প্রথমে গত বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত, পরে সেটি বাড়িয়ে করা হয় ৩১ ডিসেম্বর; সর্বশেষ সেই সময়সীমাও বাড়িয়ে করা হয় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি। সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও, তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তৃতীয় দফা সময়সীমার ১৫ দিন পার হওয়ার পর জানা যাচ্ছে, মাত্র অর্ধেক সংখ্যক কর্মচারী তাদের সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন। সারাদেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছেন। এর মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন আট লাখের মতো।

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমার বিষয়টি দেখভাল করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগ। শৃঙ্খলা-৪ শাখা থেকে বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। কতজন সম্পদের হিসাব জমা দিয়েছেন– জানতে চাইলে অনুবিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক সমকালকে বলেন, অনেকেই তাদের সম্পদ বিবরণী আমাদের কাছে জমা দিয়েছেন। আমরা এখন তা বাছাই করছি। এটি শেষ হলে বলতে পারব, কী সংখ্যক বিবরণী জমা পড়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে বিবরণী জমা দেওয়ার সংখ্যা কম। সংশ্লিষ্ট ক্যাডারগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় এখনও বিবরণী জমা নিচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা-৪ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ 

নূর এ আলম সমকালকে বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ সময় পার হলেও আমরা এখনও সম্পদ বিবরণী নিচ্ছি। তিনি বলেন, প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং এই মন্ত্রণালয়ের অধীন কর্মচারীরা আমাদের কাছে সম্পদ বিবরণী জমা দেবেন। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা তাদের ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়গুলোতে জমা দিচ্ছেন। 

‘সব সম্পদ বিবরণী একসঙ্গে করা হবে কিনা, কেউ অসত্য তথ্য দিয়েছেন কিনা, যাচাই কীভাবে হবে?’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জমা নেওয়ার পর সেগুলো কী করা হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। 

নতুন করে আর বিবরণী জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হবে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিদ্যমান সরকারী চাকরি আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এর পর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদ কমা বা বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম আছে। কিন্তু এই নিয়ম মানা হয় না বললেই চলে। এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও অগ্রগতি হয়নি।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ২৬ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সব উপদেষ্টা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে সব সরকারি কর্মচারীর ক্ষেত্রে তা নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে।

গত জুলাই মাসে হাইকোর্ট সরকারি কর্মচারী ও তাদের পরিবারের সম্পদ বিবরণীর ঘোষণা এবং সময়ে সময়ে তা দাখিল-সংক্রান্ত বিধি কঠোরভাবে মানতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে অগ্রগতি জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়।

অন্যদিকে গত বছরের ১৪ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করার পর বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দেশে-বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচার বিভাগীয় সব কর্মকর্তা তাদের সম্পদের হিসাব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জমা দিয়েছেন। সরকারি কর্মচারীদের সবাই এখনও তা দিতে পারেননি। 

গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও আয়-ব্যয়ের স্বচ্ছতা আনতে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় সরকার। সম্পদ বিবরণী জমা না দিলে এবং তথ্য গোপন করলে দুই ধরনের দণ্ড হবে– লঘুদণ্ড ও গুরুদণ্ড। লঘুদণ্ড হচ্ছে তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত রাখা; কর্তব্যে অবহেলা বা সরকারি আদেশ অমান্য করার কারণে সরকারের আর্থিক ক্ষতির সম্পূর্ণ অংশ বা অংশবিশেষ বেতন বা আনুতোষিক থেকে আদায় করা; বেতন গ্রেডের নিম্নতর ধাপে অবনমিতকরণ। আর গুরুদণ্ড হলো– নিম্নপদ বা নিম্ন বেতন গ্রেডে অবনমিত করা, বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ, বরখাস্ত করা।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, তিন দফা সময় দেওয়ার পরও এখনও অর্ধেক লোক হিসাব দেয়নি– এ চিত্র হতাশার। সরকার চেয়েছে, তাই হিসাব দিতেই হবে। কেউ না দিলে তাকে বাধ্য করতে হবে। হিসাব না দেওয়া চাকরিবিধি ও আচরণ বিধিমালার লঙ্ঘন। কেউ না দিলে বুঝতে হবে, কোনো ভেজাল আছে।

তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা থেকে জানি– মূলত দুটি কারণে হিসাব দিতে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনীহা থাকে। এক. আস্থাহীনতা। বৈধ আয়ের হিসাব দেওয়ার পরও অকারণে টানাহেঁচড়া করা হয় কিনা এবং দুই. আয়ের মধ্যে ‘ঘাপলা’ থাকা। তাই হিসাব দিতে ভয়। এই শ্রেণির কর্মচারীদের ধরতেই মূলত সরকারের এই উদ্যোগ।

একেএম আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, হিসাব নেওয়ার পর নিরপেক্ষভাবে তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। তাহলে সবাই হিসাব দিতে আস্থা পাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক য ড র র কর মকর ত র ব বরণ সরক র র গত বছর স থ বর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না: প্রধান উপদেষ্টা

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না: প্রধান উপদেষ্টা
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস
  • অন্তর্বর্তী সরকারকে মানুষ এখনও ভালো সমাধান মনে করছে: আল জাজিরাকে
  • ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারত ছাড়লেন ২৭২ পাকিস্তানি, আজ শেষ দিনে ছাড়বেন আরও কয়েক শ
  • চিকিৎসাসেবা ও শিক্ষা আন্তর্জাতিক মানের করতে হবে
  • মালদ্বীপে বিদেশি কর্মীরা চলতি মাসের মধ্যে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন না করলে বহিষ্কার
  • ফাইনালে অনিশ্চিত এমবাপ্পে, বড় ধাক্কা রিয়ালের
  • কুয়েটের অচলাবস্থা কাটেনি