বাজারে চালের দাম চড়া। ভালো মানের এক কেজি মোটা চাল কিনতে লাগছে ৫৫ টাকা। সরু চালের দাম অনেক বেশি। এ চড়া দামের মধ্যেই সরকারিভাবে চাল বিতরণ কমেছে। কমেছে গমের বিতরণও।

বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা ও গরিব মানুষকে সহায়তার ক্ষেত্রে সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কম।

পরিমাণের দিক দিয়ে চাল ও গমের বিতরণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চালের বিতরণ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন। অন্যদিকে গম ও আটার বিতরণ কমেছে প্রায় ৩৮ হাজার টন।

বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দরিদ্র মানুষ, খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী ও দুস্থ নারীদের সহায়তা এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো খাতগুলোতে খাদ্য বিতরণ কমে গেছে।

জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারি দপ্তরগুলো খাদ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে চাল নিয়ে বিতরণ করা কমিয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগ পলাতক। ফলে তাদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমে গেছে। সব মিলিয়ে খাদ্য বিতরণ কমেছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী মাস থেকে দেড় লাখ টন চাল বিতরণ শুরু হবে। তখন বিতরণের পরিমাণ বাড়বে।

অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বিতরণ কমে যাওয়ার কারণ শুধু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নয়। সরকারিভাবে চালের মজুতও কম। এ কারণে খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটার বিতরণ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ওএমএস কর্মসূচি খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালনা করে। যেসব জায়গায় ওএমএসের ট্রাক বা দোকান থাকে, সেখানে দীর্ঘ লাইন ধরে মানুষ চাল ও আটা কেনেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মানুষ যে সংকটে আছেন, দীর্ঘ সারি তারই উদাহরণ। এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। কাজের সুযোগ কম। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি চড়া। এ সময়ে খাদ্য বিতরণ বাড়ানো দরকার। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন।

পরিমাণের দিক দিয়ে চাল ও গমের বিতরণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চালের বিতরণ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন। অন্যদিকে গম ও আটার বিতরণ কমেছে প্রায় ৩৮ হাজার টন।বিতরণ কমেছে কোন খাতে

মোটাদাগে সরকারি খাদ্য বিতরণের খাত দুটি—আর্থিক ও ত্রাণমূলক। আর্থিক খাত অর্থাৎ স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিক্রির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রেশন, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ইত্যাদি। অন্যদিকে ত্রাণমূলক খাতের মধ্যে রয়েছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ), জেনারেল রিলিফ (জিআর) ইত্যাদি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের হতদরিদ্র, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৭৯ টন খাদ্য। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টন। ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য ভিজিএফের আওতায় বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের অর্ধেকের একটু বেশি। ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) /ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।

বেড়েছে জেনারেল রিলিফ বা জিআরের আওতায় বিতরণ। আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ হাজার ৩০৩ টন বেশি। জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি) জিআরের অধীন চাল ও গম বিতরণ করতে পারেন।

ওএমএসের আওতায় খাদ্য বিতরণ কিছুটা কমেছে। আট মাসে এ কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার টন কম। ওএমএসে চাল বিক্রি বেশি কমেছে। আট মাসে বিক্রি করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ হাজার টন কম। গম ও আটা বিতরণ বেড়েছে। যদিও আটার বাজার অনেক দিন ধরে স্থিতিশীল। বিশ্ববাজারে গম সহজলভ্য।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৭৯ টন খাদ্য। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টন। ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য ভিজিএফের আওতায় বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের অর্ধেকের একটু বেশি।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ আগের মতোই আছে, পরিমাণ ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন চাল। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে কার্ডধারীদের বছরে পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি কম দামে খাবার পাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায় ওএমএসের দোকান অথবা ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখে।

রাজধানীর বাংলামোটরে ওএমএসের ট্রাকে চাল ও আটা বিক্রি করা হয় দুই দিন পরপর। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষের সারি। সেখানে দাঁড়ানো নারী ঝর্ণা বেগম (৪০) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থ। নিজে মানুষের বাসায় কাজ করে পাঁচজনের সংসার চালান। ওএমএসের ট্রাকে কম দামে পাওয়া যায় বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চাল কেনেন তিনি।

ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘অনেক লম্বা লাইন থাকে। মাঝেমধে৵ চাইল না পাইয়া চইলা যাইতে অয়।’

সারিতে দাঁড়ানো আরেক নারী আলেয়া বেগম (৪২) বলেন, ‘আগে আধা ঘণ্টা দাঁড়াইলে হইত। এখন অপেক্ষা করন লাগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা। আর সব সময় চাউল পাওয়াও যায় না। ৬০-৭০ টাকা দিয়ে চাল কিনে খাইতে হইলে বাঁচুম না। কষ্ট হলেও এইখানে আসি চাউল নিতে।’

ওএমএসে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করে সরকার।

অনেক লম্বা লাইন থাকে। মাঝেমধে৵ চাইল না পাইয়া চইলা যাইতে অয়।ঝর্ণা বেগমবাজারে চালের দাম কত

বাজারে ভালো মানের মোটা চালের কেজিপ্রতি দর ৫৫ টাকা। কিছু বাজারে মোটা চাল পাওয়া যায় প্রতি কেজি ৫২ টাকায়, যা সাধারণ মানের। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, মোটা চালের কেজিপ্রতি দর এখন ৫০-৫৮ টাকা, যা এক মাসে ২ টাকা কমেছে। এক বছর আগে মোটা চালের দর ছিল কেজিপ্রতি ৪৮-৫০ টাকা। ফলে এখনকার দর ১০ শতাংশ বেশি।

এক মাস বা এক বছরের চিত্র দেখে চালের বাজারের পরিস্থিতি বোঝা যায় না। কারণ, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে চালের দাম ধাপে ধাপে বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে—ওই বছর জানুয়ারি মাসে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা। তখন মাঝারি চাল ৪০-৫০ ও সরু চাল প্রতি কেজি ৪৫-৬০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন মাঝারি চালের কেজি ৫৮-৬৫ টাকা, সরু চালের কেজি ৭২-৮৫ টাকা।

কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি দোকান জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দোকানে মোটা গুটিচাল প্রতি কেজি ৫১ টাকায় এবং স্বর্ণা ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কিছু বাড়ে, কিছু কমে—এভাবেই চলছে।

২০২৪ সালে বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট বোরো সংগ্রহের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। বাড়ানো হলে দুই লাখ টন চাল বাড়তি সংগ্রহ করা সম্ভব হতো।খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগ) মো.

মাহবুবুর রহমান মজুত কমেছে

সরকারের গুদামে থাকা খাদ্যের মজুত এখন গত বছরের চেয়ে কম। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ সময়ে চাল ও গমের মজুত ছিল ১৬ লাখ ১০ হাজার টনের কিছু বেশি। এখন তা প্রায় ৯৪ হাজার টন কমে ১৫ লাখ ১৭ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। কমেছে মূলত চালের মজুত। গত বছর এ সময়ে চালের মজুত ছিল ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টনের কিছু বেশি। এখন রয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগ) মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৪ সালে বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট বোরো সংগ্রহের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। বাড়ানো হলে দুই লাখ টন চাল বাড়তি সংগ্রহ করা সম্ভব হতো।

শুধু গত বোরো নয়, আমনেও সংগ্রহ কম হয়েছে। এ মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ টন ধান, সাড়ে পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল কেনার সংগ্রহের ঠিক করা হয়েছিল। ২ মার্চ পর্যন্ত হিসাবে সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার টন, যা লক্ষ্যের ৭৯ শতাংশ। তবে ২ মার্চ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৫১১ টন, যা লক্ষ্যের ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ধান ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহের সময় শেষ। আতপ চাল ১৫ মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো যায়নি। গত আগস্টে বন্যায় আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর খাদ্য মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে দেশে পৌঁছেছে দুই লাখ টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ক্রয়) মো. মনিরুজ্জামান গত সোমবার তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এক লাখ টন চাল। আরও এক লাখ টন আসবে। জিটুজির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে এক লাখ টন এবং পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আসবে। পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ১০টি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এসব চালএপ্রিলের মধ্যে পাওয়া যাবে।

মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভারত থেকেও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হচ্ছে। আশা করি, কোনো সংকট হবে না।’

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি ভাবে ২ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল এসেছে। সরকার আমদানি বাড়াতে শুল্ক–কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়েছে। তবে আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়েনি। কারণ, বিশ্ববাজারে চালের দাম ও ডলারের মূল্য বিবেচনায় আমদানি খুব বেশি লাভজনক নয়।

এদিকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ভিয়েতনামে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দর গত ডিসেম্বরে ছিল ৪৯৬ ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ ডলারে নেমেছে। ফলে প্রতি কেজিতে চালের দাম কমেছে সাড়ে ১১ টাকা। বাংলাদেশে কমেছে দুই টাকা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানিতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে সাড়ে ৪৯ টাকার মতো। এর সঙ্গে জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা যুক্ত হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। ফলে বিশ্ববাজারে চালের দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে নেমে গেলেও বাংলাদেশে আমদানি করা লাভজনক হচ্ছে না।

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ভিয়েতনামে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দর গত ডিসেম্বরে ছিল ৪৯৬ ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ ডলারে নেমেছে। ফলে প্রতি কেজিতে চালের দাম কমেছে সাড়ে ১১ টাকা। বাংলাদেশে কমেছে দুই টাকা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানিতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে সাড়ে ৪৯ টাকার মতো। এর সঙ্গে জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা যুক্ত হবে।‘এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়’

খানা আয় ও ব্যয় জরিপের (২০২২) ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, দেশের মানুষের গড় আয়ের ৪২ শতাংশ ব্যয় হয় খাবারের পেছনে। পরিবারগুলোর আয় যত কম, খাবারের পেছনে ব্যয়ের অংশ তত বেশি।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সময়মতো সাশ্রয়ী দামে চাল পৌছানো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারের থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভিজিএফ, ভিজিডি, ভিডব্লিউবি, ওএমএসের মতো কর্মসূচির সুবিধাভোগী হলো গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কোনো যুক্তিতে এগুলোতে বিতরণ কম হওয়া উচিত নয়। সরকারি কর্মসূচি যদি এভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, তাহলে এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়।

সেলিম রায়হান বলেন, বরাদ্দকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়, এমন অভিযোগ ধোপে টিকবে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সহায়তা কমে গেলে দরিদ্র মানুষ আরও সংকটে পড়বেন।

ভিজিএফ, ভিজিডি, ভিডব্লিউবি, ওএমএসের মতো কর্মসূচির সুবিধাভোগী হলো গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কোনো যুক্তিতে এগুলোতে বিতরণ কম হওয়া উচিত নয়। সরকারি কর্মসূচি যদি এভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, তাহলে এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ম ন আয় র ম ন ষ চ ল র দ ম কম ছ হ জ র টন খ দ য খ দ য ব তরণ ক হ জ র টন চ ল প রথম আল ক ৫ হ জ র টন ৭ হ জ র টন ল খ টন চ ল এক ল খ টন র আওত য় ব ওএমএস র ও আট র ব চ ল ও গম ত হওয় র জনগ ষ ঠ সরক র র গত বছর র পর চ আট ম স ভ জ এফ দর দ র র জন য পর ম ণ র র পর বছর এ আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

দরিদ্র মানুষ ও দুস্থ নারীদের চাল-গমের সহায়তা কমেছে

বাজারে চালের দাম চড়া। ভালো মানের এক কেজি মোটা চাল কিনতে লাগছে ৫৫ টাকা। সরু চালের দাম অনেক বেশি। এ চড়া দামের মধ্যেই সরকারিভাবে চাল বিতরণ কমেছে। কমেছে গমের বিতরণও।

বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা ও গরিব মানুষকে সহায়তার ক্ষেত্রে সরকারি খাদ্যশস্য বিতরণকে গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করা হয়। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারিভাবে চাল ও গম বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কম।

পরিমাণের দিক দিয়ে চাল ও গমের বিতরণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চালের বিতরণ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন। অন্যদিকে গম ও আটার বিতরণ কমেছে প্রায় ৩৮ হাজার টন।

বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দরিদ্র মানুষ, খাদ্যসংকটের ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠী ও দুস্থ নারীদের সহায়তা এবং গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মতো খাতগুলোতে খাদ্য বিতরণ কমে গেছে।

জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারি দপ্তরগুলো খাদ্য অধিদপ্তরের কাছ থেকে চাল নিয়ে বিতরণ করা কমিয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের বেশির ভাগ পলাতক। ফলে তাদের মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির বাস্তবায়ন কমে গেছে। সব মিলিয়ে খাদ্য বিতরণ কমেছে। তিনি আরও বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী মাস থেকে দেড় লাখ টন চাল বিতরণ শুরু হবে। তখন বিতরণের পরিমাণ বাড়বে।

অবশ্য খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বিতরণ কমে যাওয়ার কারণ শুধু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নয়। সরকারিভাবে চালের মজুতও কম। এ কারণে খোলাবাজারে বিক্রি বা ওএমএস কর্মসূচির আওতায় চাল ও আটার বিতরণ বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ওএমএস কর্মসূচি খাদ্য অধিদপ্তর পরিচালনা করে। যেসব জায়গায় ওএমএসের ট্রাক বা দোকান থাকে, সেখানে দীর্ঘ লাইন ধরে মানুষ চাল ও আটা কেনেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, মানুষ যে সংকটে আছেন, দীর্ঘ সারি তারই উদাহরণ। এখন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়। কাজের সুযোগ কম। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি চড়া। এ সময়ে খাদ্য বিতরণ বাড়ানো দরকার। এতে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন।

পরিমাণের দিক দিয়ে চাল ও গমের বিতরণ কমেছে প্রায় ২ লাখ ২৩ হাজার টন। চালের বিতরণ কমেছে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার টন। অন্যদিকে গম ও আটার বিতরণ কমেছে প্রায় ৩৮ হাজার টন।বিতরণ কমেছে কোন খাতে

মোটাদাগে সরকারি খাদ্য বিতরণের খাত দুটি—আর্থিক ও ত্রাণমূলক। আর্থিক খাত অর্থাৎ স্বল্পমূল্যে খাদ্য বিক্রির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে রেশন, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ইত্যাদি। অন্যদিকে ত্রাণমূলক খাতের মধ্যে রয়েছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর), ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ), জেনারেল রিলিফ (জিআর) ইত্যাদি। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের হতদরিদ্র, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৭৯ টন খাদ্য। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টন। ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য ভিজিএফের আওতায় বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের অর্ধেকের একটু বেশি। ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) /ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) কর্মসূচির আওতায় আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৭ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম।

বেড়েছে জেনারেল রিলিফ বা জিআরের আওতায় বিতরণ। আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ হাজার ৩০৩ টন বেশি। জেলা প্রশাসকেরা (ডিসি) জিআরের অধীন চাল ও গম বিতরণ করতে পারেন।

ওএমএসের আওতায় খাদ্য বিতরণ কিছুটা কমেছে। আট মাসে এ কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৭ লাখ ৫৩ হাজার টন চাল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ হাজার টন কম। ওএমএসে চাল বিক্রি বেশি কমেছে। আট মাসে বিক্রি করা হয়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন চাল, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৪ হাজার টন কম। গম ও আটা বিতরণ বেড়েছে। যদিও আটার বাজার অনেক দিন ধরে স্থিতিশীল। বিশ্ববাজারে গম সহজলভ্য।

কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আওতায় আট মাসে বিতরণ করা হয়েছে মাত্র ১৭৯ টন খাদ্য। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার টন। ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য ভিজিএফের আওতায় বিতরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার টন খাদ্য, যা আগের বছরের একই সময়ের অর্ধেকের একটু বেশি।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ আগের মতোই আছে, পরিমাণ ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন চাল। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে কার্ডধারীদের বছরে পাঁচ মাস ১৫ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য একটি কম দামে খাবার পাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায় ওএমএসের দোকান অথবা ট্রাকের পেছনে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখে।

রাজধানীর বাংলামোটরে ওএমএসের ট্রাকে চাল ও আটা বিক্রি করা হয় দুই দিন পরপর। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নারী ও পুরুষের সারি। সেখানে দাঁড়ানো নারী ঝর্ণা বেগম (৪০) প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর স্বামী অসুস্থ। নিজে মানুষের বাসায় কাজ করে পাঁচজনের সংসার চালান। ওএমএসের ট্রাকে কম দামে পাওয়া যায় বলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে চাল কেনেন তিনি।

ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘অনেক লম্বা লাইন থাকে। মাঝেমধে৵ চাইল না পাইয়া চইলা যাইতে অয়।’

সারিতে দাঁড়ানো আরেক নারী আলেয়া বেগম (৪২) বলেন, ‘আগে আধা ঘণ্টা দাঁড়াইলে হইত। এখন অপেক্ষা করন লাগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা। আর সব সময় চাউল পাওয়াও যায় না। ৬০-৭০ টাকা দিয়ে চাল কিনে খাইতে হইলে বাঁচুম না। কষ্ট হলেও এইখানে আসি চাউল নিতে।’

ওএমএসে ৩০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করে সরকার।

অনেক লম্বা লাইন থাকে। মাঝেমধে৵ চাইল না পাইয়া চইলা যাইতে অয়।ঝর্ণা বেগমবাজারে চালের দাম কত

বাজারে ভালো মানের মোটা চালের কেজিপ্রতি দর ৫৫ টাকা। কিছু বাজারে মোটা চাল পাওয়া যায় প্রতি কেজি ৫২ টাকায়, যা সাধারণ মানের। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, মোটা চালের কেজিপ্রতি দর এখন ৫০-৫৮ টাকা, যা এক মাসে ২ টাকা কমেছে। এক বছর আগে মোটা চালের দর ছিল কেজিপ্রতি ৪৮-৫০ টাকা। ফলে এখনকার দর ১০ শতাংশ বেশি।

এক মাস বা এক বছরের চিত্র দেখে চালের বাজারের পরিস্থিতি বোঝা যায় না। কারণ, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে চালের দাম ধাপে ধাপে বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে—ওই বছর জানুয়ারি মাসে এক কেজি মোটা চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৩০-৩৫ টাকা। তখন মাঝারি চাল ৪০-৫০ ও সরু চাল প্রতি কেজি ৪৫-৬০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন মাঝারি চালের কেজি ৫৮-৬৫ টাকা, সরু চালের কেজি ৭২-৮৫ টাকা।

কারওয়ান বাজারে চালের পাইকারি দোকান জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মোহাম্মদ রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দোকানে মোটা গুটিচাল প্রতি কেজি ৫১ টাকায় এবং স্বর্ণা ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম কিছু বাড়ে, কিছু কমে—এভাবেই চলছে।

২০২৪ সালে বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট বোরো সংগ্রহের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। বাড়ানো হলে দুই লাখ টন চাল বাড়তি সংগ্রহ করা সম্ভব হতো।খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগ) মো. মাহবুবুর রহমান মজুত কমেছে

সরকারের গুদামে থাকা খাদ্যের মজুত এখন গত বছরের চেয়ে কম। খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ সময়ে চাল ও গমের মজুত ছিল ১৬ লাখ ১০ হাজার টনের কিছু বেশি। এখন তা প্রায় ৯৪ হাজার টন কমে ১৫ লাখ ১৭ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। কমেছে মূলত চালের মজুত। গত বছর এ সময়ে চালের মজুত ছিল ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টনের কিছু বেশি। এখন রয়েছে ১০ লাখ ৮৩ হাজার টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চলাচল, সংরক্ষণ ও সাইলো বিভাগ) মো. মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৪ সালে বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহ কম হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট বোরো সংগ্রহের চুক্তি শেষ হয়ে যায়। মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি। বাড়ানো হলে দুই লাখ টন চাল বাড়তি সংগ্রহ করা সম্ভব হতো।

শুধু গত বোরো নয়, আমনেও সংগ্রহ কম হয়েছে। এ মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ টন ধান, সাড়ে পাঁচ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও এক লাখ টন আতপ চাল কেনার সংগ্রহের ঠিক করা হয়েছিল। ২ মার্চ পর্যন্ত হিসাবে সেদ্ধ ও আতপ চাল সংগ্রহ হয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার টন, যা লক্ষ্যের ৭৯ শতাংশ। তবে ২ মার্চ পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৫১১ টন, যা লক্ষ্যের ৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ধান ও সেদ্ধ চাল সংগ্রহের সময় শেষ। আতপ চাল ১৫ মার্চ পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে।

এদিকে আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো যায়নি। গত আগস্টে বন্যায় আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর খাদ্য মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে দেশে পৌঁছেছে দুই লাখ টন।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ক্রয়) মো. মনিরুজ্জামান গত সোমবার তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি) পদ্ধতিতে মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে এক লাখ টন চাল। আরও এক লাখ টন আসবে। জিটুজির আওতায় ভিয়েতনাম থেকে এক লাখ টন এবং পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল আসবে। পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ১০টি দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এসব চালএপ্রিলের মধ্যে পাওয়া যাবে।

মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ভারত থেকেও বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হচ্ছে। আশা করি, কোনো সংকট হবে না।’

খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, গত জুলাই থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি ভাবে ২ লাখ ৬৪ হাজার টন চাল এসেছে। সরকার আমদানি বাড়াতে শুল্ক–কর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়েছে। তবে আমদানি ব্যাপকভাবে বাড়েনি। কারণ, বিশ্ববাজারে চালের দাম ও ডলারের মূল্য বিবেচনায় আমদানি খুব বেশি লাভজনক নয়।

এদিকে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ভিয়েতনামে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দর গত ডিসেম্বরে ছিল ৪৯৬ ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ ডলারে নেমেছে। ফলে প্রতি কেজিতে চালের দাম কমেছে সাড়ে ১১ টাকা। বাংলাদেশে কমেছে দুই টাকা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানিতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে সাড়ে ৪৯ টাকার মতো। এর সঙ্গে জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা যুক্ত হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই বছরে ডলারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। ফলে বিশ্ববাজারে চালের দাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে নেমে গেলেও বাংলাদেশে আমদানি করা লাভজনক হচ্ছে না।

বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ভিয়েতনামে ৫ শতাংশ ভাঙা চালের টনপ্রতি দর গত ডিসেম্বরে ছিল ৪৯৬ ডলার, যা ফেব্রুয়ারিতে ৪০২ ডলারে নেমেছে। ফলে প্রতি কেজিতে চালের দাম কমেছে সাড়ে ১১ টাকা। বাংলাদেশে কমেছে দুই টাকা। ভিয়েতনাম থেকে আমদানিতে প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে সাড়ে ৪৯ টাকার মতো। এর সঙ্গে জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ ও ব্যবসায়ীদের মুনাফা যুক্ত হবে।‘এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়’

খানা আয় ও ব্যয় জরিপের (২০২২) ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানিয়েছে, দেশের মানুষের গড় আয়ের ৪২ শতাংশ ব্যয় হয় খাবারের পেছনে। পরিবারগুলোর আয় যত কম, খাবারের পেছনে ব্যয়ের অংশ তত বেশি।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সময়মতো সাশ্রয়ী দামে চাল পৌছানো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অগ্রাধিকারের থাকা উচিত ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভিজিএফ, ভিজিডি, ভিডব্লিউবি, ওএমএসের মতো কর্মসূচির সুবিধাভোগী হলো গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কোনো যুক্তিতে এগুলোতে বিতরণ কম হওয়া উচিত নয়। সরকারি কর্মসূচি যদি এভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, তাহলে এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়।

সেলিম রায়হান বলেন, বরাদ্দকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়, এমন অভিযোগ ধোপে টিকবে না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে সহায়তা কমে গেলে দরিদ্র মানুষ আরও সংকটে পড়বেন।

ভিজিএফ, ভিজিডি, ভিডব্লিউবি, ওএমএসের মতো কর্মসূচির সুবিধাভোগী হলো গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কোনো যুক্তিতে এগুলোতে বিতরণ কম হওয়া উচিত নয়। সরকারি কর্মসূচি যদি এভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, তাহলে এটা আতঙ্কিত হওয়ার মতো বিষয়।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে হেনস্তা করার অভিযোগ