কর্ণফুলীতে এক যুবককে অপহরণ, ৫ ঘণ্টা পর মুক্তিপণ ছাড়াই মুক্তি
Published: 6th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় অপহরণের পাঁচ ঘণ্টা পর মুক্তিপণ ছাড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে একজনকে। তাঁর নাম শহীদুল আলম (৩২)। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
শহীদুল আলম ইছানগরের বাসিন্দা এবং মাছের ব্যবসায়ী। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বলেন, এলাকায় তাঁর ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষের লোকজন এমন করতে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল রাত প্রায় ১১টার দিকে ইছানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন শহীদুল। এ সময় তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ১২ থেকে ১৫ জন লোক থানায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে শহীদুল আলমকে সিএনজিতে তুলে নেয়। এ সময় তাঁকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে তাঁর পরিবারের লোকজন কর্ণফুলী থানা-পুলিশকে বিষয়টি জানান। দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে শহীদুলকে নগরীর কোতোয়ালি থানা এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
মুক্তি পাওয়া শহীদুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, ‘অটোরিকশায় থাকা লোকজন নিজেদের মহানগর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেয়। আমাকে নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে অটোরিকশাটি। পরে আমাকে আরেকটি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা আমার ফেসবুক আইডি চেক করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিরোধী কোনো পোস্ট করেছি কি না, যাচাই করে। ফেসবুক আইডিতে তেমন কিছু না পেয়ে তারা প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা ও পরে তিন লাখ টাকা দাবি করে। টাকার জন্য আমি তাদের বিকাশ নম্বর দিতে বলি এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাই। এ সময় তারা টাকা না নিয়ে আমাকে একটি রিকশায় তুলে দেয়।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চট্টগ্রাম নগর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক আরিফ মঈনুদ্দিন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক জোবাইরুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার পর কোতোয়ালি থানা ও কর্ণফুলী থানার যৌথ তৎপরতায় শহীদুলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অপরাধী চক্র। অপরাধীদের শনাক্তের কাজ চলমান।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে অপহৃত পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষার্থী মুক্ত: পিসিপি
অপহরণের সাত দিন পর গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে মুক্তি দিয়েছে অপহরণকারীরা। তবে তাঁদের মুক্ত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয় আজ বৃহস্পতিবার। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি দিয়েছে। অপহরণকারীদের কবল থেকে মুক্ত হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী বর্তমানে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার প্রথম আলোকে বলেন, ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। যেহেতু পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ থেকে বিবৃতি দিয়েছে।
বিজু উৎসব উদ্যাপন শেষে ফেরার পথে ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাঁদের বহন করা অটোরিকশার চালককে অজ্ঞাতনামা স্থানে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিশন চাকমা, চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। অপহরণকারীরা চালককে ওই সময় ছেড়ে দিয়েছিল।
পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনায় শুরু থেকে ইউপিডিএফকে দায়ী করে আসছে জেএসএস–সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি নিপুন ত্রিপুরা। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ইউপিডিএফের অন্যতম জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা।
আজ পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিবেক চাকমা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে অপহৃত পিসিপি সদস্য রিশন চাকমাসহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত হয়েছে পিসিপি।
বিবৃতিতে বলা হয়, অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রগতিশীল ব্যক্তি ও ছাত্রসংগঠন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তোলেন। অবশেষে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় মুক্তি দিয়েছে।
বিবৃতিতে পিসিপি শিক্ষার্থীদের মুক্তির আন্দোলনে সোচ্চার থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
পিসিপি নেতা রিবেক চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, মুক্ত হওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী বর্তমানে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।