গড়াই নদে ভাসছে কুমির, দুই পাড়ে ‘আতঙ্ক’ নিয়ে উৎসুক জনতার ভিড়
Published: 6th, March 2025 GMT
রাজবাড়ী ও ঝিনাইদহ দিয়ে বয়ে গেছে গড়াই নদ। নদের এক প্রান্তে রাজবাড়ী, বিপরীত প্রান্তে ঝিনাইদহ। দুই পাড়ের মানুষ নদে গোসল করা, গরু-মহিষ গোসল করানোসহ নিত্যদিনের কাজ করতেন। তবে এক মাসের বেশি সময় ধরে নদে কুমির দেখা যাওয়ায় দুই পাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে আছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে একটি, দুটি কিংবা তিনটি কুমির একসঙ্গে ভেসে ওঠে। কুমির বেশির ভাগ সময় রাজবাড়ী সীমান্তে দেখা যায়, মাঝেমধ্যে ঝিনাইদহের দিকেও দেখা যায়। কুমির একনজর দেখতে প্রতিদিন দুই জেলার নদের পাড়ে বহু মানুষ ভিড় করেন।
কুমিরের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করতে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা প্রশাসন থেকে গত সোমবার ও মঙ্গলবার এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পাংশা উপজেলা বন বিভাগ থেকে ‘সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ লেখাসংবলিত লাল কাপড় নদের পাড়ে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাংশা উপজেলা ফরেস্টার মো.
রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে পাংশা উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নের কেওয়াগ্রাম ঘাট। গড়াই নদের অপরপ্রান্তের অংশ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার খুলুমবাড়ি ঘাট।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কেওয়াগ্রাম ঘাটে অপেক্ষা করে দেখা যায়, দুই পাড়ে শত শত শিশু, নারী ও পুরুষের ভিড়। দূরদূরান্ত থেকে অনেকে মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছেন কুমির দেখতে। কিছুদূর পরপর মানুষের জটলা। সবার দৃষ্টি নদের দিকে।
কেওয়াগ্রাম ঘাটের পশ্চিমে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মোহনের ঘাট। এরপরই রাজবাড়ী জেলা শেষ, কুষ্টিয়া জেলা শুরু। কেওয়াগ্রাম ঘাটের পূর্বে মাগুরা জেলা। চার জেলার মধ্যবর্তী কেওয়াগ্রাম ও খুলুমের ঘাট। প্রতি ঘাটে মানুষের ভিড়। সবার দৃষ্টি নদের দিকে। স্মার্টফোন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকে, কুমির দেখামাত্র ভিডিও বা স্থিরচিত্র ধারণ করে।
প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরের সুবর্ণাখোলা থেকে আসা ভ্যানচালক রেজাউল করিম বলেন, সীমান্তবর্তী লক্ষ্মীপুর গ্রামের লোকজন প্রায় দুই মাস আগে গড়াই নদে কুমির দেখেন। তখন তাঁদের নিয়ে তাঁরা হাসাহাসি করতেন। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তিনি কেওয়াগ্রাম ঘাটে বসে কুমির দেখেন। একটা মহিষ পানিতে থাকলে যতখানি লম্বা দেখা যায়, কুমিরটাও ততখানি লম্বা ছিল বলে তাঁর দাবি।
ঝিনাইদহের শৈলকুপা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হুসাইন বন্ধুকে মোটরসাইকেল নিয়ে কেওয়াগ্রাম ঘাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘শুনলাম নদীতে কুমির ভাসছে। তাই দেখতে এসেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কুমির দেখতে পাইনি। শুনেছি অনেকে কুমির দেখেছেন।’
কেওয়াগ্রাম ঘাটের কাছে কুমির দেখতে এসেছেন জামাল শেখ নামের একজন। তিনি বলেন, ‘কাইলকা ঘাটের কাছে সকাল ৯টার দিকে দুবার দেখলাম বড় কুমির ভাইসা আছে। পয়লাবার হাতখানেক মাথা জাইগা উইঠা নিচের দিকে গেল। আবার পরে উঠে শাঁই করে চলে গেল।’
স্থানীয় জেলে পলাশ মন্ডল বলেন, ‘ঘাটের কাছে রাত ১১টার সময় খেও জাল মারিছে। জাল টান দিয়ে উঠানোর সময় গুততালি মারলে জাল ফেলে পাড়ে উঠে পড়ি। এ সময় জাল ছিঁড়ে কুমির চইলা যায়। নদীতে ভয়ে কেউ নামছে না। নদীর পাড়ে বসে বদনা দিইয়া গোসল করছে। আগে এখানকার পোলাপান নদী সাঁতরে চলে যেত।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তামজিদ হোসেন বলেন, প্রায় দুই মাস গড়াই নদে কুমির দেখা যাচ্ছে। সাধারণত বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে ভেসে ওঠে। তবে তিনি কয়েক দিন নদের পাড়ে ঘুরে কুমিরের দেখা পাননি।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবু দারদা বলেন, ‘১৫-২০ দিন আগে কসবামাজাইল ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কুমিরের বিষয় শুনি। স্থানীয়ভাবে ভিডিওর মাধ্যমে নিশ্চিত হই। বন বিভাগের মাধ্যমে ঢাকা বন বিভাগের কাছে একটি টিম চাওয়া হয়েছে, যাতে নিরাপদ স্থানে সরানো যায়। আপাতত সতর্ক থাকতে এলাকায় মাইকিং করে ও কাপড় টানিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নদ র প ড় ঝ ন ইদহ সতর ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সমাবেশ পণ্ড, আটক ৩
চট্টগ্রাম নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সমাবেশ পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে নগরের ডবলমুরিং থানার দেওয়ানহাট মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
আটক তিনজন হলেন- রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদের চট্টগ্রাম শাখার আহ্বায়ক আল কাদেরী জয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি মিরাজ উদ্দিন ও রূপন। এদের মধ্যে আল কাদেরী জয় বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) চট্টগ্রাম জেলার ইনচার্জের দায়িত্বেও আছেন।
সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের দাবি, পুলিশের হামলায় তাদের অন্তত পাঁচজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত করায় তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল রাতে নগরের কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে হিজরা খালে পড়ে ছয় মাস বয়সী শিশু সেহেরীশ নিহত হয়। এ ঘটনার পর নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগরের বিভিন্ন সড়ক ও গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে তিন হাজারের বেশি রিকশা জব্দ করা হয়।
গত ২৩ এপ্রিল চালকরা ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানের প্রতিবাদে নগরের বাহির সিগন্যাল এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তারা। এতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে দাবি পুলিশের। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫৬ জন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ব্যাটারিচালিত রিকশা জব্দ ও গ্যারেজে হয়রানি বন্ধ, হামলা-নির্যাতন বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবিতে নগরের দেওয়ান হাট মোড়ে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি আয়োজন করে রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রাম শাখা। তারা দেওয়ানহাট মোড়ে জড়ো হলে পুলিশ অতর্কিত হামলা শুরু করে বলে অভিযোগ সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সচিব মনির হোসেন বলেন, আমরা ১০০-১৫০ জন মাত্র রাস্তার পাশে জড়ো হয়েছি। আমরা সড়কে যাইনি। কোনো বিশৃঙ্খলাও করিনি। সরকার কিংবা পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো স্লোগানও দিইনি। কিন্তু অতর্কিতভাবে পুলিশ আমাদের ওপর হামলা শুরু করে। মাইক-ব্যানার কেড়ে নিয়ে নির্বিচারে লাঠিপেটা করে। আহত হয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে নানাদিকে চলে গেছে সবাই। এরমধ্যে আহত পাঁচজনকে আমরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকদের নামে কিছু ব্যক্তি সড়ক অবরোধ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন। যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছি। তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হালিশহর থানায় দায়ের হওয়া একটি নিয়মিত মামলার আসামি।