অর্থ পাচার মামলায় সাজার রায় বাতিল, খালাস পেলেন তারেক-মামুন
Published: 6th, March 2025 GMT
অর্থ পাচারের অভিযোগে মানি লন্ডারিং আইনে করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন খালাস পেয়েছেন। সাত বছরের কারাদণ্ডের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের আপিল মঞ্জুর করে রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। পাশাপাশি সাজার রায় বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
আইনজীবীরা বলছেন, এ মামলায় আপিল না করা ব্যক্তি এই রায়ের সুবিধা পাবেন বলে রায়ে এসেছে। ফলে এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালাস পেলেন।
ওই মামলায় ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে তাঁকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। আর বিচারিক আদালতের রায়ে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে দেওয়া সাত বছরের কারাদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। তবে বিচারিক আদালতে মামুনকে দেওয়া ৪০ কোটি টাকার জরিমানা কমিয়ে ২০ কোটি করা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে বিলম্ব মার্জনা চেয়ে গত বছর লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) করেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। এই লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর আদেশ দেন আপিল বিভাগ। সেখানে হাইকোর্টের রায় স্থগিত করা হয়, পাশাপাশি আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় গিয়াসউদ্দিন আল মামুন আপিল করেন।
মামুনের এই আপিলের ওপর ৪ মার্চ শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার জন্য ৬ মার্চ দিন রাখেন। আসামিপক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন শুনানিতে ছিলেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় অভিযোগের কোনো সত্যতা ও সারবত্তা নেই। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যে আইনে ওই মামলা করা হয়, তখন ওই আইন কার্যকর ছিল না। হাইকোর্টের পুরো রায় বাতিল করা হয়েছে। যিনি আপিল করেননি, তাঁকে খালাস দেওয়া হয়েছে। তারেক রহমান এ মামলায় খালাস পেলেন।’
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর তারেক ও মামুনকে আসামি করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি করে দুদক। মামলায় অভিযোগ করা হয়, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন। ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে ওই টাকা বিভিন্ন পদ্ধতিতে সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের ব্যাংক হিসাবে পাচার করা হয়। ওই টাকার মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তুলে খরচ করেন তারেক রহমান।
২০১১ সালের ৬ জুলাই এই মামলার বিচার শুরু হয়। রায় হয় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর। রায়ে তারেক রহমানকে খালাস এবং গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৪০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তারেক রহমানের খালাসের বিরুদ্ধে আবেদন করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্ট দুদকের আপিল গ্রহণ করেন। দুদকের করা আপিলের সঙ্গে কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে মামুনের করা আপিলের ওপর একসঙ্গে শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২১ জুলাই হাইকোর্ট রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের করা আপিল মঞ্জুর করে আজ রায় দিলেন আপিল বিভাগ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন আইনজ ব ত বছর
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, আদালত বর্জন আইনজীবীদের
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায়ের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তাঁর অপসারণ দাবিতে আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবীরা। বুধবার দুপুরে আইনজীবীদের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি ও কলাপাড়া চৌকি আদালত আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান চুন্নু জানান, আইনজীবীদের জরুরি সভায় সর্বসম্মতিক্রমে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায়ের অপসারণ দাবিতে আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজকের (বুধবার) মধ্যেই সভার রেজুলেশন জেলা জজ আদালতের প্রধান বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পৌঁছে দেওয়া হবে। অবিলম্বে তাঁকে অপসারণ করা না হলে আইনজীবীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
এর আগে চৌকি আদালত আইনজীবী ভবনে মজিবুর রহমান চুন্নুর সভাপতিত্বে আইনজীবীদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমান চুন্নু, অ্যাডভোকেট নাথুরাম ভৌমিক, অ্যাডভোকেট আব্দুস সত্তার, অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার নাসির উদ্দিন, অ্যাডভোকেট গোফরান বিশ্বাস পলাশ, অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান, অ্যাডভোকেট আবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার শাহাবুদ্দিন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, অ্যাডভোকেট কাওসার, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. হাফিজুর রহমান চুন্নু বলেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায়ের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় কলাপাড়ার বিচারপ্রার্থী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনে জামিন ও খালাস আদেশ দেওয়াসহ তাঁর নানা কর্মকাণ্ডে আদালতের ভাবমূর্তি সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।