মেঘনার মোহনায় জেগে ওঠা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচরে প্রসূতি ও মায়েদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে গড়ে তোলা হয়েছিল একটি পরিবার কল্যাণকেন্দ্র। লোকবলের অভাবে শুরু থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে কেন্দ্রটি। পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের দৃশ্যমান কার্যক্রম না থাকায় ২০০৩ সালে অস্থায়ীভাবে এটিতে উড়িরচর পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা অবস্থান নেন। সেই থেকে উড়িরচর পরিবার কল্যাণকেন্দ্রই উড়িরচর পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে পরিচিতি পায়।

কেন্দ্রটিতে সহকারী সার্জন, উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ পাঁচটি পদে লোকবল থাকার কথা থাকলেও নেই পাঁচজনের একজনও। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মাঠপর্যায়ের তিনজন কর্মী এখন মাঝেমধ্যে সেখানে সভা করেন। এটুকুই বর্তমানে পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের কার্যক্রম।

উড়িরচরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চিকিৎসার অভাবে শিশু ও প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে ট্রলারে সন্তান প্রসব এবং প্রসূতির মৃত্যুর নজিরও আছে অনেক। তবে এসব মৃত্যু স্থান হয় না সরকারি পরিসংখ্যানে।

৪০ হাজার বাসিন্দার কোনো চিকিৎসক নেই

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে উড়িরচরে একজন মেডিকেল অফিসার পদায়ন করলেও তিনি যোগদান না করে অন্যত্র সংযুক্তি নিয়ে চলে যান। ফলে স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকতে হচ্ছে উড়িরচরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে। ১৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের উড়িরচর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন। সেখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ বসবাস করলেও নেই একজন চিকিৎসকও। ফলে ‘ডাক্তার দেখাতে’ এসব মানুষকে দিতে হচ্ছে সাগর পাড়ি।

পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে একজন সহকারী সার্জন দায়িত্ব পালনের কথা থাকলেও এই পদে কখনো কারও সেবা পাননি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। দ্বীপটিতে সরকারি কোনো স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান যেমন নেই, তেমনি নেই কোনো বেসরকারি ক্লিনিকও। ফলে সাধারণ অসুখ থেকে শুরু করে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ নেই বিশাল এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর।

সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মানস বিশ্বাস প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, উড়িরচরে নিগার সুলতানা নামের একজন মেডিকেল অফিসারকে পদায়ন করা হলেও তিনি সেখানে যোগ দেননি। পদায়নের পরপরই তিনি ঢাকার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্তি নিয়ে চলে যান। তবে অচিরেই কর্মস্থল ছেড়ে অন্যত্র সংযুক্তি নেওয়া মেডিকেল অফিসারদের কর্মস্থলে ফেরার আদেশ জারি হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন মো.

জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, 'কর্মস্থলের বাইরে যাঁরা সংযুক্তিতে আছেন, তাঁদের সংযুক্তি সহসাই বাতিল হয়ে যাবে বলেই মন্ত্রণালয় সূত্রে আমরা জেনেছি। আশা করি, উড়িরচরে পদায়নকৃত মেডিকেল অফিসার সেখানে যোগ দেবেন।’

পাঁচ পদের সব কটিই শূন্য

২০১৯ সালের জুলাই মাসে উড়িরচরে একজন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার যোগদান করেন। তিনি পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে কর্তব্যরত ছিলেন। ২০২৩ সালের মার্চের পরে তাঁকেও আর উড়িরচরের কর্মস্থলে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এরপর সেই পদসহ শূন্য পদগুলোতে আর কাউকে পদায়ন সম্ভব হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন সন্দ্বীপ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. আবদুল মতিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব কটি পদে লোকবল থাকলে উড়িরচরে প্রসূতিসেবা নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবার সংকট কিছুটা কাটিয়ে ওঠা যেত।’

উড়িরচর ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্র এখন পুলিশ ফাঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সম্প্রতি তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল অফ স র

এছাড়াও পড়ুন:

আর্নে স্লট: কিংবদন্তির জায়গা নিলেন এবং নিজেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন

ফ্ল্যাশব্যাকে এক বছর আগের এই সময়ে ফিরে যাওয়া যাক। লিভারপুল শহরের লাল অংশ তখন মেঘাচ্ছন্ন। প্রায় কারও মনই ভালো নেই। পুরো শহরে তখন ছড়িয়ে পড়েছে বিদায়রাগিণী। লিভারপুলের পুনরুত্থানের নায়ক ইয়ুর্গেন ক্লপ ক্লাব ছাড়বেন। এমন কাউকে তো আর যেনতেনভাবে বিদায় দেওয়া যায় না! ক্লপের বিদায় রাঙানোর প্রস্তুতিতে নিজেদের ব্যস্ত করে রাখেন লিভারপুলবাসী। এই ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে ক্লপকে হারানোর যন্ত্রণাটাকেও হয়তো কবর দিতে চান তাঁরা।

বিদায়ের এই ক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছিল, পুরো লিভারপুল শহর তখন ক্লপময় হয়ে উঠছিল। বিলবোর্ড, রাস্তার দেয়াল কিংবা কফি শপ—সব জায়গা ছেয়ে গেছে ক্লপের পোস্টারে। বিদায় আয়োজন যখন তুঙ্গে, তখনই আর্নে স্লটের কোচ হওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।

খুব পরিচিত কোনো নাম নয়। নেদারল্যান্ডসের ক্লাব ফেইনুর্দের কোচ হিসেবে সাফল্য পেয়েছেন বটে, তবে লিভারপুলের মতো ক্লাবে কতটা কী করতে পারবেন, তা অনিশ্চিত। লিভারপুল সমর্থকরা অবশ্য তাঁর আসার পথে ফিরেও তাকালেন না। স্লট কে, কেমন তাঁর কোচিং–দর্শন, ক্লপের সঙ্গে তাঁর কী পার্থক্য, সেসব নিয়ে ভাবলেনও না কেউ।

কেউ কেউ অবশ্য আলটপকা মন্তব্যও করে বসলেন, ‘এক মৌসুমও টিকবে না’, ‘পরের মৌসুমে ৮–১০ নম্বরে থেকে শেষ করবে লিভারপুল, আর ছাঁটাই হবে স্লট’। এ রকম বহু মন্তব্য সে সময় খোদ লিভারপুল সমর্থকেরাও করেছিলেন। পরিস্থিতি এমন ছিল, স্লট তখন লিভারপুলে সবচেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ একজন, যাঁকে নিয়ে কেউ ভাবছে না। ক্লপের পরিবর্তে কাউকে না কাউকে তো আসতেই হতো। ফলে কে আসছেন, তা নিয়ে অত মাথা ঘামানোর দরকার কী, কেউ একজন এলেই হলো!

আরও পড়ুনলিভারপুলের পথে থাকা আর্নে স্লটের ‘আবেদনময়ী’ ফুটবল–দর্শন কেমন ২৭ এপ্রিল ২০২৪

টাক মাথার আপাতনিরীহ-দর্শন মানুষটির এই অনাদর মেনে নিতে পারেননি ক্লপ নিজেই। নিজের বিদায়বেলায় ক্লপকেই ‘স্লট, স্লট’ বলে স্লোগান ধরতে হয়েছিল। ক্লপ যেন সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন, তিনিই ক্লাবের শেষ কোচ নন। দায়িত্ব নিতে অন্য একজন এরই মধ্যে চলে এসেছেন। ক্লপের সেই স্লোগান অবশ্য অ্যানফিল্ডের গ্যালারিতে কোনো ঢেউ তুলতে পারেনি। পারার অবশ্য কথাও নয়।

এমন নীরস ও হতশ্রী দশার ভেতর বাক্স–পেটরা নিয়ে অনেকটা আগন্তুকের মতো অ্যানফিল্ডের দায়িত্ব সামলাতে আসেন স্লট। নিজের প্রথম মৌসুমে দল গড়তে কোনো রসদও পাননি এই ডাচ কোচ। উইঙ্গার ফেদেরিকো কিয়েসাকেই কেবল দলে ভেড়াতে পেরেছেন। চোটপ্রবণ কিয়েসা সব মিলিয়ে খেলেছেন ১২ মাচ। মূলত ক্লপের রেখে যাওয়া দলকে নিয়েই পথচলা শুরু করেছিলেন স্লট।

এত প্রতিকূল পরিবেশে সত্ত্বেও নিজের লক্ষ্যের প্রতি অবিচল থেকেই ধীরপায়ে এসে ‘অল রেড’ ডাগআউটে দাঁড়ান স্লট। তারপর জাদুকরের মতো চোখ ইশারাতেই লিভারপুলকে জিতিয়েছেন একের পর এক ম্যাচ। একপর্যায়ে লিভারপুলের ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন স্লট। মাঝের বাজে সময় অবশ্য দলটিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও এফএ কাপ থেকে ছিটকে দিয়েছে। কিন্তু তত দিনে লিগ জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গেছে।

স্লট নিয়েছিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপের জায়গা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে থানা ঘেরাও
  • বজ্রপাতে ২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের মৃত্যু
  • সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তরুণকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে নিহত যুবদল কর্মী
  • ৯ জেলায় বজ্রপাতে ১৫ জনের মৃত্যু
  • ৭ জেলায় বজ্রপাতে ১৩ জনের মৃত্যু
  • ৬ জেলায় বজ্রপাতে ১২ জনের মৃত্যু
  • ভারতে পুলিশ বাহিনীর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যের ওপর হামলা
  • আর্নে স্লট: কিংবদন্তির জায়গা নিলেন এবং নিজেই কিংবদন্তি হয়ে গেলেন
  • বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পায় না সীমান্তের মানুষ
  • রাতের ব্যবধানে শত কৃষকের সর্বনাশ