পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত্যাগের দাবিতে ফের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এ কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএসইসি ভবনের সামনে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমআইএ) নেতৃত্বে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু করা হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার দুপুরে বিএসইসি ভবনের সামনে বিনিয়োগকারীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন।

আরো পড়ুন:

ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার কারসাজি, জড়িতদের ৫৩.

২৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড

শেয়ার কারসাজি: সাকিব-হিরুদের ৩১.৩৮ কোটি টাকা অর্থদণ্ড

বিসিএমআইএর সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম মানিক বলেছেন, “বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের পদত‍্যাগের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে দাবি নিয়ে লড়ছেন, আমরাও একই দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছি।”

বিনিয়োগকারীরা বলছেন, রাশেদ মাকসুদ অযোগ্য। শেয়ারবাজার নিয়ে তার জ্ঞান নাই। তার পক্ষে শেয়ারবাজার পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই, শেয়ারবাজারের স্বার্থে তার দ্রুত পদত‍্যাগ দাবি করা হচ্ছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ না করায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন সেখানকার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এর আগে বুধবার এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বিএসইসির চেয়ারম্যান বা কমিশনার কেউ কার্যালয়ে আসেননি। বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যথাসময়ে অফিসে এসেছেন। তবে, তারা কোনো কাজ করছেন না। এমনকি কোনো চিঠি-পত্রও আদান-প্রদান করা হচ্ছে না। বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা সবাই কর্মবিরতি পালন করছেন। তারা অফিসে আলোচনা, ঘোরাঘুরি, গল্প-আড্ডায় সময় পার করছেন। বুধবার লাঠিচার্জে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা এবং শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. মাহাবুবুল আলম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “আমাদের দাবি অনুযায়ী বুধবারের মধ্যে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন পদত্যাগ না করায় বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি পালন করছি। বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে।”

ঢাকা/এনটি/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর মকর ত পদত য গ করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সিলভা ফার্মার আর্থিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় পুঁজিবাজারে ওষুধ ও রসায়ন খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পাঁচ বছরের সম্পদ, ব্যবসায়িক কার্যক্রম ও আর্থিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে ১৫টি শর্ত নির্ধারণ করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে। তদন্তের বিষয়টি সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অবহিত করা হয়েছে। বিএসইসির সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

সূচকের পতন, কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দাম

টেলিস্যাটের সঙ্গে এডিএন টেলিকমের চুক্তি

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. মাওদুদ মোমেন, সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ঘোষ এবং মো. মারুফ হাসান।

বিএসইসির তদন্তের আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের বিষয়গুলোর তদন্ত পরিচালনা করা প্রয়োজন। গত পাঁচ বছরের সম্পদ, আর্থিক সক্ষমতা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯ (১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ নং XVII) এর সেকশন ২১ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন আলোচ্য বিষয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। উক্ত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিএসইসির তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলো। তদন্ত কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন এবং কমিশনে একটি প্রতিবেদন দাখির করার নির্দেশ দেওয়া হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ বছরের সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা। সম্পদের ভারসম্য যাচাই এবং তথ্য অনুযায়ী তা নিশ্চিত করা (ভূমি ও জমির উন্নয়ন, ভবন, ভবন সজ্জা, উদ্ভিদ ও যন্ত্রপাতি, সমস্ত সরঞ্জাম, মূলধনের কাজ চলছে, বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রাপ্য, তালিকা, সমস্ত ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, নগদ এবং নগদ সমতুল্য ইত্যাদি)।

মূলধন ও দায়ের ভারসম্য যাচাই এবং তথ্য অনুযায়ী তা নিশ্চিত করা (ভূমি ও জমির উন্নয়ন, ভবন, ভবন সজ্জা, উদ্ভিদ ও যন্ত্রপাতি, সমস্ত সরঞ্জাম, মূলধনের কাজ চলছে, বাণিজ্য এবং অন্যান্য প্রাপ্য, তালিকা, সমস্ত ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, নগদ এবং নগদ সমতুল্য ইত্যাদি)। আইপিওর আগে মূলধন সংগ্রহ এবং প্রাক-আইপিও পরিশোধিত মূলধনের ব্যবহার নিরীক্ষা করা।

প্রসপেক্টাসে প্রকাশ করা (প্রাক-আইপিও সম্পদের মালিকানা জমি, বিল্ডিং, গাছপালা এবং যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) এবং প্রকৃত দখলে আছে কি-না সে তথ্য তথ্য নিরীক্ষা করা। আর্থিক প্রতিবেদনে নগদ অর্থের প্রবাহ যাচাই করা।

ব্যাংক ব্যালেন্স, বিক্রিত পণ্যের মূল্য, আয় এবং ব্যয় ইত্যাদির নিশ্চিতকরণ, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক স্টেটমেন্টসহ বিক্রয় থেকে আয় যাচাই করা। কাঁচামাল সংগ্রহ প্রক্রিয়া এবং কাঁচামালের ব্যবহার যাচাই করা।

সরবরাহকারীদের সাথে সরাসরি চুক্তির মাধ্যমে প্রদেয় কাঁচামালের কোনো মিথ্যা/অতিরিক্ত ক্রয় এবং সরবরাহকারী বা সংশ্লিষ্ট ক্লায়েন্টকে অতিরিক্ত/মিথ্যা পেমেন্ট আছে কিনা তা পর্যালোচনা করা এবং সমস্ত এলসি পরীক্ষা করা। বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল মজুত থাকা সত্ত্বেও কাঁচামাল ক্রয়ের ন্যায্যতা যাচাই করা।

২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত বছরের জন্য কর্মীদের নিয়োগপত্র এবং উপস্থিতি পত্র বিবেচনা করে সমস্ত বেতন/মজুরি/ভাতার বিপরীতে অর্থ প্রদান যাচাই করা। অ্যাকাউন্টিং নীতি, আর্থিক প্রতিবেদন এবং প্রকাশিত তথ্য ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএএস), ইন্টারন্যাশনাল ফাইনান্সিয়াল রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (আইএফআরএস) এবং ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অন অডিটিং (আইএসএ) অনুসারে করা হয়েছে কিনা তা যাচাই ও নিশ্চিত করা।

সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন এবং তার প্রকাশিত তথ্য যাচাই করা। ২০২০ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সমাপ্ত বছরের জন্য স্ট্যাটুটরি অডিটরদের ভূমিকা পর্যালোচনা করা। অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় তদন্ত করা।

আইপিওর অর্থ ব্যবহারে অক্ষমতা
তালিকাভুক্তির পর থেকে বিগত ৬ বছরেও আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ ব্যয় করতে পারেনি। এরই মধ্যে আইপিওর অর্থ ব্যবহারে কোম্পানিটি ৫ দফা সময় বাড়িয়েছে। তবুও ওই অর্থ ব্যয় করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি। এবার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইপিওর অর্থ ব্যয়ে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। চলতি বছরের গত ফেব্রুয়ারিতে আইপিওর অর্থ ব্যয় সংক্রান্ত প্রতিবেদন নিরীক্ষা করেছে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস আইন লঙ্ঘনের তথ্য জানিয়েছে।

আর্থিক অবস্থা
২০২৪ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য নামমাত্র ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন, ২০২৪ হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.৪৭) টাকা। আগের হিসাববছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.২৪) টাকা। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৬.৫৩ টাকা।

সর্বশেষ চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর,২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.১৯) টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.০৬) টাকা। অন্যদিকে, অর্ধবার্ষিক বা ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪) কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে (০.৪৩) টাকা। গত হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল (০.১২) টাকা। ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ার প্রতি সম্পদ (এনএভি) হয়েছে ১৬.০২ টাকা।

ব্যবসায়িক অবস্থা
সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালস পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি হয় ২০১৮ সালে। ‘বি’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ১৩৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ৬৫ লাখ। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানির উদ্যোক্তাদের হাতে ৪৫.২১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৫.৭৮ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ০.০১ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কোম্পানির স্বল্প মেয়াদি ঋণ রয়েছে ৪ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুঁজিবাজার উপদেষ্টা কমিটি বাতিল
  • কাট্টলি টেক্সটাইলের আইপিওর ২৫ কোটি টাকা তছরুপ, তদন্তের জন্য দুদকে হস্তান্তর
  • এক মাসের মধ্যে কাট্টালিকে লিস্টিং ফি পরিশোধের নির্দেশ
  • লংকাবাংলা ফিক্সড ইনকাম ফান্ডের ট্রাস্ট ডিড অনুমোদন
  • আইন লঙ্ঘন করা দুই ব্রোকারেজ হাউজকে জরিমানা
  • কাট্টলির আইপিও তহবিল তছরুপ, অভিযোগ দুদকে পাঠাবে বিএসইসি
  • আল হারামাইন-সেলেস্টিয়াল সিকিউরিটিজের কার্যক্রম তদন্তে কমিটি
  • বিশেষ তহবিলের মেয়াদ বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়বে
  • সিলভা ফার্মার আর্থিক সক্ষমতা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি
  • আইপিও আইনের খসড়া সুপারিশের উপর মতামত আহ্বান