দখলবাজরাই ভোলাগঞ্জ বন্দর প্রকল্পে বাধা
Published: 6th, March 2025 GMT
ধলাই নদীতীরে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে বছরের পর বছর পাথর ডাম্পিং ও ক্রাশিং করে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। সরকারি জায়গা দখল করে তারা সেখানে গড়ে তোলেন ক্রাশিং মেশিন ও স্থাপনা। হঠাৎ ঘটে ছন্দপতন। ২০১৯ সালে ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনকে দেশের ২৪তম স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করার পর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। অধিগ্রহণ শেষে গত বছর কাজও শুরু করে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ। তবে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের নির্মাণ সামগ্রী লুটপাট হয়। ভেঙে ফেলা হয় পাশের পর্যটনের জায়গার সীমানা প্রাচীর।
সম্প্রতি ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের কাজ শুরু হলেও পর্যটনের জায়গাটি থেকে গেছে উন্মুক্ত। বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়ার পরও কাজ যখন এগিয়ে চলছে, তখন বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে বিরোধিতা করে মাঠে নামেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের কয়েক সদস্য। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে তারা স্থলবন্দরের অবকাঠামো বন্ধসহ শ্রমিক-ব্যবসায়ীর ক্ষতিপূরণ দাবি করে জানান, বাংলাদেশ অংশে স্থলবন্দর হলেও ভারত অংশে স্থাপনা নেই। একপেশে বন্দর হতে পারে না। লুটপাটের জন্যই আওয়ামী লীগ সরকার ১৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়।
তথ্য বলছে, স্থলবন্দর ঘোষণার আগে শুল্ক স্টেশন ও পর্যটনের জায়গা উন্মুক্ত থাকা অবস্থায় যারা জায়গা দখল করে ব্যবসা করে আসছিলেন, উচ্ছেদ হওয়ার পর তারাই এখন বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। জায়গা থেকে উচ্ছেদ ও অধিগ্রহণের পর সেসব ব্যবসায়ী ও শ্রমিক-মালিকরা এখন চাচ্ছেন না স্থলবন্দর হোক। তারা শুল্ক স্টেশন হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন ভোলাগঞ্জকে। যদিও বন্দর নির্মাণকাজে সরাসরি কোনো বাধা তারা দিচ্ছেন না। এর নেপথ্যে রয়েছেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপ ও উপজেলা বিএনপি সভাপতি মো.
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের জমিসহ ১১২ একর সরকারি জায়গা সেখানে ছিল। বন্দর নির্মাণের কাজ শুরুর আগে সেই জায়গা বিএনপি নেতা শাহাব উদ্দিনসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীর দখলে ছিল। তারা পাথর ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়ে আসছিলেন। উচ্ছেদের পর সেখানকার ৫২ একর জায়গাজুড়ে স্থলবন্দর নির্মাণে কাজ শুরু হলে তারা সেই আয় থেকে বঞ্চিত হন। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন স্থলবন্দরের নির্মাণসামগ্রী লুটসহ রাস্তার অন্য পাশে পর্যটনের জায়গার সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়। অভিযোগ ওঠে, লুটপাট-ভাঙচুরের সঙ্গে আগে সুবিধা পাওয়া পাথর ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক নেতাদের হাত ছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভোলাগঞ্জ-১০ নম্বর ঘাটের এক পর্যটন ব্যবসায়ী জানান, সরকার পতনের পর ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের জায়গা দখল না করতে পারলেও পাশের পর্যটন কেন্দ্রের ৫০-৬০ একর জায়গা দখল করে পাথর ব্যবসা করা হচ্ছে, যাদের দখলে আগেও ওই জায়গা ছিল। তিনি জানান, অতীতে যারা সরকারি জায়গা দখল করে ব্যবসা ও ভাড়া খেয়েছেন, তারাই এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১৭ ডিসেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও ৫ আগস্ট স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানা স্থাপনার ক্ষতিসাধন ও লুটপাটকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি।
অভিযোগ বিষয়ে বিএনপি সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, সেখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভ নেই। শুল্ক স্টেশন দিয়ে যে কাজ পরিচালনা করা যেত, সেখানে একপেশে স্থলবন্দর করে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি করা হচ্ছে। আমরা সে বিষয়টি তুলে ধরেছি। জায়গা দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু আমার নয়; অনেকে জায়গা সেখানে ছিল। সরকারি জায়গাও ছিল। উচ্ছেদ করে স্থলবন্দর করা হচ্ছে। আমরা বাধা দিচ্ছি না; দাবি করেছি। মানা-না মানা সরকারের বিষয়।
এ ব্যাপারে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক সারোয়ার আলম বলেন, এখন চুনাপাথর আমদানি হলেও ভবিষ্যতে রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কাজ চলছে; নির্মাণকাজ বন্ধের সুযোগ নেই। কাজ শেষ হলে শুধু রাজস্ব বাড়বে না; এলাকার পরিবেশও বদলে যাবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র প রকল প সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ঈদের ছুটি শেষে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি শুরু
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে টানা ৮ দিন ছুটি শেষে বেনাপোল স্থলবন্দরে আজ থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়েছে।
শনিবার বেলা পৌনে ১১টায় আমদানি-রপ্তানি শুরু হয়। এদিন দুপুর ১২টার সময় ভারত থেকে ২৪ ট্রাক পণ্য আমদানি ও বাংলাদেশি ১৩ ট্রাকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
বাংলাদেশের সব স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি আজ বন্ধ থাকলেও বেনাপোল বন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে অনেক বেশি ফল ও পচনশীল পণ্য আমদানি হবে বলে ধারণা করছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুজিবর রহমান বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে টানা ৮ দিন আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বন্ধ থাকার পর আজ শনিবার সকাল থেকে বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। আজ ৫ এপ্রিল শনিবার সকাল থেকে বেনাপোল কাস্টমস কার্গো শাখায় কার্পাস ও মেনিফেস্ট ইস্যুর কাজ শুরু হয়েছে। কাস্টমস ও বন্দরের কর্মকর্তা কর্মকারী এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফরা অফিসে যোগদান করেছেন।
ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়াডিং এজেন্টস স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বাংলাদেশে ছুটি থাকায় রপ্তানির উদ্দেশ্যে আসা ৪৫০টি ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল পার্কিং এ দাঁড়িয়ে আছে। বনগাঁসহ আশপাশের বিভিন্ন পার্কিংয়ে ও অনেক ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাক ড্যামারেজ না দেওয়ার শর্তে কিছু ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী বনগাঁ ও আশপাশের এলাকায় মাল গুদামে আনলোড করেছে, তারা এসব মাল লোড দেওয়া শুরু করেছে। আগামীকাল রোববার থেকে রপ্তানির ব্যাপক চাপ থাকবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) রাশেদুল সজিব জানান, টানা ৮ দিন ঈদের ছুটি শেষে আজ শনিবার সকাল থেকে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দরে ৫০টি পণ্য বোঝাই বাংলাদেশি ট্রাক এবং বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় পেট্রাপোল বন্দরে ৪৫০টি পণ্যবোঝাই ভারতীয় ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ঈদের ছুটির মধ্যে বেনাপোল বন্দরে আমদানি করা পণ্য সুরক্ষিত আছে।