ব্যক্তিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মোক্তার হোসেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদের বিভাগের বিষয়ে যে আন্দোলন, সেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। তাঁরা তাঁদের অনুরোধ করেন, তাঁদের যেন নামাজ পড়তে যেতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁরা যেতে দেননি। এই কাজ যারা করেছেন, তাঁরা দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল চান না। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে তাঁরা এ কাজ করেছেন। এ কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাঁদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের সব কাজ বন্ধ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, আগেও ওই বিভাগের সভাপতি অন্য বিভাগ থেকে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার কেন সমস্যা হচ্ছে বোধগম্য নয়। তারপরেও উপাচার্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি নিয়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন, আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখনই এটার সমাধান চান, যেটা আসলে সম্ভব নয়। এভাবে জিম্মি করে কোনো সভ্য সমাজের কার্যক্রম হতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন য ব ভ গ থ ক কর মকর ত অবস থ ন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঢামেকে যৌথবাহিনীর অভিযান, ৩৩ ‘দালালকে’ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানির ঘটনায় অর্ধশতাধিক ‘দালালকে’ আটক করেছে যৌথবাহিনী। এর মধ্যে নারী-পুরুষ মিলে ৩৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থ জরিমানা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের গোপন তথ্য ও নজরদারিতে এই যৌথ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ঢাকা জেলার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফরিন জাহান।
এ সময় হাসপাতাল চত্বর, বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নারী সদস্যসহ এই দালাল চক্রকে আটক করে। যারা বিভিন্ন কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছিল।
গোয়েন্দা সূত্রে জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখার পর আজ যৌথ অভিযান চালানো হয়। এতে অর্ধশতাধিক দালালকে আটক করা হয়েছে। সবার নাম পরিচয় ও সার্বিক তথ্য যাচাই-বাছাই করার পর নারী-পুরুষ মিলে মোট ৩৩ জনকে সর্বোচ্চ ৩ মাসসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জন নারী ও ১৪ জন পুরুষ।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বলেন, হাসপাতালে কিছু দালাল কাজটাকে পেশা হিসেবে নিয়েছে। দালালির কাজে হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও পুনরায় তারা ছাড়া পেয়ে এই হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে থাকে। হাসপাতালে আশপাশে কিছু সংখ্যক লোক বসবাস করে। এই কিছুসংখ্যক মানুষ হাসপাতালে এসে রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করে থাকে। এর আগেও তাদের অভিযানে ধরা হয়েছিল। সেসব অভিযানে তাদের শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা বেরিয়ে পুনরায় হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে তাদের দালালি কাজ অব্যাহত রাখে, এতে বোঝা গেল তারা এই দালালি কাজটা পেশা হিসেবে নিয়েছে। এদের নির্মূলে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
পরিচালক আরো বলেন, আজকে এই দালাল নির্মূলে এনএসআই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনাবাহিনী তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে এই অভিযান চালানো হয়। এই অভিযানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমর্থন আছে। অভিযানে আটক কয়েকজনকে যাচাই-বাছাই করে ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ঢামেক পরিচালক বলেন, আমাদের এখানে দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন ও স্থায়ী দু-একজন এসব কাজে জড়িত হয়ে পড়ে। আমরা আজকে দৈনিক মজুরিতে যারা দালালি কাজে জড়িত প্রমাণ পাব, তাদের চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া যারা পারমানেন্ট স্টাফ আছে দু-একজন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরেও এমন অভিযানে ২১ জনকে আটক করেছিল যৌথবাহিনী। তাদেরও বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
ঢাকা/এনএইচ