মহানবী (সা.)-কে ভালোবাসার ৭টি নিদর্শন
Published: 6th, March 2025 GMT
ভালোবাসা পরিমাপ করা কঠিন। ভালোবাসা গতিশীল, সুন্দর, বিপজ্জনক, তিক্ত, পরিবর্তনশীল এবং বিমূর্ত। ভালোবাসা আপনাকে সুখের শীর্ষে পৌঁছে দিতে পারে, আবার অন্ধকার গহ্বরেও নিমজ্জিত করতে পারে। জীবনের নানা পর্যায়ে নানা ধরনের ভালোবাসার মুখোমুখি আমরা হই। তবে একটিমাত্র ভালোবাসা আছে, যা মুমিনের জীবনে কখনো ফুরায় না, তা হলো আল্লাহর রাসুল (সা.
রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার অজস্র কারণ আছে, কিন্তু কখন বুঝব যে, আমরা তাকে সত্যিকারের ভালোবাসি, তা-ই আজ আলোচনা করব। তার আগে আসুন, একটি হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা স্মরণ করি।
আয়েশা (রা.) বলেছেন, একবার আমি রাসুল (সা.)-কে হাস্যোজ্জ্বল দেখে বললাম, ‘আল্লাহর রাসুল, আমার জন্য দোয়া করুন।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ, আয়েশার (রা.)অতীত ও ভবিষ্যতের গুনাহ মাফ করুন; যা সে গোপনে করেছে এবং যা প্রকাশ্যে করেছে সব।’ তার দোয়া শুনে আমি এত হাসলাম যে, আমার মাথা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর গা থেকে ঢলে পড়ল। রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার জন্য যে দোয়া করেছি, তা কি তোমাকে আনন্দিত করেছে?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, কীভাবে আপনার দোয়া আনন্দিত না করে পারে?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর শপথ, উম্মতের জন্য এই দোয়া আমি প্রতি নামাজে করি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩,৮৩০)
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-এর শুভাগমন২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫রাসুল (সা.)-এর এই দোয়া প্রমাণ করে, তিনি আমাদের চেয়েও বেশি আমাদের প্রতি খেয়াল রাখতেন; তিনি আমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন আমাদের। আমরা যখন রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার দাবি করি, তখন আমাদেরও উচিত ভালোবাসার কিছু প্রমাণ দাখিল করা, যেন কিছু নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যায়। তেমন ৭টি আলামত বা নিদর্শন হলো:
১. তাঁর অনুকরণ করা
আমরা চারপাশের মানুষকে দেখি, তারা প্রিয় খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র তারকা, ক্ষমতাশালী ব্যক্তি কিংবা অন্যান্য সেলিব্রিটির অনুকরণ করে তাদের ব্যক্তিত্ব, চুলের ধরন, পোশাক, আচরণ বা ভাষণ থেকে প্রভাবিত হয়। এটা তাদের ভালোবাসার একটি আলামত। রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে আমাদের জীবনযাপন এমনভাবে সাজানো উচিত, যাতে প্রতিটি সিদ্ধান্তই রাসুল (সা.)-এর অনুসরণে পরিচালিত হয়। তাকে অনুকরণ মানে হলো, তার সুন্নাহ অনুসরণ করা, তার আচার-ব্যবহার এবং নীতিবোধে মেনে নেওয়া। শুধু বিধান নয়, তার সুন্দর চরিত্রে নিজেকে চিত্রায়িত করা। পরিবার, সহকর্মী, মুসলিম ও অমুসলিমদের সঙ্গে আমার আচরণ কেমন, একবার যাচাই করে দেখি।
২. নবী জীবনী অধ্যয়ন করা
যখন আপনি কাউকে ভালোবাসেন, তখন তার সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী হন—তার কাজ, কথা, ইতিহাস জানতে চান। সাহাবিরা তাদের সন্তানদের শৈশব থেকে রাসুল (সা.) জীবনের গল্প শোনাতেন। রাসুল (সা.) দয়া, ভালোবাসা, সহানুভূতি, নিষ্ঠা, ভাষণ, উচ্চ মর্যাদা, উম্মতের প্রতি তার উদ্বেগ এবং যে-সকল কষ্ট পেরিয়ে আল্লাহর বার্তা তিনি পৌঁছে দিয়েছেন—সেই পাঠ প্রতিটি মুসলমানের থাকা উচিত। সিরাতে রাসুল বা নবী জীবনী অধ্যয়ন রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসায় আরো উৎসাহ দেবে আপনাকে। এখনো সীরাহ কোনো সিরাত গ্রন্থ না পড়ে থাকলে এই রমজানেই শুরু করুন, অথবা তার জীবনীর ওপর নির্মিত ভিডিও সিরিজ আলোচনা শুনুন।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-র হাঁটাচলার ধরন২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৩. কোরআন পাঠ করা
রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ যে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছেন তা হলো কোরআন। তিনিই আমাদের কাছে কোরআন পৌঁছে দিয়েছেন। তাই তার প্রতি ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো কোরআন পাঠ, তার গূঢ় অর্থ বোঝা এবং কোরআন-অনুসারে জীবন পরিচালনা করা। রাসুল (সা.)-কে ভালোভাবে জানতেও কোরআন পাঠের বিকল্প নেই। আমাদের আখিরাতের সাফল্যও নির্ভর করে কোরআনের পথ অনুসরণের ওপর। রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা যদি সত্যিই গভীর হয়, তাহলে আপনি কোরআন প্রতিদিন পাঠ করবেন এবং তার শিক্ষা জীবনে প্রয়োগ করবেন।
৪. দরুদ পড়া
দরুদ পাঠ করার মানে হলো, আপনি আল্লাহর কাছে রাসুল (সা.)-এর জন্য শান্তি, বরকত ও রহমত প্রার্থনা করছেন। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে ১০ গুণ বরকত ও রহমত প্রদান করবেন। উম্মতের সালাম আল্লাহ তার কাছে পৌঁছে দেন এবং তিনিও দোয়া করেন। দরুদ পাঠ করার মধ্য দিয়ে রাসুল (সা.)-এর আরও কাছাকাছি আসা যায় এবং তার শাফাআত লাভের প্রেরণা তৈরি হয়। প্রতিদিন সকালে ও রাতে অন্তত ১০ বার দরুদ পাঠ করার অভ্যাস গড়তে পারি। তাঁর নাম শুনলে বা তাঁকে স্মরণ হলে একবার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঠ করি।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫৫. তিনি যা ভালোবাসতেন তা ভালোবাসা
এটি শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রে নয়, তার অভ্যাসের বেলায়ও প্রযোজ্য। যেমন সোমবার ও বৃহস্পতিবার তিনি রোজা রাখতেন, রাতে তাহাজ্জুদ পড়তেন, গাছের ডাল দিয়ে মেসওয়াক করতেন, তেমন সাদা পোশাক পরতে পছন্দ করতেন, হাসিমুখে কথা বলতেন, পেট পূর্তি খেতেন না ইত্যাদি। সাহাবিরাও এসব কাজের অনুকরণ করতেন। এটা ভালোবাসার একটি অমোঘ নীতি, প্রিয়জনের সবকিছু আমাদের ভালো লাগে। নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আমি কি রাসুল (সা.)-এর প্রিয় সুন্নাহগুলো অনুসরণ করি?
৬. তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রার্থনা করা
কাউকে ভালোবাসলে তাকে বারবার স্মরণ হয়, তাকে দেখতে ইচ্ছা করে। রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে আপনি তার জীবনের প্রতিটি দিক সম্পর্কে ভাববেন এবং পরকালে তার সঙ্গে মিলনের প্রার্থনা করবেন আল্লাহর কাছে। তার কাছে যেতে অন্তর আকুল থাকবে সব সময়।
৭. সুন্নাহর প্রচার করা
যখন আমরা কাউকে ভালোবাসি, চাই অন্যরাও তার সম্পর্কে জানুক এবং তার শিক্ষা গ্রহণ করুক। রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসলে আমাদের কর্তব্য হলো, বন্ধু, পরিবার ও সমাজের সদস্যদের কাছে তার জীবন, তার সুন্নাহ এবং তার শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া এবং অন্যদের তা অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা।
কথায় আছে, আমাদের কাজ আমাদের কথার চেয়ে শক্তিশালী। তা-ই রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসা শুধু দাবি নয়, কর্মের মাধ্যমে আমাদের প্রমাণ দেওয়া উচিত। অন্যায় কাজের মুখোমুখি হলে প্রতিবার নিজেকে বারবার প্রশ্ন করা উচিত, সত্যিই কি আমি তাকে ভালোবাসি?
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–র কোন জীবনী পড়বেন১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র ক প ঠ কর র ক রআন প জ বন র আল ল হ র জন য র জ বন করব ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবসান চান নেতানিয়াহু
ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেট আয়োজিত এক সম্মেলনে রোববার এ কথা বলেছেন তিনি।
ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপের প্রতি ইঙ্গিত করে নেতানিয়াহু বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি, যে কোনো উপায়েই হোক না কেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সব পথ বন্ধ করতে হবে।
ওমানের মধ্যস্থতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন দফা পরোক্ষ আলোচনা হয়েছে। আলজাজিরা।