দেশে উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশ আসে যে জেলা থেকে
Published: 6th, March 2025 GMT
চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায়, সয়াবিনখেত। মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে এর সবুজ পাতা। কৃষকেরা ব্যস্ত রয়েছেন খেত পরিচর্যায়। সম্প্রতি এই দৃশ্য দেখা গেল লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার দক্ষিণ চর বংশী ইউনিয়নের চর কাছিয়া গ্রামে। ইউনিয়নটির প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক করেছেন সয়াবিনের আবাদ।
কেবল এ ইউনিয়ন নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার অনেক এলাকায় প্রায় দুই যুগ ধরে করা হচ্ছে সয়াবিনের চাষ। কৃষি কর্মকর্তারা জানান, দেশে মোট উৎপাদিত সয়াবিনের ৮০ শতাংশই মিলছে লক্ষ্মীপুর থেকে। আগে আমন মৌসুম শেষে অনাবাদি পড়ে থাকত ফসলি জমি। এসব জমিতেই সয়াবিনের আবাদ করা হচ্ছে। কৃষকেরা জানান, আগামী মে মাসের দিকে ফলন পাওয়া যাবে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে এর চেয়ে আরও ১ হাজার ৬৬০ হেক্টর বেশি জমিতে সয়াবিনের আবাদ করা হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরে জেলায় অন্তত ৮৪ হাজার মেট্রিক টন সয়াবিন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে, যার বাজারমূল্য ৩২০–৩৫০ কোটি টাকা। দেশের খ্যাতনামা ভোজ্যতেল ও পোলট্রি খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সয়াবিন সংগ্রহ করেন। জেলার কমলনগর, রামগতি, রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সয়াবিন আবাদ হয়।
রায়পুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সয়াবিন চাষ হয়। বিশেষ করে মেঘনা নদীর জেগে ওঠা চরাঞ্চল চরইন্দুরিয়া, চরজালিয়া, চরঘাসিয়া, চরকাছিয়া ও কানিবগা এলাকায় কয়েক হাজার একর জমিতে সয়াবিনের চাষ হচ্ছে। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, হাজীপাড়সহ আটটি ইউনিয়নে চাষ হয় সয়াবিনের। রামগতি ও কমলনগর উপজেলায়ও অনেক এলাকায় সয়াবিনের আবাদ করা হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এ অঞ্চলের উর্বর মাটি সয়াবিন চাষের জন্য উপযোগী। এখানকার মাটি দোআঁশজাতীয়। এ মাটিতে একবার লাঙল চালালেই তা সয়াবিন চাষের উপযোগী হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে প্রতিবছর ফলন লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আবাদের উপযুক্ত সময়। শিমজাতীয় গাছ হওয়ায় সয়াবিনখেতে খুব একটা সার দিতে হয় না। খেতে নিড়ানি দিয়ে আগাছাও পরিষ্কার করা লাগে না। গাছ বড় হলে এক-দুবার কীটনাশক দিতে হয়। চারা গজানোর ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে আসে।
কম পুঁজিতে অধিক লাভরায়পুরের চর কাছিয়ার কৃষক ফারুক গাজী চলতি বছর প্রায় দেড় একর জমিতে সয়াবিন চাষ করেছেন। গত বছর করেছিলেন এক একর জমিতে। তিনি জানান, ফসল ঘরে আনা পর্যন্ত তাঁর মোট খরচ হবে ২৫ হাজার টাকার মতো। উৎপাদন স্বাভাবিক হলে ৭০ মণ সয়াবিন পাওয়া যাবে। প্রতি মণ ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করলেও প্রায় ১ লাখ টাকা আয় হবে তাঁর।
কৃষকেরা জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদের পদ্ধতি সহজ। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় ধানের চেয়েও বেশি। যে কারণে সয়াবিন চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
জমির মালিক ও বর্গাচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে চরাঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে অনাবাদি জমি পড়ে থাকতে দেখা যায় না। পরিত্যক্ত জমিতেও সয়াবিন চাষে সাফল্য মিলছে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, কম পুঁজিতে লাভ বেশি হওয়ায় এলাকায় সয়াবিনের চাষ দিন দিন বাড়ছে। কৃষকদেরও সয়াবিন চাষের মধ্য দিয়ে ভাগ্য বদল হচ্ছে।
খেতের পরির্চযা করছেন এক কৃষক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপজ ল র এল ক য় উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ভুয়া আধার কার্ড তৈরির অভিযোগে বাংলাদেশিসহ গ্রেপ্তার ৩
বাংলাদেশি এক নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া এবং ভুয়া প্যান কার্ড ও আধার কার্ড বানিয়ে দেওয়ার অভিযোগে ওই বাংলাদেশি নাগরিকসহ আরো দুই ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি থানার পুলিশ।
পুলিশের অভিযোগ, ওই দুই ভারতীয় বাংলাদেশের নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া ও নথি করে দেওয়ার কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে হিলির ডিএসপি হেডকোয়ার্টার বিক্রম প্রসাদ জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে একটি অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশের নাগরিক শ্যাম কুমার সাহাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।বাংলাদেশের নওগাঁ এলাকার বাসিন্দা শ্যাম কুমার সাহা ৪ বছর আগে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এরপর ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য অর্থের বিনিময়ে জোগাড় করেন প্যান কার্ড, আধার কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট।
আরো পড়ুন:
লন্ডনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের ওপর হামলার চেষ্টা
১৪ কেজি সোনাসহ অভিনেত্রী গ্রেপ্তার: মুখ খুললেন পুলিশ অফিসার বাবা
পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশি ওই নাগরিক জানিয়েছেন অবৈধ ভারতীয় নথি সংগ্রহে তাকে সহায়তা করেন অলোক পাল নামে এক অস্থায়ী ব্যাংক কর্মী। এছাড়া ভারতে আসার পর তাকে অর্থের বিনিময়ে প্রথম আশ্রয় দেন দেবরা এলাকার অমৃত দাস। এই দুজনকেই বাংলাদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে নথি সংগ্রহে সহযোগিতা ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, গ্রেপ্তার তিনজনকে আগামীকাল বালুরঘাট মহাকুমা আদালতে তোলা হবে।
ঢাকা/ফিরোজ