প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।  কত দ্রুত সংস্কার হয় তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কার প্রয়োজন। 

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। 

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছর ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর নতুন সরকারের দায়িত্ব নিতে বলা হলে তিনি চমকে গিয়েছিলেন বলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন।

তিনি বিবিসিকে বলেন, আমার কোনো ধারণা ছিল না যে— আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি এর আগে কখনও সরকারি কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করিনি এবং এরপরও পরিস্থিতি বুঝে ঠিকভাবে কাজ করতে হয়েছিল।

নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, একবার এটি স্থির হয়ে গেলে আমরা অন্যান্য কিছু জিনিস সংগঠিত করতে শুরু করি। যার মধ্যে— আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করা এবং অর্থনীতি ঠিক করা দেশের জন্য অগ্রাধিকার ছিল।

ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত বছরের আগস্টের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তারপর থেকে তিনি ভারতেই নির্বাসনে রয়েছেন। নাটকীয় এই পটপরিবর্তনের পর একে একে বের হয়ে আসছে সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ নানা চিত্র। হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে, দাবি উঠেছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারেরও।

এমন অবস্থায় এই বছরের শেষের দিকে নির্বাচন আয়োজন করার আশা করছেন ড. ইউনূস। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সেখানেই নির্বাসনে থাকা হাসিনা এবং তার দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাও স্পষ্ট নয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচারের জন্য হাসিনাকে ফেরত চাচ্ছে বাংলাদেশ।

অধ্যাপক ইউনূস ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে বিবিসিকে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগকে) সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা এটা (নির্বাচন) করতে চায় কিনা, আমি তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করবে তা নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়।

তিনি বলেন, শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এবং এরপর অর্থনীতি। (সাবেক সরকারের রেখে যাওয়া) এটি এক ছিন্নভিন্ন অর্থনীতি, বিধ্বস্ত অর্থনীতি। এটা এমন কিছু যেন ১৬ বছর ধরে কিছু ভয়ানক টর্নেডো হয়েছে এবং আমরা এখন টুকরোগুলো তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছি।

বিবিসি বলছে, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং নিপীড়কের মতো বা নির্মম উপাযে বাংলাদেশ শাসন করেন। তার আওয়ামী লীগ সরকারের সদস্যরা নির্মমভাবে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালায়। প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে হাসিনার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হত্যা ও জেলে পাঠানোর ব্যাপক অভিযোগ ছিল।

তবে গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন ব্যাপক গণআন্দোলন ও বিদ্রোহ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। বিক্ষোভকারীদের আহ্বানে ড. ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তিনি ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবেন। তার সরকার কত দ্রুত সংস্কার করতে পারে তার ওপর নির্বাচনের এই সময়সীমা নির্ভর করছে। কারণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এসব সংস্কারকে প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যদি আমাদের ইচ্ছা মতো দ্রুত সংস্কার করা যায়, তাহলে ডিসেম্বরে আমরা নির্বাচন করতে পারবো। আর যদি সংস্কারের পরিমাণ বেশি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের আরও কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।

গত গ্রীষ্মে বাংলাদেশকে ঘিরে থাকা সহিংস বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলা থেকে এসেছি। (এমন বিশৃঙ্খলা যেখানে) মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।

কিন্তু প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও ঢাকার মানুষ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা এখনও পুনরুদ্ধার হয়নি এবং পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে না। ড. ইউসূস বলেন, বেটার (ভালো) একটি আপেক্ষিক শব্দ। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনা করেন তবে এটি (আইনশৃঙ্খলা) ঠিক আছে। এখন যা ঘটছে, তা অন্য সময়ের চেয়ে আলাদা বা ভিন্ন কিছু নয়।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের বর্তমান দুর্দশার জন্য আগের সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, এই ধরনের ঘটনাগুলো হওয়া উচিত— তা আমি সমর্থন করছি না। আমি বলছি যে, আপনাকে বিবেচনা করতে হবে, আমরা কোনও আদর্শ দেশ বা আদর্শ শহর নই যা আমরা হঠাৎ করে তৈরি করেছি। এই অবস্থা হচ্ছে দেশের ধারাবাহিকতা যা আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি, এমন একটি দেশ যেখানে এসব বহু, বহু বছর ধরে চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড ইউন স ড স ম বর সরক র র গত বছর র জন য বছর র ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

রোনালদোর এবার জোড়া গোল, এক হাজারে পৌঁছাতে কত দিন লাগবে, জবাব দিল এআই

২০২১ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে আল হিলালের বিপক্ষে জয়বঞ্চিত ছিল আল নাসর। লিগে ৭ ম্যাচ এবং সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১০ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েও জিততে পারেনি আল নাসর। গতকাল রাতে কিংডম অ্যারেনায় এই জয়খরা কাটাতে পেরেছে স্তেফানো পিওলির দল। সৌদি প্রো লিগের ম্যাচে আল হিলালকে হারিয়েছে ৩-১ গোলে, যা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যোগ দেওয়ার পর ‘ক্যাপিটাল ডার্বি’তে আল নাসরের প্রথম জয়। বিরতির পর দুটি গোল করে রোনালদো নিজে সে জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

৪৭ মিনিটে সাদিও মানের পাস থেকে প্রথম গোলটি করার পর ৮৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয় গোল করেন রোনালদো। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে ১২৭২ ম্যাচে রোনালদোর গোলসংখ্যা এখন ৯৩১। অর্থাৎ ১০০০ গোলের মাইলফলকের দেখা পেতে পর্তুগিজ কিংবদন্তির চাই আর ৬৯ গোল। ৪০ বছর বয়সী এ ফুটবলারের হাজার গোলে পৌঁছাতে ঠিক কত দিন লাগতে পারে?

প্রশ্নটি এখন বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীদের মুখে মুখে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির হয়ে এ পর্যন্ত ১০৪ ম্যাচে ৯৪ গোল রোনালদোর। ম্যাচপ্রতি ০.৯০ গোল করে। ফেব্রুয়ারিতে চল্লিশ পূর্ণ করা রোনালদোর মধ্যে বয়সের ছাপ নেই বললেই চলে। চলতি মৌসুমে ম্যাচ প্রতি ০.৮৮ করে গোল গড় সেটাই বলছে, যখন তাঁর গোলসংখ্যা ৩৪ ম্যাচে ৩০। গত মৌসুমে পর্তুগিজ তারকার গোল গড় ছিল ম্যাচপ্রতি ০.৯৮ করে (৫১ ম্যাচে ৫০ গোল)। আর প্রথম মৌসুমে ১৯ ম্যাচে ১৪ গোল করা রোনালদোর ম্যাচপ্রতি গোল গড় ছিল ০.৭৩ করে।

অর্থাৎ, আল নাসরে যোগ দেওয়ার পর গোলের মধ্যেই আছেন রোনালদো। যে কারণে তাঁর হাজার গোল নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও বেড়েছে। তবে রোনালদোর পরিপুষ্ট পরিসংখ্যানে পেনাল্টি গোলের অবদান কম নয়। ১৭২টি গোল করেছেন পেনাল্টি থেকে, যা তাঁর ক্যারিয়ারের মোট গোলের ১৮ শতাংশ।

আরও পড়ুন‘ম্যারাডোনা ব্র্যান্ড’ নিয়ে ফুফুদের বিরুদ্ধে মামলা করবেন তাঁর মেয়েরা১৩ ঘণ্টা আগে

প্রশ্ন হলো, হাজার গোলের দেখা পেতে রোনালদোর কত দিন লাগতে পারে। একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে উত্তর দেওয়া অসম্ভব। তবে গণিত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সহায়তায় আন্দাজ তো করাই যায়। যেমন ধরুন, সৌদির ক্লাবটির হয়ে ম্যাচপ্রতি তাঁর ০.৯০ গোল গড়ের আলোকে বলা যায়, হাজার গোলের দেখা পেতে রোনালদোকে আরও ৭৯ ম্যাচ খেলতে হবে। চলতি মাস থেকে হিসাব করলে আরও প্রায় দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কার হিসাবে, কোনো চোটে না পড়লে ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ কিংবা ২০২৭ সালের শুরুর দিকে মাইলফলকটির দেখা পেতে পারেন রোনালদো।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কী বলে

মেটা এআইকে একই প্রশ্ন করা হয়েছিল। কৃত্রিম এই বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিও মনে করে, ২০২৭ সালের শুরুর দিকে হাজারতম গোলের দেখা পাবেন রোনালদো। গ্রোকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি অবশ্য সময়টা একটু পিছিয়ে দেখাচ্ছে। ২০২৭ সালের মে থেকে আগস্টের মধ্যে রোনালদো মাইলফলকটির দেখা পেতে পারেন বলে মনে করছে তারা। গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি জেমিনি তিনটি সম্ভাব্য সময় দেখিয়েছে। আশার জায়গা থেকে বলা হয়েছে ২০২৬ সালের শেষ কিংবা ২০২৭ সালের শুরুতে হাজারতম গোলের দেখা পাবেন রোনালদো। বাস্তবতার জায়গা থেকে সময়টি ২০২৮ অথবা ২০২৯ হতে পারে। আর হতাশাবাদীর জায়গা থেকে বলা হয়েছে রোনালদো কখনোই হাজারতম গোলের দেখা পাবেন না। পর্তুগিজ তারকাকে চেনা থাকলে শেষ সম্ভাব্য পথটি হয়তো আন্দাজ করত না গুগলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।

আরও পড়ুনপৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে—এটা বুঝতে পেরে অকালে ঝরেছে যে আর্জেন্টাইন প্রতিভা১৪ ঘণ্টা আগে

চলতি মৌসুম শেষে আল নাসরের সঙ্গে রোনালদোর চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে। পর্তুগিজ কিংবদন্তি সৌদি ক্লাবটিতে থাকবেন কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়। যদিও আলোচনা আছে, শিগগিরই চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে। তবে রোনালদোর শেষবারের মতো ইউরোপে ফেরার সম্ভাবনাও আছে। যে ক্লাবের হয়ে ক্যারিয়ারের শুরু করেছিলেন, ফিরতে পারেন সেই স্পোর্টিং লিসবনে। এ প্রসঙ্গটি উঠছে হাজার গোলের বিষয়টি মাথায় রেখেই।

পর্তুগালের চেয়ে সৌদি ফুটবলে হাজারতম গোলের মাইলফলকের দেখা পাওয়া রোনালদোর জন্য তুলনামূলক সহজ। তবে ঘরে ফিরে ২০২৬ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নেওয়া এবং সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানানোর তাৎপর্য অন্যরকম। রোনালদোর হাজারতম গোলের স্বপ্নপূরণ তাই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করছে।

আরও পড়ুনমৌসুম শেষেই সিটি ছাড়বেন ডি ব্রুইনা১৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে বিপদের মুখে ২০২৬ বিশ্বকাপ
  • সাধারণ জ্ঞান-৪: মার্চ-২০২৫। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্ব
  • রোনালদোর এবার জোড়া গোল, এক হাজারে পৌঁছাতে কত দিন লাগবে, জবাব দিল এআই