অস্কারের এবারের আসরে ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়ে পাঁচটিতেই পুরস্কার জিতেছে ‘আনোরা’। এর মধ্যে আছে সেরা সিনেমা, সেরা পরিচালক, সেরা অভিনেত্রী, সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার। ২০২৩ সালে নিউইয়র্কে শুটিং হয় সিনেমাটির। এরপর ২০২৪ সালের ২১ মে কান উৎসবে প্রিমিয়ার হয় শন বেকারের ‘আনোরা’র। মাত্র ৬০ লাখ ডলারের স্বাধীন ঘরানার সিনেমাটি কানে স্বর্ণপাম জিতে নেয়। এরপর সিনেমাটি নিয়ে সেভাবে আলাপ হয়নি। ‘আনোরা’কে নিয়ে আবার আলাপ শুরু হয় চলতি বছর, যখন একটার পর একটা পুরস্কার জুটতে লাগলো। অস্কারের আগে ব্রিটিশ ইনডিপেনডেন্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডস, ক্রিটিকস চয়েজ অ্যাওয়ার্ডস, ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডস, ইনডিপেনডেন্ট স্পিরিট অ্যাওয়ার্ডস, রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা অ্যাওয়ার্ডসের মতো গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার জিতেছে ‘আনোরা’। এত পুরস্কার জেতা সিনেমাটিতে আসলে কী আছে? চলুন জেনে নিই।
সিনেমার গল্প
নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে বসবাস করেন তরুণ স্ট্রিপ ড্যান্সার আনোরা মিখিভা। সংক্ষেপে অ্যানি। অর্থকষ্টে ভুগতে থাকা অ্যানির জীবনে হঠাৎ এক বড় পরিবর্তন আসে। একদিন ক্লাবের মালিক তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেয় ইভান ‘ভানিয়া’ জাখারভের সঙ্গে। সে এক ধনী রাশিয়ান ওলিগার্ক নিকোলাই জাখারভের বেপরোয়া ছেলে। পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এলেও ভানিয়া সময় কাটায় পার্টি আর ভিডিও নিয়ে। নিউইয়র্কে ভানিয়া যাতে কোনো বড় ঝামেলায় না পড়ে, সে কারণে তাকে দেখে রাখার দায়িত্ব নিয়েছেন ম্যানেজার টোরস এবং তার সহকারী গারনিক ও ইগর।
ভানিয়া বেশ কয়েকবার টাকার বিনিময়ে অ্যানির সঙ্গে সময় কাটায়। একসময় সে অ্যানির সম্পর্কে আসক্ত হয়ে পড়ে। নিউ ইয়ার পার্টিতে ইভান অ্যানিকে এক সপ্তাহের জন্য তার গার্লফেন্ড সেজে থাকার প্রস্তাব দেয়। এজন্য ইভান অ্যানিকে ১৫ হাজার ডলার অফার করে। এ সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হতে থাকে, যার চূড়ান্ত পরিণতি হয় লাস ভেগাসে। সেখানে ভানিয়া হুট করে অ্যানিকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। প্রথমে দ্বিধাগ্রস্ত হলেও ভানিয়ার প্রেমের প্রতিশ্রুতি শুনে অ্যানি রাজি হয়ে যায়।
অ্যানি নতুন জীবনের জন্য স্ট্রিপার পেশা ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে ভানিয়া আগের মতোই দায়িত্বজ্ঞানহীন। এদিকে তাদের বিয়ের খবর রাশিয়ান সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ইভানের মা গালিনা বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি টোরসকে নির্দেশ দেন যে কোনোভাবে এই বিয়ে ভেঙে ফেলতে। ভানিয়া এই পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়ে পালিয়ে যায়, আর অ্যানি একা লড়াই করে। শেষমেশ টোরস অ্যানিকে ১০ হাজার ডলার অফার করে, যাতে সে বিয়েবিচ্ছেদে রাজি হয়। এরপর, তারা ব্রুকলিনের বিভিন্ন ক্লাবে ইভানকে খুঁজতে থাকে।
অবশেষে, ইভানকে খুঁজে পায় অন্য একটি ক্লাবে, সেখানে অ্যানির এক সহকর্মী স্ট্রিপারের ল্যাপড্যান্স উপভোগ করছিল। এতে অ্যানি নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না। ভানিয়া তার পরিবারের পক্ষ নেয় এবং অ্যানিকে জানিয়ে দেয় তাদের বিয়ে টিকবে না। অ্যানি হঠাৎ নিজেকে এমন এক দুনিয়ায় আবিষ্কার করে, যেখানে ক্ষমতা, সম্পদ ও পারিবারিক বাধ্যবাধকতার সংঘর্ষ চলছে। এ নাটকীয় সংঘাতের মাঝে অ্যানির নিজস্ব অস্তিত্ব টিকে থাকার লড়াই ও আত্মপরিচয়ের খোঁজের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘আনোরা’। বলা প্রয়োজন, ‘আনোরা’ কিন্তু প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমা। এতে বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ও নগ্ন দৃশ্য আছে, তাই দেখার আগে বিষয়টি মাথায় রাখা জরুরি।
নির্মাতার কথা
২০০০ সালে ‘ফোর লেটার ওয়ার্ডস’ দিয়ে পরিচালনা শুরু করেন শন। ২৫ বছর পর এসে পেলেন সেরা নির্মাতার অস্কার। পুরস্কার জয়ের পরে প্রেক্ষাগৃহের জন্য আরও সিনেমা নির্মাণের আহ্বান জানিয়ে শন বলেন, ‘আমরা কোথায় সিনেমার প্রেমে পড়ি? অবশ্যই প্রেক্ষাগৃহে।’ শন বেকারের হাতে অস্কার তুলে দেন নির্মাতা কোয়েন্টিন টারান্টিনো। এই নির্মাতার ‘ওয়ান্স আপন আ টাইম ইন হলিউড’ সিনেমায় মাইকি ম্যাডিসনকে দেখেই ‘আনোরা’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন শন। তাইতো নির্মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শন বলেন, ‘কোয়েন্টিন যদি ছবিতে ম্যাডিসনকে না নিতেন তাহলে আনোরা হতো না। মাইকির বয়স মোটে ২৫, এর মধ্যেই অস্কারে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন; তা-ও আবার ডেমি মুরের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে! তাঁর জন্য এর চেয়ে ভালো শুরু আর কী হতে পারে। তাঁর এ অস্কার জয় আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একাডেমি যে, তাঁর প্রতিভার স্বীকৃতি দিয়েছে; এ জন্য আমি খুবই খুশি।’
সেরা অভিনেত্রীর কথা
অস্কার জয়ের পর মাইকি ম্যাডিসন বলেন, ‘আমার স্বপ্ন সত্যি হলো। যদিও লস অ্যাঞ্জেলেসে বড় হয়েছি, তবু বরাবরই মনে হতো, হলিউড অনেক দূরের স্বপ্ন। সেখান থেকে আজ এই মঞ্চে দাঁড়ানো সত্যিই অবিশ্বাস্য।’ আনোরা প্রসঙ্গে মাইকি বলেছেন, ‘অ্যানির মধ্যে এক দ্বৈত সত্তা বাস করে। ক্লাবের স্ট্রিপ ড্যান্সার, পরিস্থিতি বুঝে শয্যাসঙ্গিনী, কিন্তু কেউ তাঁকে যৌনকর্মী বললে রেগে যায়। স্বপ্ন, বাস্তবতা, টানাপোড়েন, মানবিকতা আর অসহায়ত্বের মোড়কে চরিত্রটি গড়েছেন নির্মাতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই চরিত্র আমার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। অ্যানি চরিত্রটির জটিলতা ও গভীরতা আমাকে মুগ্ধ করেছে এবং আমি তাঁর গল্পটি পর্দায় তুলে ধরতে পেরে গর্বিত।’
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কাঠগড়ায় যেমন ছিলেন কামাল আহমেদ মজুমদার
মিরপুর মডেল থানার এক মামলায় সাবেক শিল্পপ্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
বুধবার (৫ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুল ইসলামের আদালত শুনানি শেষে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার শুনানিতে বুকে হাত বেঁধে দেয়াল ঘেঁষে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কামাল আহমেদ মজুমদার।
এদিন সকালে তাকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় তাকে রাখা হয়। ১০টা ২০ মিনিটেরর দিকে দুজন পুলিশ কনস্টেবল তাকে ধরে কাঠগড়ায় তোলেন। পরে তিনি কাঠগড়ায় পেছনে গিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন হাবিবুল্লাহ নামে এক কনস্টেবল তার হাত ধরে রাখেন।
এরপর আইনজীবীকে ডেকে কিছুক্ষণ কথা বলেন তিনি। পরে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তার দেখানো শেষে দুই পুলিশ কনস্টেবল ফের তাকে ধরে হাজতখানায় নিয়ে যায়। এ সময় তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক অসুস্থ।’’
এর আগে গত ৩ মার্চ কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতকে জানান, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর রাজনীতি করবেন না।
গত বছর ১৮ অক্টোবর রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে কামাল আহমেদ মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর একাধিক মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
ঢাকা/মামুন//