অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ডটকমের চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। 

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী সাকিবুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, গত বছরের ১৩ আগস্ট অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়৷ ওই দিন আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। গত ২৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পিবিআই। 

পিবিআইর দেওয়া প্রতিবেদন আমলে নিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়। আজ আসামিদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার দিন ধার্য ছিল। তবে, তারা উপস্থিত হননি। এজন্য আদালতে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দিয়েছেন। 

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, আসামিরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম ডটকম নামে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতেন।  ২০২১ সালের ২৭ জুন কিউকম ডটকমের চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে মেহেদী হাসান ফয়সাল আসামিদের প্রতিষ্ঠান থেকে ‘বিগ বিলিয়ন রিটার্ন’ ক্যাম্পেইনে মালামাল কেনার জন্য ৮২ লাখ  ৪৪ হাজার ১৬০ টাকার মধ্যে ৫৭ লাখ ৯ হাজার টাকা তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের (থ্রি-এস কর্পোরেশন বিডি) নামে এসআইবিএল ব্যাংকের একটি চেকের মাধ্যমে আসামিদের প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বরাবর জমা দেন। অবশিষ্ট ২৫ লাখ ৩৫ হাজার ১৬০ টাকা আসামিদের ইস্টার্ন ব্যাংকের গুলশান শাখায় জমা দেন। পণ্য ক্রয় বাবদ ৮২ লাখ ৪৪ হাজার ১৬০ টাকাপ্রাপ্তির বিষয়টি আসামিদের প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। আসামিদের অফিস থেকেই অর্ডারের বিপরীতে অর্থ প্রাপ্তি স্বীকার করে মানি রিসিট দেওয়া হয়। 

আরো অভিযোগ করা হয়, মেহেদী হাসান ফয়সালের ক্রয় করা পণ্য ২১ থেকে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়ার কথা জানানো হয়। তবে, আসামিরা যথাসময়ে তা দিতে ব্যর্থ হন। গত বছরের ২১ মার্চ মেহেদী হাসান ফয়সালকে মালামালের বিপরীতে চেক দেওয়ার কথা বলে আসামিদের অফিসে যেতে অনুরোধ করা হয়। ওই দিন তাদের অফিসে যাওয়া পর আসামি রিপন মিয়া এবং অজ্ঞাত আরো ৬-৭ জন ব্যক্তি মেহেদী হাসান ফয়সালের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এবং পাওনা টাকা দেবেন না বলে হুমকি দেন। ওই ঘটনায় গত বছরের ১৩ আগস্ট মেহেদী হাসান ফয়সাল বাদী হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেন।  

ঢাকা/মামুন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ স ন ফয়স ল

এছাড়াও পড়ুন:

সুইস কোম্পানির নামে প্রতারণা

সুনামগঞ্জের কয়েকশ গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০-৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। তারা এ জন্য ব্যবহার করেছিল ‘অক্সট্রেড ডটকম’ নামে একটি কোম্পানির নাম। চক্রটি কোম্পানিটি সুইজারল্যান্ডে নিবন্ধিত বলে প্রচারও চালিয়েছিল।

বর্তমানে এ নামের ডোমেইনটি বন্ধ পাওয়া গেছে। চক্রের সদস্যরা বিপুল অঙ্কের মুনাফা দেওয়ার নাম করে টাকা সংগ্রহ করে। এ জন্য তারা ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবীদের টার্গেট করেছিল। তারা সবাই বিপুল অঙ্কের টাকা হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন। 

সুনামগঞ্জ শহরের বাঁধন আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ডা. আশুতোষ দাস। সাবেক এই সিভিল সার্জনও প্রতারণার শিকার। তিনি নিজের ও আত্মীয়স্বজনের প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়েছিলেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অক্সট্রেড ডটকমের নামে অনলাইনে প্রচার চালানো হয়। সুনামগঞ্জে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করেন নারায়ণগঞ্জের হিরাঝিলের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, নরসিংদীর শিবচরের তরিকুল ইসলাম ও কুমিল্লার হুমায়ুন আহমেদ। তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেন মেটলাইফ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার অভিজিৎ সরকারকে। প্রতারণার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর থেকে লাপাত্তা তিনি। শহরের নতুনপাড়ার বাসভবনে তাঁর স্ত্রী ছাড়া কেউ নেই। ঈদের পর থেকে মেজর ইকবাল রোডে অবস্থিত মেটলাইফের বিশাল অফিসে তালা ঝুলছে। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সে দুটি পলিসি আপডেট হয়েছিল ডা. আশুতোষ দাসের। তিনি সেখান থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা পান। পাশাপাশি দিরাইয়ে বিক্রি করা জমির টাকা, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী শ্যালিকাসহ কয়েক আত্মীয়ের প্রায় দুই কোটি টাকা অক্সট্রেডে বিনিয়োগ করেন। ডা. আশুতোষ বলেন, ‘আমাদের বলেছিল, ২০২৯ সাল পর্যন্ত এই কোম্পানি ব্যবসা করবে। ১ হাজার ডলারের বিপরীতে দিনে ৮ ডলার করে দিত। এই মেসেজ আসত গ্রাহকের মোবাইলে। অভিজিৎ সরকারের কাছে তা পাঠালে তিনি ক্যাশ দিতেন। ১৫-২০ দিন হয় মেসেজ এলেও টাকা ক্যাশ করা যায়নি। অভিজিৎসহ সংশ্লিষ্টদের ফোন নম্বরও বন্ধ।’ 

বিশ্বম্ভরপুরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার কাছ থেকে ডলারের মেসেজ পাঠিয়ে ক্যাশ করতেন অভিজিৎ সরকার। এ ছাড়া ‘বাইনান্স’ নামে আরেকটি হিসাবে গ্রাহক মেসেজ পাঠালেও তারা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। সর্বশেষ সাড়ে সাত লাখ টাকা ডাচ্-বাংলা ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়ার হিসাবে জমা করেছেন ৪ মার্চ। এরপর থেকেই লেনদেন বন্ধ। 

ওই ব্যবসায়ী জানান, প্রতি লাখে মাসিক মুনাফা ১৬ হাজার টাকা, ছয় মাস পরে একসঙ্গে জমা টাকার দ্বিগুণ অর্থাৎ এক লাখ থাকলে গ্রাহকদের মুনাফাসহ দুই লাখ ৯৬ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ওই কোম্পানি। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুনামগঞ্জ কার্যালয় বুধবার বিকেলেও বন্ধ পাওয়া যায়। এ কোম্পানির বীমা প্রতিনিধি লিংকন তালুকদার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমি নিজেও ভিক্ষুক হয়ে গেছি। বাড়ি-জমি সব বিক্রি করে ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। এখন মরে যাওয়া ছাড়া পথ নেই।’ আরেক কর্মী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বলির পাঁঠা। জমিজমা বিক্রি করে প্রায় ২০ লাখ টাকা দিয়েছি। জাহাঙ্গীর ও তরিকুলের বাড়িতে ১০-১২ জন গিয়েও পাইনি।’

অভিজিতের শ্বশুর দীপু তালুকদারের ভাষ্য, সুমন, সাইফুল, শাহজাহান সুনামগঞ্জে এই কোম্পানি নিয়ে আসেন। অভিজিৎ যুক্ত হতে চাননি। ১০-১৫ দিন বোঝানোর পর অভিজিৎ অ্যাকাউন্ট খোলেন। ৫০০ ডলারের অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হলেও সাইফুল, সুমনেরা জোর করে ৫ হাজার ডলারের অ্যাকাউন্ট করান। অভিজিতের নাম ব্যবহার করে এরা ব্যবসা করেছে। 

মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্সের জিএম লুৎফুর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’ সুনামগঞ্জ সদর থানায়ও এমন কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুইস কোম্পানির নামে প্রতারণা