নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী নদীর বুকে সৃষ্ট ক্ষতচিহ্নগুলো ধীরে ধীরে সেরে উঠছে। অবাধে বালু লুটপাট বন্ধ হওয়ায় নদীটি হারানো গতিপথ ফিরে পাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের আশা—বালু ডাকাতি বন্ধ থাকলে গারো পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা সোমেশ্বরী আবার ‘পাহাড়ি জনপদের ধমনি’ হয়ে উঠবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নদীর বুকে আগে যেখানে ড্রেজার, বাঁশের মাচায় বালু-পাথর ছাঁকনি এবং স্তূপ স্তূপ বালু রাখা ছিল, এখন সে দৃশ্য নেই। গত তিন দিনে নদীর ভবানীপুর, চৈতাটিঘাট, শ্মশানঘাট, শিবগঞ্জঘাট, বিরিশিরি, কেরনখোলা, গাওকান্দিয়াসহ বেশ কিছু স্থানে গিয়ে দেখা যায়, কোথাও অথই পানি, কোথাও বুক বা কোমরসমান পানি, আবার কোথাও হাঁটু বা এর কম পানি। কিছু স্থানে পানি না থাকলেও আগের মতো ক্ষতচিহ্ন নেই। নদীটি দেখে মনে হলো ক্ষত সেরে উঠে কিছুটা নিরাময়ের দিকে যাচ্ছে।
বালু আর পাথর ব্যবসার নামে নদীটিকে ধ্বংস করেছিল রাজনৈতিক প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে নদীটি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। নদীটিকে বালু আর পাথরদস্যুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা এম এ জিন্নাহর বাড়ি নদীর পাশে নলজোরা এলাকায়। তিনি বলেন, দুই দশক ধরে বালুখেকোরা ইজারা নিয়ে শত শত ড্রেজার বসিয়ে নদীর বুকে তাণ্ডব চালিয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন ও লুটপাট করে নদীর সর্বনাশ করে ফেলছে। এখন বালু উত্তোলন না হওয়ায় মনে হচ্ছে, নদী কিছুটা স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে। এটি আশাব্যঞ্জক ঘটনা।
স্মৃতিচারণা করে এম এ জিন্নাহ বলেন, ‘এই নদীতে স্বচ্ছ পানি ও সারা বছর প্রচুর স্রোত থাকত। বড় বড় নৌকা চলত। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন বন্ধুদের নিয়ে প্রায়ই নদীর টানে বাড়িতে চলে আসতাম। তাদের নিয়ে নদীতে মহাশোলসহ প্রচুর মাছ শিকার করতাম। ২০-২৫ বছরে নদীটাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে!’
অবৈধভাবে বালু তোলায় নষ্ট হয়ে যায় সোমেশ্বরী নদীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। নেত্রকোনার দুর্গাপূর এলাকায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ম শ বর
এছাড়াও পড়ুন:
ইফতারে আরবের ফল সাম্মাম, এক কেজির দাম ১৫০ টাকা
আরবের ফল সাম্মাম এখন ইফতারের টেবিলে উঠেছে। দিন দিন এই ফল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবারের ইফতারের খাবারের তালিকায় অনেকেই সাম্মাম রাখছেন। তাই বাজারেও বেশ ভালোই সাম্মাম বেচাকেনা হচ্ছে। এই ফল খেতে অনেকটা বাঙ্গির মতো স্বাদ। বাইরের দিকটা দেখতে সবুজের মতো। এটি মূলত সৌদি আরবের ফল হিসেবেও পরিচিত।
আজ দুপুরে কারওয়ান বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, এক কেজি সাম্মাম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায়। এক কেজিতে সাম্মাম ওঠে তিন থেকে চারটি। বাজারে আসা ক্রেতাদের মধ্যেও সাম্মাম কেনায় বেশ আগ্রহ। অনেকে দামদর করছেন। কেউবা কিনছেন।
কারওয়ান বাজারের ফলের বাজারের চার-পাঁচটি দোকানে সাম্মাম পাওয়া যাচ্ছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো। রাজধানীর অন্য বড় বাজার ও সুপারশপগুলোতে এই ফল দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা মো. রিয়াজ তিন বছর ধরে অন্যান্য ফলের সঙ্গে সাম্মাম বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, রোজার মাসে ইফতারের সময় সাম্মামের মতো সুস্বাদু ফল রাখেন। এবার বেচাকেনাও বেশ ভালো। প্রতিদিন ২০-২৫ কেজি সাম্মাম বিক্রি করেন তিনি। রোজার কারণে সাম্মামের চাহিদা বেড়েছে।
ফলের দোকানে সাইদুর রহমান নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, ‘ইফতারের সময় মাঝেমধ্যে ব্যতিক্রমী ফল রাখলে ভালো লাগে। বাসার সবাই পছন্দ করেন। তাই আজ এক কেজি সাম্মাম কিনলাম।’
আরব অঞ্চলের ফল হলেও এক দশক ধরে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে সীমিত পরিসরে সাম্মামের ফলন হচ্ছে। মূলত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, বগুড়া অঞ্চলে সাম্মামের ফলন হয়। ৮-১০ বছর ধরে এই অঞ্চলের অনেকে এই ফল উৎপাদন করছেন। সরকারিভাবে নানা ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়।
ইতিমধ্যে সাম্মাম মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরে লাল। আরেক জাতের সাম্মামের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরে লাল। যা অনেকের কাছে হানি ডোর নামেই পরিচিত। তবে দুটি ফলই খেতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও সুগন্ধযুক্ত। বীজ বপনের দুই-আড়াই মাসের মধ্যে সাম্মামগাছে ফল আসে। তিন মাসের মধ্যে এ ফল পরিপক্ব হয়।