Samakal:
2025-03-06@09:16:15 GMT

ছিল ফসলি জমি, হয়ে গেল ডোবা

Published: 6th, March 2025 GMT

ছিল ফসলি জমি, হয়ে গেল ডোবা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের তিন ফসলি জমির মাটি জোর করে কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে একটি চক্রের বিরুদ্ধে। এতে জমিগুলো ডোবায় পরিণত হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামের আব্দুল লতিফের ছেলে রিপন মিয়া এ চক্রের মূল হোতা। তারা কান্দাপাড়া এলাকায় ফসলি জমির ৩০-৩৫ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে এসব জমিতে ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। পাশাপাশি জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ মাটি কাটায় স্থানীয় পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। মাটি কাটা বন্ধে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে জানান স্থানীয়রা। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ, জামপুর ইউনিয়নের পেরাব, আমবাগ, কাহেনা, শিংলাবো, কান্দাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তিন ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে। রিপন মিয়ার লোকজন নামমাত্র দাম দিয়ে কিছুসংখ্যক জমির মালিকের জমি কিনে বাকি জমির মাটি জোর করে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই এসব ফসলি জমির মাটি ভেকু দিয়ে প্রায় ৩০-৩৫ ফুট গভীর গর্ত করে কেটে নিয়ে গেলেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। একটি জমির মাটি গভীর করে ভেকু দিয়ে কেটে  নেওয়ার পর পার্শ্ববর্তী জমি এমনিতেই ভেঙে গিয়ে গর্তে পরিণত হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটার ফলে জমিগুলোতে মাছ চাষও করা যাচ্ছে না। দিন দিন ফসলি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে ডোবা, পুকুর বা জলাশয়ে।

এলাকাবাসী জানান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর আত্মীয় পরিচয়ে আওয়ামী লীগের শাসন আমলে লুটপাটে জড়িত ছিলেন রিপন। তাঁর নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রাতের আঁধারে এশিয়ান হাইওয়ে নির্মাণাধীন সড়কের বালু লুট করারও অভিযোগ রয়েছে। 

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, এক সময় জমিগুলোতে তিন ফসল ফলানো হতো। এখন ফসল ফলানো দূরের কথা, মাছ চাষ করাও সম্ভব হয় না। গভীরভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় জমির শ্রেণি পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। 

গত মঙ্গলবার দুপুরে কান্দাপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিটিভি নামের একটি ইটভাটার পূর্ব পাশে ৮-১০টি কৃষিজমির মাটি ভেকুর মাধ্যমে গর্ত করে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। ইটভাটার পাশেই মাটির হিসাব রাখার জন্য তিন-চারজন লোক বসা ছিল। জমির মাটি গভীরভাবে কেটে নেওয়ায় পাশের জমি ভেঙে যাচ্ছে। ফলে কৃষক ওই জমির মাটি এ চক্রের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।  এ ছাড়া এই এলাকার এইচআরবি ইটভাটাসহ রূপগঞ্জের কয়েকটি ইটভাটায় মাটি বিক্রি করা হয় বলে জানা যায়।  ঘটনাস্থলে সাংবাদিক যাওয়ার খবরে ভেকু ফেলে ডাম্প ট্রাক নিয়ে সটকে পড়ে মাটিখেকোরা। 

কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল হাশেম জানান, কৃষকদের ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ইচ্ছে না থাকলেও ফসল ফলাতে না পারায় বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হয়। মাটি বিক্রি না করলে জোর করে মাটি কেটে নেওয়া হয়। মাটি কাটা বন্ধে একাধিকবার মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দিয়েও প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। 

অভিযুক্ত রিপন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নিজের প্রয়োজনে তাঁর জমির মাটি কেটে বিক্রি করেছেন। এখানে কোনো ফসলি জমি নেই। অনেকেই জমির মাটি কেটে বিক্রি করেন। জমির শ্রেণি পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেগুফতা মেহনাজ বলেন, কৃষিজমির মাটি কাটার বিষয়টি তিনি জানেন না। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কর্মীরা তথ্য দিচ্ছেন। তহসিলদার পাঠিয়ে মাটি কাটা বন্ধ করা হবে। 

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, কেউ তাদের নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করলে তাঁকে আইনের আওতায় আনা হবে। মাটি কাটা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সোনারগাঁয়ের ইউএনও ফারজানা রহমান বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেউ মাটি কেটে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ইটভ ট ন ফসল

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীর শ্লিলতাহানির মামলা: সেই যুবকের জামিন

শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থীর শ্লীলতাহানি মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সহকারী বুক বাইন্ডার মোস্তফা আসিফ অর্নবকে জামিন দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুবের আদালত শুনানি শেষে এক হাজার টাকা মুচলেকায় এই জামিনের আদেশ দেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান তাকে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অর্নবের পক্ষে তার আইনজীবী আজমত হোসাইন জামিন চেয়ে আবেদন করেন।

শুনানিতে তিনি বলেন, “আসামি ঘটনার সাথে জড়িত না। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি সম্পূন্নভাবে নির্দোষ, নিরাপরাধ। তার জামিন মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।”

শুনানি শেষে আদালত জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন।

শাহবাগ থানার (নারী ও শিশু) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ জামিনের বিষয়ে রাইজিংবিডি ডটকমকে তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, “বাদী মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেছে। আসামি পক্ষ জামিন আবেদন করেন। পরে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।”

শ্লীলতাহানির ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় মামলা করেন।

মামলায় অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী ৫ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে শাহবাগ থানা-সংলগ্ন জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বন্ধুর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাচ্ছিলেন।  রাজু ভাস্কর্যের সামনে পৌঁছালে মোস্তফা আসিফ অর্নব ওই শিক্ষার্থীর সামনে আসেন। পর্দা করে নাই কেন, বলে প্রশ্ন করেন।  ওড়না ঠিক নাই কেন বলাসহ আরো কুরুচিপূণ কথা বলে তাকে যৌনপীড়ন করেন। ওই শিক্ষার্থী প্রক্টরকে মোবাইলে কল দিতে চাইলে অর্নব দৌড়ে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে বিষয়টি তিনি তার সহপাঠীদের অবহিত করেন এবং ফেসবুকে পোস্ট করেন।

পোস্টে একজনের ছবি যোগ করে তিনি লেখেন, “এই লোকটা আজকে আমাকে শাহবাগ থেকে আসার পথে হ্যারাস করেছে। সে আমাকে হুট করে রাস্তায় দাঁড় করায় দিয়ে বলতেছে আমার ড্রেস ঠিক নাই ইত্যাদি... এরপর আমি প্রক্টরকে কল দিতে চাইলে সে দৌড় দিয়ে চলে যায়।”

ঢাকা/মামুন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ