সাতকানিয়ায় জামায়াতের ‘ত্যাগী কর্মীরা’ চাঁদাবাজিতে
Published: 6th, March 2025 GMT
নদী ও খাল থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন, ইটভাটা, পাহাড় কাটাসহ নানা খাতে চাঁদাবাজি চলছে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের দাপটে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে। এখন এসবের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন জামায়াতের ‘ত্যাগী কর্মীরা’।
প্রতিটি ইউনিয়নে তাদের দাপট। সাংগঠনিকভাবে পদে না থাকলেও তাদের পরিচয় দলের কর্মী। তারা নিজেদের সাবেক সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব। সাতকানিয়ার তিন ইউনিয়নে তিনটি ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ তৎপর। তাদের নেতা ছিলেন গত সোমবার গণপিটুনিতে নিহত নেজাম উদ্দিন। তবে জামায়াতে ইসলামীর দাবি, তারা কর্মীদের কোনো অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় না। পুলিশের দাবি, অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী আবুল বশর ওরফে বদাইয়া নিহত হন। বশর স্থানীয়ভাবে জামায়াতের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর ‘ডান হাত’ ছিলেন নেজাম উদ্দিন। গত সোমবার রাতে লোকজন নিয়ে অস্ত্রসহ ছনখোলা এলাকায় গেলে গণপিটুনিতে নেজামসহ দুই জন নিহত হন। আওয়ামী লীগ আমলে এওচিয়া এলাকায় একক আধিপত্য ছিল স্থানীয় চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিকের। সে সময় পালিয়ে থাকা নেজাম এলাকায় ফেরেন সরকার পতনের পর। তিনি এলাকায় জামায়াত ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। এলাকায় ফিরেই মানিক চেয়ারম্যানের বাড়িঘর, গরুর খামারসহ অর্থ-সম্পদ লুট করেন নেজাম ও তাঁর বাহিনী। তাদের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসে কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতি, আমিলাইশসহ আশপাশের এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। গত সোমবারও লুটপাটের উদ্দেশ্যে তারা ছনখোলা গ্রামে গিয়েছিলেন বলে ধারণা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এদিকে দু’জনকে পিটিয়ে মারার দুই দিন পার হলেও থানায় কেউ মামলা করেনি। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তারও করেনি পুলিশ। গত সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় মসজিদের মাইকে ডাকাত এসেছে– ঘোষণা দেওয়ায় লোকজন জড়ো হয়ে দু’জনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
আমিলাইশে নেজাম বাহিনীর প্রধান মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তাঁর দলে আছেন– মাহফুজ আলম, গিয়াস উদ্দিন, জহির আহমেদ, আব্দুল বারি পেয়ারু, মোহাম্মদ মোরশেদ, মোরশেদুল আলম ও মো.
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমিলাইশের সরোয়ার বাজারে জুয়ার আসর, মাদক বিক্রি ও কিশোর গ্যাং বন্ধ করেছি। এ জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে।’ তাঁর দাবি, তিনি শিবিরের সাথী ছিলেন। জামায়াতের রুকন প্রার্থী ছিলেন। আমিলাইশ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ছিলেন। দলের জন্য কাজ করলেও ষড়যন্ত্র করে তাঁর পদ স্থগিত করা হয়েছে। তিনি এখন ঢাকায় থাকেন।
দক্ষিণ চরতিতে নেজাম বাহিনীর প্রধান কফিল উদ্দিন। তাঁর সহযোগীরা হলেন– সাইফুল ইসলাম, আনসার, আব্দুল আলিম, দেলোয়ার, মাঈনুদ্দিন ও মো. সামির। দ্বীপ চরতির ঘাট থেকে আমিলাইশের সরোয়ার বাজার পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে তারা। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে।
নেজামের বাড়ি কাঞ্চনা ইউনিয়নের লতাপীর বাজার এলাকায়। তাঁর সহচর ছিলেন আবু ছালেক ও মোহাম্মদ এরশাদ। আবু ছালেক গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন। গত ১০ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের লোকজন নেজামকে গুলি করলে তা এরশাদের গায়ে লাগে। নেজামের মৃত্যুর পর এলাকায় তাঁর বাহিনীর প্রধান হয়ে উঠেছেন এরশাদ। তাঁর সঙ্গে রয়েছে– খোকন ওরফে হাম্বা খোকন, ইকবাল মাহমুদ, আলমগীর, আবু তাহের আদাইয়া, রিফাত, শাহাদাত, হামিদ, ফরহাদ, জাহেদ, মাবুদ, ফারুক, শেখ মোহাম্মদ, পেয়ারু ও আব্দুল খালেক। লতাপীর বাজার এলাকায় প্রতিটি বালুর ট্রাক থেকে ২০০ টাকা আদায় করে তারা। এ ছাড়া ইটভাটা মালিক, প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বাড়িঘরে লুটপাটের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে।
এসব প্রসঙ্গে জানতে জামায়াতের চট্টগ্রাম মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ তারেক হোছাইন বলেন, ‘জামায়াতের পরিচয়ে কেউ অনিয়ম করলে দ্রুত আমরা ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে সংশোধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। বারবার সতর্ক করি। কোনো অপরাধকে প্রশ্রয় দিই না।’ কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেন তিনি।
সাতকানিয়া থানার ওসি জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ অভিযোগ নিয়ে এলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিই। কিন্তু অভিযোগ না এলে আমরা কার বিরুদ্ধে কীসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেব? আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে নেজামের বিরুদ্ধে এক ব্যক্তিকে গুলি করার অভিযোগ ছিল। বিষয়টি তদন্তাধীন।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র এল ক য় ম হ ম মদ ব যবস থ ইসল ম ছনখ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আবারও বাসিন্দাদের সরিয়ে গাজা খালি করার কথা বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে গাজা উপত্যকা খালি করার কথা বলেছেন। স্থানীয় সময় সোমবার হোয়াইট হাউসে সফররত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তবে ফিলিস্তিনিদের কোন দেশে সরিয়ে নিতে চান সে বিষয়ে কিছু বলেননি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে গাজাকে আবাসন নির্মাণের জন্য দারুণ স্থান হিসেবে বর্ণনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, গাজা উপত্যকার ‘নিয়ন্ত্রণ ও মালিকানার’ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি শান্তি বাহিনী থাকলে ভালো হবে।
আরও পড়ুনবাসিন্দাদের অন্য দেশে পাঠিয়ে গাজা খালি করতে চান ট্রাম্প২৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজায় একটি মুক্তাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে চান ট্রাম্প। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ গাজায় বসবাস করতে চায় না।
অপরদিকে গাজা নিয়ে ট্রাম্পের সুরে কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধের পর গাজা পুনর্নির্মাণ করতে অনেক সময় লাগবে। গাজা নিয়ে ট্রাম্পের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁরা সেটি নিয়ে কাজ করছেন।
আরও পড়ুন১৫ চিকিৎসাকর্মী হত্যার ভিডিও প্রকাশ, কী আছে ভিডিওতে০৬ এপ্রিল ২০২৫গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর গাজার ফিলিস্তিনিদের অন্য দেশে সরিয়ে নিয়ে গাজা উপত্যকা খালি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এ জন্য গাজার বাসিন্দাদের আশ্রয় দিতে মিসর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তবে ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে গাজার সশস্ত্র প্রতিরোধ সংগঠন প্যালেস্টাইনিয়ান ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে)। গাজার শাসকগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে মিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধ করে আসা এই সংগঠনটি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের নিজ ভূখণ্ড ছেড়ে যেতে বাধ্য করতে ট্রাম্পের এমন মন্তব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ উসকে দেওয়ার শামিল।