আবরার ফাহাদ আমাদের আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের জার্নি: আসিফ মাহমুদ
Published: 6th, March 2025 GMT
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘আবরার ফাহাদ শুধু একটা নাম নয়, আবরার ফাহাদ আমাদের আগ্রাসনবিরোধী লড়াইয়ের একটা জার্নি। এবং সেই জার্নির একটা অন্যতম অর্জন হচ্ছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থান।’ আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়ায় শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে এ দেশের তরুণেরা জীবন দেওয়ার প্রেরণা পেয়েছে আবরার ফাহাদ থেকে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আগ্রাসন থেকে মুক্তির জন্য এ দেশের তরুণেরা ঝাঁকে ঝাঁকে ঝাঁপিয়ে পড়েছে রাজপথে। এবং অবশেষে আমরা আগ্রাসী পরাশক্তির বাংলাদেশীয় সবচেয়ে বড় খুঁটি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে পালাতে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছি।’
আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার দিনের স্মৃতি স্মরণ করে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আবরার ফাহাদ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লিখতে গিয়ে ২০১৯ সালে বুয়েটে ছাত্রলীগের অকথ্য নির্যাতনে শহীদ হন। তাঁর শাহাদাতের পর সেদিন সকালে যখন আমাদের কাছে খবরটা পৌঁছায়, তখন থমথমে পরিবেশে কোনো কিছু না ভেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করি। সেদিন প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে সবাই বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ মিছিলে অংশগ্রহণ করি। তারপর খুনিদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন চলমান থাকে।’
আগ্রাসনবিরোধী দীর্ঘ লড়াইয়ে আবরার ফাহাদ অন্যতম একটা নতুন ধাপ সংযোজন করে দিয়ে গেছেন জানিয়ে আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ‘সেই লড়াইটাকে আবরার ফাহাদকে সামনে রেখে চালু রাখতে চেয়েছি। প্রতিবছর ৭ অক্টোবর সেই দিনটিকে স্মরণ করতে চেয়েছি। আবরার ফাহাদের তৃতীয় শাহাদাতবার্ষিকীতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মরণসভার আয়োজন করেছিলাম। সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করে। আহত অবস্থায় আমিসহ ২৪ জন সহযোদ্ধাকে থানায় সোর্পদ করে। দীর্ঘদিন আমিসহ ২৪ জন জেলে ছিলাম।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ এবং আহত ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে, আগ্রাসনবিরোধী সংগ্রামে আবরার ফাহাদসহ আরও যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের যেন এই বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষ, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আজন্ম মনে রাখেন, সে জন্য এই কুষ্টিয়া স্টেডিয়ামের নাম আবরার ফাহাদের নামে করা হয়েছে। সারা দেশে আরও যত স্থাপনা আছে, সেখানে আত্মত্যাগকারী সেই বীর শহীদদের স্মরণ করার জন্য, সেগুলোও তাঁদের নামে নামকরণ করব।’
ফ্যাসিবাদী সরকার আবরার ফাহাদের স্মৃতিকে মুছে দিতে চেয়েছিল মন্তব্য করে বক্তব্যে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তারা আবরার ফাহাদকে নিয়ে কোনো নিউজ করতে দিতো না। কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিত না। কর্মসূচি পালন করতে গেলে সেখানে হামলা হতো। জেল–জুলুমের স্বীকার হতে হতো। কিন্তু যাঁরা আত্মত্যাগ করেন, তাঁদের নাম কখনোই মুছে দেওয়া যায় না। এটি আবারও প্রমাণিত হলো। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর এখন বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে। আগ্রাসনবিরোধী প্রতিটি লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা হিসেবে থাকেন শহীদ আবরার ফাহাদ।’
কুষ্টিয়ায় শহীদ আবরার ফাহাদ ষ্টেডিয়ামের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আবরার ফাহাদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নারীরাও
ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন নারীরাও। রাজধানীর বাইরে থেকে এসে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন তাঁদের কেউ কেউ।
আজ শনিবার প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট, বাংলাদেশের আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বেলা তিনটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণজমায়েত শুরুর কথা ছিল। তবে তার আগেই বিভিন্ন স্থান থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে থাকেন নারী–পুরুষসহ সর্বস্তরের মানুষ। তাঁরা ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের নিন্দা জানান।
নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে এসেছেন শান্তা বেগম (৬১)। পুত্রবধূ সালমা আক্তার এসেছেন তাঁর সঙ্গে। শান্তা বেগম ছেলের ফোনে ইউটিউব থেকে জানতে পারেন ফিলিস্তিনিদের পক্ষে এ কর্মসূচির কথা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গাজাবাসীর পক্ষে আছি, ফিলিস্তিনের পক্ষে আছি। ইহুদিদের বিপক্ষে।’ শান্তা বেগমের পুত্রবধূ সালমা গৃহিণী। সালমার স্বামী চায়ের দোকান করেন নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের নারী ও শিশুদের ওপর নির্মম হামলার চিত্র নিয়মিত দেখেন সালমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য এটাই যে আমরা আমাদের অন্য মুসলিম ভাইবোনের পাশে দাঁড়াতে পারি...তারা নিরাপদ থাকতে পারে, তাদের ওপরে যে যুদ্ধটা চলতেছে, এটা যাতে থামে। অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো যাতে দাঁড়াইতে পারে।’
রাজধানীর উত্তরা থেকে মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে এসেছেন সোনিয়া খান। প্রকৌশলী সোনিয়া খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জুলাই আন্দোলনেও মাঠে নেমেছিলাম। মানবতাবিরোধী যেকোনো কার্যক্রমে আমরা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাব। কারণ হচ্ছে মানুষ হত্যা, এর চেয়ে বড় কিছু তো আর হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে নারী, পুরুষ ও শিশুদের গণহারে হত্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের কোনো ভূমিকা নেই কেন? এ অত্যাচার বন্ধ করতে হবে, এ গণহত্যা বন্ধ করতে হবে।
কেরানীগঞ্জের একটি স্কুলের শিক্ষক মাবিয়া আক্তার। মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এখানে থেকে কিছুটা হলেও সবার সঙ্গে শামিল হয়ে একসঙ্গে এটা জানাতে পারি, বাংলাদেশের নারীরা মুসলমানদের পক্ষে আছে, ফিলিস্তিনের পক্ষে আছে।’
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারজানা আক্তার বললেন, তিনি মার্চ ফর গাজা কর্মসূচিতে এসেছেন প্রতিবাদ জানানোর জন্য। ফিলিস্তিনে যে নৃশংসতা চালানো হচ্ছে, তা যেন কখনো আর না হয়।