সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার আওতায় যে কেউ যেকোনো পেনশন স্কিমের (কর্মসূচি) গ্রাহক হতে পারেন। চালু হওয়ার দিন ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট থেকে এ সুযোগ সবার জন্যই উন্মুক্ত। পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। যদিও প্রবাসী বাংলাদেশি ও পোশাক খাতের কর্মীদের জন্য ৪০ বছর বয়স পার হলেই পেনশন দেওয়া নিয়ে আলোচনা চলছে।

চাঁদাদাতা মারা গেলে তাঁর নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকত, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন।

যেভাবে নিবন্ধন নেবেন

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেই আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথমেই একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে; যেখানে লেখা থাকবে—‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’

এই পাতার নিচের দিকে ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি—এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।

ক্যাপচা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই-মেইলে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরের ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এনআইডি নম্বরের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে)।

তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, দিনমজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ আছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’-এর পাতায় যেতে হবে।

স্কিম তথ্যের পাতা এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক—এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।

ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলায়) ও ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজিতে) লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে।

নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এখানে একাধিক নমিনিও যুক্ত করা যাবে। এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।

এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরুতে গিয়ে তথ্যের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় চাইলে সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করতে পারবেন আবেদনকারী।

মনে রাখবেন, নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে সব পাতার কাজ শেষ না করে পেছনে (ব্যাক) যাওয়া যাবে না। পেছনে গেলে সব প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে; নতুন করে আর লিখতে হবে না।

চারটি স্কিম

সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আপাতত চার ধরনের স্কিম রয়েছে। এর মধ্যে প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি স্কিম, অনানুষ্ঠানিক খাত অর্থাৎ স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম আর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রয়েছে সমতা স্কিম।

দেড় বছরে পেনশনের চার কর্মসূচিতে মোট গ্রাহক হয়েছেন ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩১ জন। আর চাঁদা জমা পড়েছে ১৬০ কোটি টাকা। এসব টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বশাসিত সংস্থার নতুন কর্মীদের জন্য প্রত্যয় এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করা নতুন কর্মীদের জন্য সেবক নামক দুটি কর্মসূচি চালুর আয়োজন করেও পরে বাদ দেওয়া হয়।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান প্রথম আলোকে বলেন, দেশের মানুষের ভবিষ্যৎকে সুরক্ষা দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। বিদ্যমান স্কিমগুলোকে আরও গ্রাহকবান্ধব করার পাশাপাশি নতুন নতুন স্কিম চালু করার উদ্যোগও রয়েছে সরকারের।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প নশন স ক ম ন প নশন স দ র জন য প রব স ধরন র র ধরন ন করত বছর ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘এনআইডি নিবন্ধন আইন রহিতকরণ অধ্যাদেশ নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করবে’

ফরিদপুরে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিল করার দাবিতে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার জেলা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বৃহত্তর পাঁচ জেলায় কর্মরত নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তারা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ ২০২৫ প্রণয়ন ও কার্যকর হলে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথা ভোটার তালিকা প্রণয়নে নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা খর্ব হবে। এছাড়া ভোটার তালিকা প্রণয়নের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে সিভিল রেজিস্ট্রেশনের দ্বারস্থ হতে হবে; যা সংবিধানে প্রদত্ত নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন অস্তিত্বের পরিপন্থী।

তারা বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সিভিল রেজিস্ট্রেশনে ন্যস্ত হলে ভোটার তালিকার তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের অমিলের কারণে ভোটপ্রদান বাধাগ্রস্ত হবে এবং নির্বাচন পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটবে। এছাড়াও তথ্যভাণ্ডারের শুদ্ধতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

বক্তারা আরও বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র সিভিল রেজিস্ট্রেশনের কাছে ন্যস্ত করা হলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ বিঘ্ন ঘটবে আগামী সংসদ নির্বাচনেও।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম, জেলা নির্বাচন অফিসার তারেক আহমেদ, নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, মো. মিজানুর রহমান, ফরিদ আহমেদ, মাহফুজ আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এনআইডির তথ্য বিক্রির মামলায় সাবেক সিনিয়র সচিব জিয়াউল গ্রেপ্তার
  • সাবেক সিনিয়র সচিব জিয়াউল আলমকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার
  • ‘এনআইডি নিবন্ধন আইন রহিতকরণ অধ্যাদেশ নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করবে’
  • ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে নিয়ে প্রস্তুতি চলছে: সিইসি