‘বিনা লাভের দোকানে’ নিম্নবিত্তের স্বস্তি
Published: 6th, March 2025 GMT
খুলনা নগরীর শিববাড়ী মোড়। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টায় সেখানে দেখা মেলে একদল মানুষের জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল, নতুন একটি দোকানে বসে চিড়া, মুড়ি, সয়াবিন তেল, আলু-পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন তিন-চার যুবক।
দোকানের ওপরে ব্যানারে লেখা– ‘পবিত্র মাহে রমজানে জনমনে স্বস্তি ও বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে বিনা লাভের দোকান। কেনা দামে পণ্য বিক্রি। আয়োজনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও টাস্কফোর্স টিম, খুলনা।’ সেখান থেকে বেশ আগ্রহ নিয়ে পণ্য কিনছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিক্রেতারা জানান, তারা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী। কোনো লাভ ছাড়াই মোট ১৬ ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি আলু ১৭ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, শসা ২৫ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, ছোলা ৯৫ টাকা, মুড়ি ৬৫ টাকা, বেসন ৬০ টাকা, চিড়া ৬০ টাকা, টমেটো সাড়ে ৭ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা, রসুন ১০০ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটারের বোতল ১৭৫ টাকা এবং লেবু প্রতি হালি ২৭ টাকায় বেচছেন। এ ছাড়া রয়েছে ধনিয়া পাতা ও বোম্বাই মরিচ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনার বাজার নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সদস্য হৃদয় ঘরামী জানান, গত অক্টোবরে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে তারা নগরীর শিববাড়ী মোড়, বয়রা বাজার, নতুন বাজার, গল্লামারী, দৌলতপুর বাসস্ট্যান্ড ও খালিশপুর চিত্রালী মার্কেটে ‘বিনা লাভের দোকান’ চালু করেছিলেন। তখন ক্রেতাদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পান। রোজার সময় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী আবারও সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এ কারণে তারা আবারও এ দোকান চালু করেছেন।
তিনি আরও জানান, প্রথমে শিববাড়ী মোড়ে এ দোকান চালু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও কয়েকটি পয়েন্টে চালু করা হবে। রমজানজুড়ে তাদের এ কার্যক্রম চলবে। হৃদয় বলেন, তারা পণ্য কেনার পর পরিবহন খরচসহ মূল্য নির্ধারণ করছেন। শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রমে এগুলো বিক্রি করছেন। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ দোকান চালু থাকবে।
বাজার মনিটরিং কন্ট্রোল টিম সদস্য ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঈম মল্লিক, টিম সদস্য আরিফুল ইসলাম সানি ও রাইসা ইসলাম জানান, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূলত বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না কমা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, নিজেদের টাকায় পণ্য কিনে এনে বিক্রি করছেন তারা। কারও কাছ থেকে কোনো অনুদান নেননি।
এই দোকান থেকে আলু, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল ও মুড়ি কেনার পর ইজিবাইক চালক ইসমাইল হোসেন বলেন, বাজারের তুলনায় এখানে দাম অনেক কম। নগরীর আরও কিছু পয়েন্টে এ ধরনের দোকান চালু করলে লোকজন রোজায় কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারত।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলম শেখ বলেন, বাড়ি যাওয়ার সময় লোকের ভিড় দেখে এলাম। আমি ছয় আইটেম কিনেছি। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খুবই ভালো উদ্যোগ। তবে আরও কিছু পণ্য এবং বিক্রির পয়েন্ট বৃদ্ধি করলে ভালো হবে। তাহলে আরও অনেকে উপকৃত হবেন। শিক্ষার্থীরা অসাধারণ একটি উদ্যোগ নিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মবিরতিতে কর্মকর্তারা, থমথমে অবস্থা বিএসইসিতে
থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)। চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ পুরো কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে একাট্টা সংস্থার সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি পালন করছেন।
কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভ ও চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ দাবির পর গতকাল থেকে পুরোপুরি অচলাবস্থা বিরাজ করছে এ সংস্থার কার্যক্রমে।
অবশ্য দেশের দুই শেয়ার বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সকাল ১০টায় স্বাভাবিক লেনদেন শুরু হয় এবং এখনও চলছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশন কার্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কমিশনের কোনো বিভাগের কোনো কাজ চলছে না। কার্যালয়ের বাইরে ও ভিতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যদের উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা কমিশন কার্যালয়ে আসেননি। অপর এক সূত্রে জানা গেছে, অদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার জন্য তারা সচিবালয় অবস্থান করছেন তারা।
এদিকে দুপুর পৌনে ১টায় সংস্থার মাল্টিপারপাস হলে জড়ো হয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য বৈঠক করছেন। তারা সকলে লাল ব্যাচ ধারণ করে আছেন।
কয়েকজন কর্মকর্তা সকলকে জানান, চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদসহ কমিশনারদের কারোরই বিএসইসির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নেই।
তাদের অভিযোগ, বর্তমান চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা সিকিউরিটিজ আইনকানুন বোঝেন না। আইনের বাইরে গিয়ে যথেচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কর্মকর্তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। কমিশনের জুনিয়র থেকে সিনিয়র সর্ব পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তাদের একই মত।
অবশ্য কমিশনের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত কমিশনের সময়কার নানা শেয়ার কারসাজি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমিশনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কার্যক্রম শুরু করার কারণে কতিপয় কর্মকর্তা উশৃঙ্খল আচরণ ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করছেন।