‘তোমার অর্জন বছরের পর বছর মনে রাখা হবে’—মুশফিককে নিয়ে তামিম
Published: 6th, March 2025 GMT
মুশফিক রহিম গতকাল রাতে ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ার পর তাঁকে ভিডিওতে বিদায়ী বার্তা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। জাতীয় দলে ১৬ বছর সতীর্থ হিসেবে খেলেছেন দুজন। মুশফিককে ধন্যবাদ জানিয়ে তামিম বলেছেন, অনেকের কাছেই তিনি রোলমডেল হয়ে থাকবেন।
আরও পড়ুনআফ্রিদির বকেয়া উদ্ধারে দায়িত্ব নেবে না বিসিবি১ ঘণ্টা আগেভিডিওবার্তার শুরুতে তামিম বলেন, ‘আজকে এমনই একটা দিন, সাধারণত কেউ যদি কোনো সংস্করণ থেকে অবসর নেয়, সবাই স্ট্যাটাস দেয়, তাদের অনুভূতিটা বোঝায়। কিন্তু এমন একজন ব্যক্তি আজ অবসর নিলেন, যার সঙ্গে আমার ২০-২৫ বছরের অভিযাত্রা। একটা স্ট্যাটাসে আমি আসলে বোঝাতে পারতাম না, তার প্রতি আমার অনুভূতি কেমন এবং এখন আমার আসলে কেমন মনে হচ্ছে। আপনারা সবাই জানেন মুশফিক কিছুক্ষণ আগে ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছে। মুশফিককে আমি এতটুকুই বলতে চাই যে দোস্ত, তোর সঙ্গে আমার খেলার শুরু অনূর্ধ্ব-১৫ থেকে এবং আমি তোকে ধাপে ধাপে বেড়ে উঠতে দেখেছি। তোকে দেখেছি যে, সাধারণ ব্যাটসম্যান থেকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছিস। অনেকেরই তার কঠোর পরিশ্রমটা দেখার সুযোগ হয়নি। আমি দেখেছি যে একটি ছেলে কত কষ্ট করতে পারে। একটা মানুষের পক্ষে যতটা কষ্ট করা সম্ভব, আমার কাছে মনে হয় যে সে সবই করেছে, এখনো করে যায়। আমরা এটা নিয়ে অনেক সময় হাসাহাসি করি যে, একটা মানুষ এত কষ্ট করে কেন। কিন্তু তার নিবেদন, খেলার প্রতি ভালোবাসা, এটা বিশাল। এটা আমি কথায় কোনো দিন কাউকে বোঝাতে পারব না। খেলা ছেড়ে দেওয়া ওর জন্য কত কষ্টকর, আমি যেহেতু ওর কাছের একজন বন্ধু, আমি বুঝতে পারি যে, এটা তার জন্য খুব খুব কঠিন।’
আরও পড়ুনওয়ানডে থেকে অবসরের ঘোষণা মুশফিকের১০ ঘণ্টা আগে১৯ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ২৭৪ ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক। ৯ সেঞ্চুরি ও ৪৯ ফিফটিতে ৩৬.
তামিম এরপর মুশফিকের প্রতি যোগ করেন, ‘এখনো তুই একটি সংস্করণে খেলবি—টেস্ট সংস্করণ। আমি সত্যিই আশা করি ও প্রার্থনা করি তুই ভালো কর। অন্তত ১০০টি টেস্ট খেল, যেটা বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটার খেলে নাই। আমি এটা আশা করব, ১০০তম টেস্ট অবশ্যই খেলবি। খুব আবেগপ্রবণ লাগছে, যেটা আমি টের পাচ্ছি, তুইও পাচ্ছিস। বাংলাদেশ তোকে মিস করবে। যা কিছুই করেছিস তুই দেশের জন্য, অনেক অনেক বছর সেসব মনে রাখা হবে...ধন্যবাদ, সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ মুশফিক।’
মুশফিকের দীর্ঘদিনের আরেক সতীর্থ মাহমুদউল্লাহও তাঁকে বিদায়ী বার্তা দিয়েছেন। গতকাল গভীর রাতে মাহমুদউল্লাহর ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে করা পোস্টে লেখা হয়, ‘প্রিয় মুশফিক, অসাধারণ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন। দুবাইয়ে ভাঙা পাঁজর নিয়ে তোমার সেঞ্চুরিটা এখনো মনে আছে। এটা খেলাটির প্রতি তোমার সম্মানবোধ, নিবেদন ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে কঠোর পরিশ্রমী মানসিকতার প্রমাণ। এটা যেকোনো ক্রিকেটারকেই প্রেরণা জোগাবে। কোনো সন্দেহ নেই তুমি বাংলাদেশ ক্রিকেটের রত্ন। লাল বলের অভিযাত্রার জন্য শুভকামনা।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স স করণ অবসর ন র জন য বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ কমিশন, আজ থেকে কর্মবিরতি কর্মীদের
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) এক নির্বাহী পরিচালককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল বুধবার দিনভর সংস্থাটিতে বিক্ষোভ, ঘেরাওয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাসদস্যদের হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভের মুখে বেলা তিনটার পর বিএসইসির চেয়ারম্যানসহ অপর তিন কমিশনারকে সেনা নিরাপত্তায় কার্যালয় থেকে বের করা হয়। বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা ধরে এ পরিস্থিতি বিরাজমান ছিল।
দিনভর নানা দাবিতে বিক্ষোভের পর বিকেলে সংস্থাটির সব কর্মকর্তা-কর্মচারী বিএসইসির বর্তমান কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কর্মবিরতি ঘোষণা করেন। তাঁরা জানিয়েছেন, পুরো কমিশন পদত্যাগ না করলে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করবেন।
গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ের নিচতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ রেজাউল করিম, রিপণ কুমার দেবনাথ, পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মজুমদার, অতিরিক্ত পরিচালক লুৎফুল কবির, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশিদুল আলম প্রমুখ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বিএসইসিতে গতকাল দিনভর ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা আজ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে তুলে ধরবে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে একটি দল। এর ভিত্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
গত মঙ্গলবার নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। সংস্থাটির চেয়ারম্যান ওই দিনই এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেন। চাকরির বয়সসীমা ২৫ বছর হওয়ায় সরকারি চাকরিবিধি অনুযায়ী তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। এর আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁকে অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্তের পর গতকাল বেলা ১১টার দিকে সংস্থাটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৪ দফা দাবি নিয়ে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারের কাছে যান। এ সময় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কমিশন বেক্সিমকো সুকুক বন্ডের অনিয়মের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে সভা করছিলেন। ওই সভাকক্ষেই হাজির হয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চার দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে সাইফুর রহমানের বাধ্যতামূলক অবসরের আদেশ প্রত্যাহার; তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশনের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার ও শোকজ বন্ধ করা; কমিশনের ১২৭ কর্মী নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে উত্থাপিত বিষয়ে কমিশন থেকে আইনজীবী নিয়োগ ও তিন দিনের মধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে আপিল করা এবং কমিশনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অশোভন ও অপেশাদার আচরণ বন্ধ করা। এসব দাবি পূরণ না করলে কমিশনের পদত্যাগেরও দাবি জানানো হয়।
এর আগে চেয়ারম্যানের কক্ষসহ কমিশন ফ্লোরের সব সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিএসইসি ভবনের মূল ফটকও ভেতর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ফ্লোরের ফটক। একপর্যায়ে বন্ধ করা হয় পুরো ভবনের বিদ্যুতের সংযোগও। খবর পেয়ে বেলা দেড়টার দিকে একদল পুলিশ এসে ভেতরে ঢুকতে না পেরে ফেরত যায়। ততক্ষণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিক্ষোভে কমিশনের অবরুদ্ধ হয়ে পড়ার খবর সংবাদমাধ্যমসহ বাইরে ছড়িয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় বেলা দুইটার পর সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। সেনাসদস্যরা নিরাপত্তাকর্মীদের ফটক খোলার অনুরোধ করলেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে সেনাসদস্যদের বহনকারী আরও কয়েকটি গাড়ি ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। প্রায় ৩০ মিনিট ফটকের বাইরে অপেক্ষার পর সেনাসদস্যদের কয়েকজন ফটক টপকে ভেতরে প্রবেশ করে নিরাপত্তাকর্মীদের খুঁজে বের করে প্রবেশপথ খোলা ও লিফট চালুর ব্যবস্থা করেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একদল সদস্য জরুরি নির্গমন পথ দিয়ে পঞ্চম তলায় কমিশন ফ্লোরে প্রবেশ করেন এবং সভাকক্ষ থেকে চেয়ারম্যানসহ তিন কমিশনারকে তাঁদের জিম্মায় নেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লাঠিপেটায় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হন বলে দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন
নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে কার্যালয় থেকে বের করার পর সংস্থাটির বিক্ষুব্ধ কর্মীরা সংবাদ সম্মেলন করেন। নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা চার দফা দাবি নিয়ে কমিশনে গিয়েছিলাম। কমিশন দাবি পূরণ করেনি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কমিশনের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আমরা কর্মবিরতি ঘোষণা করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে কমিশনের ছয়জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন, রাকিবুর রহমান, আরিফুল ইসলাম ও সুলতানা সালাউদ্দিন এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেতাব ও ইলেকট্রিশিয়ান মাহবুব। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিএসইসির ব্যাখ্যা
গতকালের ঘটনা সম্পর্কে বিএসইসির চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বিগত দিনের পুঁজিবাজারের বিভিন্ন অনিয়ম অনুসন্ধানে তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানির অনিয়ম তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই তদন্ত কমিটি এখন পর্যন্ত সাতটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাজার–সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কমিশনের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে মঙ্গলবার অবসরে পাঠানো হয়। এসব ব্যবস্থা নেওয়ায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের সভা চলাকালে সভাকক্ষে ঢুকে জোরপূর্বক অবরুদ্ধ করেন। তাঁরা চার ঘণ্টা উচ্ছৃঙ্খল ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাজার–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উদ্বেগ
পুঁজিবাজারের মতো সংবেদনশীল একটি বাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় এ ধরনের ঘটনা বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগ ও হতাশা তৈরি করেছে।
জানতে চাইলে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবিদাওয়া আদায়ে যে পথ বেছে নিয়েছেন, সেটি কোনো সরকারি কার্যালয়ে সমর্থনযোগ্য নয়। কর্মীরা কেন এ পথ বেছে নিতে বাধ্য হলেন, এ ক্ষেত্রে কারও কোনো ব্যর্থতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিবাজার–সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কর্মকর্তারাও এ ঘটনায় উদ্বেগ ও হতাশার কথা জানিয়েছেন।