নজিরবিহীন বিক্ষোভ ও হট্টগোলের পর শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ চার কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে তারা জানিয়েছেন, পুরো কমিশন, অর্থাৎ চেয়ারম্যান ও চার কমিশনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে কর্মবিরতি পালন করবেন তারা।

জানা গেছে, গতকাল বেলা ১১টায় কমিশনের কিছু কর্মকর্তা বিএসইসি ভবনের  ছয়তলায় জড়ো হয়ে তুমুল হট্টগোল শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা পাঁচতলায় চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ওই ফ্লোরে প্রবেশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেন। কমিশন কার্যালয়ের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ও মূল ফটক বন্ধ করে দেন। পুলিশকে খবর দিলে তারা ঢুকতে পারেনি। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের ওপর  লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত পাঁচ কর্মকর্তাসহ সাতজন আহত হন। আহত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন, রাকিবুর রহমান, সুলতান সালাউদ্দিন, আরিফুল ইসলাম, চেয়ারম্যানের পিএস জাহাঙ্গীর, ইলেকট্রিশিয়ান মাহবুব প্রমুখ। সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় পরে বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা ভবন ত্যাগ করেন। 
বিএসইসির কয়েকজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারি করা হয়। সাইফুর রহমান বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। বুধবার সকালে এ খবর শুনে কিছু কর্মকর্তা বিক্ষুব্ধ হন। যদিও বেশ কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত আগস্টে তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিডি) করে কমিশন। 

সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ইস্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল কর্মকর্তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেও আগে থেকেই নানা কারণে বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন কর্মকর্তারা। সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, বিতর্কিত নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১২৭ কর্মকর্তার বিষয়ে উচ্চ আদালতে চলমান মামলা  নিষ্পত্তির বিষয়ে কমিশনের শীর্ষ নেতৃত্ব যথেষ্ট আন্তরিক নন। এ কারণে সহকারী পরিচালকরা আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন।

কর্মকর্তাদের আরও অভিযোগ, কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা কমিশনের আইনকানুনের বাইরে গিয়ে বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন। তারা কর্মকর্তাদের কোনো পরামর্শ শোনেন না। উল্টো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অহরহ অশোভন আচরণ করেন। অতি সম্প্রতি সাবেক দুই কমিশনের সময়কার বেশ কিছু অনিয়মের ওপর যে তদন্ত হয়েছে, তার ভিত্তিতে কমিশন কর্মকর্তাদের গুরুদণ্ড হিসেবে ধরে বিধিবহির্ভূতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে। এতে সিনিয়র-জুনিয়র সব কর্মকর্তা ক্ষুব্ধ হন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে চার দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবি, জরুরি সভা করে নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের অবৈধ আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদনের নামে  কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শোকজ বন্ধ করতে হবে এবং আগের  শোকজ প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে। ১২৭ জনের নিয়োগের ব্যাপারে আইনজীবী নিয়োগ এবং তিন দিনের মধ্যে আপিল করে কমিশনের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন, অপেশাদারমূলক দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে। উল্লেখিত চার দাবি মানা না হলে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত পুরো কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম, আনোয়ারুল ইসলাম এবং রিপন কুমার দেবনাথ উপস্থিত ছিলেন। 

পুরো পরিস্থিতির বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে ফোন করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে কমিশনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা দাবি করেন, উপযুক্ত কারণ থাকায় আইন মেনে নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কমিশন যখন পুরোনো শেয়ার কারসাজিসহ সুনির্দিষ্ট ১২টি ইস্যুতে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে, তখন কিছু কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে কমিশনে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি করছে।

ওই কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, কর্মকর্তাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তারা কমিশনের কাছে বলতে পারত। কিন্তু তারা অবরুদ্ধ করে ফেলে। প্রথমে লিফট ও সিসি ক্যামেরা বন্ধ করে। পরে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিলে শীতাতপ ব্যবস্থাও বন্ধ হয়। রোজার সময় তাদের নিজেদের কথা চিন্তা করে হলেও অন্তত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও শীতাতপ ব্যবস্থা চালুর অনুরোধ করেন। তাতেও তারা সাড়া দেননি। কর্মকর্তাদের দাবি অনুযায়ী পদত্যাগ করবেন কিনা– এমন প্রশ্নে বিএসইসির শীর্ষ ওই কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেননি।

বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

গতকাল সন্ধ্যায় বিএসইসির পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমকর্মীদের পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমান কমিশন শেয়ারবাজারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় বিএসইসির কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত দিনের শেয়ারবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধানে কমিশন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ১২টি তালিকাভুক্ত কোম্পানির অনিয়ম তদন্ত করে। এ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি সাতটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান, যার আওতায় রয়েছে শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বিএসইসির কিছু কর্মকর্তা। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ বছর চাকরি সমাপ্ত করায় বিধি অনুযায়ী কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে গত ৪ মার্চ অবসর দেওয়া হয়। 

এসব ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কমিশন বোর্ডরুমে চলমান সভায় জোরপূর্বক ঢুকে অবরুদ্ধ করে। তারা কমিশনের মূল ফটকে তালা দেয়, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বন্ধ করে দেয় এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে। এভাবে অরাজক ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে এবং পেশিশক্তি প্রদর্শন করে। একই সঙ্গে তারা সদ্য যোগ দেওয়া চেয়ারম্যানের পিএসকে (সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব) লাঞ্ছিত করে।

নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলমের বক্তব্য

গতকাল সন্ধ্যায় জানতে চাইলে বিএসইসির মাহবুবুল আলম সমকালকে জানান, নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর কমিশনের আদেশ অবৈধ। কারণ, যে ধারায় অবসরের আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা সরকারের এখতিয়ার; কমিশনের নয়। কমিশনের নিজস্ব চাকরিবিধি আছে। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলে আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত ও শুনানির সুযোগ দিয়ে অবসরে পাঠানোর সুযোগ আছে।

মাহবুবুল আলম বলেন, সব কর্মকর্তার অভিযোগ, বর্তমান কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা কর্মকর্তাদের ছোটখাটো বিষয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। তারা বিগত কমিশনের সময়কার অন্যায়-অপরাধের জন্য সব কর্মকর্তাকে অপরাধী ভাবেন এবং সেভাবে আচরণ করেন। এতে সবার মধ্যে কর্মস্পৃহা কমে গেছে।

কর্মকর্তাদের বিজ্ঞপ্তি

কর্মকর্তাদের পক্ষে বিএসইসির পাল্টা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে বিএসইসির অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। তাতে কমিশনের বর্তমান নেতৃত্বকে অথর্ব বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছেন। এর সুরাহা না করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিয়ে লাঠিচার্জ ও হামলা চালিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আহত করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। নিজ কর্মস্থলে লাঠিচার্জ ও হামলার শিকার হওয়া বিএসইসি তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অন্য সবার মতো বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আশা করেছিলেন, শেয়ারবাজার ও এর নিয়ন্ত্রক সংস্থায় সুদিন ফিরবে। কিন্তু তা হয়নি। আগের কমিশন যেভাবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জোর করে আইনবহির্ভূত কাজে বাধ্য করত, এই কমিশনের চেয়ারম্যান ও কমিশনাররাও একই উপায়ে তাদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা হাসিল করছেন। মৌখিক নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গালাগাল, দুর্ব্যবহার ও কারণ দর্শানোর মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে হয়রানি করা হয়। 

কমিশনের একজন নির্বাহী পরিচালককে নিয়মকানুনের তোয়াক্কা না করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর যে প্রক্রিয়া, তা বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বেচ্ছাচারী ও ব্যক্তিগত আক্রোশের উদাহরণ জানিয়ে বলা হয়, কোনো কর্মচারী-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার তদন্ত হতে পারে এবং প্রমাণসাপেক্ষে আইনানুযায়ী ও যথাযথ প্রক্রিয়ায় যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু খেয়ালখুশিমতো ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করার জায়গা শেয়ারবাজার না। 

এমতাবস্থায় পুঁজিবাজারের উন্নতি, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণসহ কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুষ্ঠু ও স্বাধীনভাবে কাজ করার স্বার্থে ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও অন্য কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। না হলে বৃহস্পতিবার থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এসইস কর মকর ত দ র ন কর মকর ত র কর মকর ত ব এসইস র ক কর মকর ত র শ য় রব জ র র পদত য গ কর ত দ র ব যবস থ র অন য অন য য় কর ত র র ওপর তদন ত গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসইসি লাভে ফিরলেও ভোগাচ্ছে বিপণন দুর্বলতা

টানা তিন বছর লোকসান দেওয়ার পর লাভে ফিরেছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)। বিএসইসি সূত্র বলছে, গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) তারা ৭৮ কোটি টাকা লাভ করেছে। তবে বিপণন দুর্বলতার কারণে করপোরেশনটির তিনটি কারখানা এখনো লোকসানে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষার ২৮ বছরের (১৯৯৬–৯৭ থেকে ২০২৩–২৪ অর্থবছর) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই সময়ের শুরুর দিকে বিএসইসি একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৯৯–২০০০ সালে করপোরেশনটি প্রথম লাভে আসে। তারপর টানা ২১ বছর তারা লাভে ছিল। ২০২০–২১ অর্থবছরে এসে এটি লোকসানে পড়ে। টানা তিন বছরে (২০২০–২১ থেকে ২০২২–২৩ অর্থবছর) ২৬ কোটি টাকা লোকসান দেয় তারা। অবশ্য সেই লোকসান কাটিয়ে এবার লাভে ফিরল করপোরেশনটি।

বিএসইসির চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়েছে, বিপণন ব্যবস্থাপনায় পেশাদারি আনা, কারখানার জন্য কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করা, ক্রয়–বিক্রয়সহ অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা ও তদবির ঠেকাতে পারায় লাভে ফেরা সম্ভব হয়েছে।

বিএসইসির অধীন বর্তমানে নয়টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। মূলত এসব কারখানার লাভ–লোকসানের ওপরই বিএসইসির সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করে।যেভাবে লাভে ফিরল

বিএসইসির অধীন বর্তমানে নয়টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। মূলত এসব কারখানার লাভ–লোকসানের ওপরই বিএসইসির সাফল্য–ব্যর্থতা নির্ভর করে। দীর্ঘ সময় লাভে থাকা অবস্থায় ২০২০–২১ অর্থবছরে বিএসইসি যখন লোকসানে পড়ে, তখন তাদের নয়টির মধ্যে চারটি কারখানা লোকসান দেয়। গত অর্থবছর যখন লাভে ফিরল, তখন তাদের লোকসানি কারখানার সংখ্যা কমে তিনটি হয়েছে। লোকসানে থাকা কারখানাগুলোর লোকসানের পরিমাণও কমেছে।

২০২০–২১ অর্থবছরে বিএসইসির যে পাঁচ কারখানা লাভ করেছিল, তাদের লাভের পরিমাণও ছিল সীমিত, যা টাকার অঙ্কে ছিল পাঁচ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে কারখানাগুলোর লাভও বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি লাভ বেড়েছে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের, যারা গাড়ি উৎপাদন করে থাকে। প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ২০২০–২১ অর্থবছরে লাভ ছিল প্রায় ২ কোটি টাকা, সেখানে কারখানাটি গত অর্থবছরে লাভ করেছে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা। মূলত এই কারখানাই বিএসইসিকে বড় লাভে নিয়ে এসেছে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়তে পারে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সেই লোকসান কাটিয়ে লাভে ফেরা সম্ভব। অধ্যাপক আলী আক্কাস, সাবেক চেয়ারম্যান, ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনা ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে গাড়ি বিক্রি কমে যায়। মূলত এ কারণে তাদের লাভ ব্যাপকভাবে কমে যায়। লাভ বাড়ানোর জন্য তারা সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেয়, উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নেয় এবং বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছেও গাড়ি বিক্রির উদ্যোগ নেয়। এতেই তাদের লাভ অনেক বেড়েছে।

২০২২–২৩ অর্থবছরে ন্যাশনাল টিউবস প্রায় ২ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছিল। এটি গত অর্থবছর লাভ করেছে ৮ কোটি টাকার বেশি। এই কারখানায় এমএস, জিআই, এপিআই পাইপ তৈরি করা হয়। বিএসইসি চেয়ারম্যান দপ্তর জানায়, কাঁচামালের অভাবে এই কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যে প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল আমদানির দায়িত্ব পেয়েছিল, তারা যোগ্য ছিল না এবং দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল। একপর্যায়ে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেড় কোটি টাকার বেশি জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নতুন আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়। ন্যাশনাল টিউবসের মতো বিএসইসির অন্য কোনো কারখানায় কাঁচামালের অভাবে যেন উৎপাদন বন্ধ না হয় বা দেরি না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হয়েছে।

বিএসইসি কর্মকর্তারা বলছেন, লোকসান কাটিয়ে ওঠার জন্য বিএসইসি ও বাইরের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে দল গঠন করা হয়। তারা লোকসানের কারণ অনুসন্ধান করেছে এবং সমাধান সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে কাজ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রয়–বিক্রয়, কারখানায় কী পরিমাণ পণ্য আছে ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ কাজ নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে স্বচ্ছতা আনা গেছে। তদবিরের ভিত্তিতে নয়, কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় বিএসইসিকে লাভে ফেরাতে সহযোগিতা করেছে।

সামগ্রিকভাবে বিএসইসি লাভে ফিরলেও গত অর্থবছরে তাদের তিনটি কারখানা লোকসান দিয়েছে। সেগুলো হলো গাজী ওয়্যারস, ইস্টার্ন টিউবস ও এটলাস বাংলাদেশ।বিপণন দুর্বলতায় তিন কারখানা লোকসানে

সামগ্রিকভাবে বিএসইসি লাভে ফিরলেও গত অর্থবছরে তাদের তিনটি কারখানা লোকসান দিয়েছে। সেগুলো হলো গাজী ওয়্যারস, ইস্টার্ন টিউবস ও এটলাস বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিপণন ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এসব কারখানা লোকসানে পড়েছে।

বিএসইসির উৎপাদনে থাকা নয়টি কারখানার বাইরে বাংলাদেশ ব্লেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড নামের আরও একটি কারখানা রয়েছে। যারা সোর্ড ব্র্যান্ডের ব্লেড উৎপাদন করে। তবে কারখানার আধুনিকায়ন কাজের জন্য ২০১৯ সাল থেকে এর উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু সাঈম প্রথম আলোকে বলেন, নভেম্বর নাগাদ তাদের বাণিজ্যিক উৎপাদনের আশা রয়েছে। উৎপাদনে গেলে তাদের লাভে ফেরা সম্ভব।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে লাভে ফেরা সম্ভব

বিএসইসির লোকসান থেকে লাভে ফেরার বিষয়টি ইতিবাচক উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় গবেষণা ব্যুরোর সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আক্কাস প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো প্রতিষ্ঠান লোকসানে পড়তে পারে। তবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে সেই লোকসান কাটিয়ে লাভে ফেরা সম্ভব।

কোনো প্রতিষ্ঠান লাভে থাকলে কর্মসংস্থান হয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটায় এবং আমদানির প্রয়োজনীয়তা কমায়, যা একটি দেশের জন্য ভালো বলেও উল্লেখ করেন আলী আক্কাস।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করা হবে: বিএসইসি চেয়ারম্যান
  • অবসর নিয়ে গুঞ্জনে যা বললেন ধোনি
  • ১০ কোম্পানি পরিদর্শনে বিএসইসির অনুমতি পেল ডিএসই
  • আইএমইডিতে নতুন সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে জনপ্রশাসনে সংযুক্ত
  • স্প্যানিশ ক্লাব কিনবেন রোনালদো!
  • খেলার দুনিয়ায় যত বিলিয়নিয়ার
  • সাবিক-হিরুদের শেয়ার কারসাজি: ২ কোটি ২১ লাখ টাকা দণ্ড
  • বিএসইসি লাভে ফিরলেও ভোগাচ্ছে বিপণন দুর্বলতা