ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে শ্বশুরবাড়িতে হাফছা আক্তার (২৩) নামের এক তরুণীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। তাঁর বাবা পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করেছেন। বিপরীতে শ্বশুরবাড়ির লোকের দাবি, পোকা দমনের বিষ খেয়ে হাফছা আত্মহত্যা করেছেন।

মঙ্গলবার রাতে উপজেলার কাইতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের গোয়ালী গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। গতকাল বুধবার হাফছার লাশ পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ওই তরুণীর স্বামী পারভেজ সবুজ প্রবাসী।

স্বজন জানান, তিন বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের মো.

মোখলেছ মিয়ার মেয়ে হাফছার বিয়ে হয় সবুজের সঙ্গে। কয়েক মাস পরই সবুজ প্রবাসে চলে যান। তখন থেকেই টাকাপয়সা নিয়ে হাফছাকে শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ মিলে নির্যাতন করত। বিষয়টি কাইতলা দক্ষিণ ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বাছির মিয়াকে জানালেও সুরাহা হয়নি।

তাঁর বাবা মোখলেছ মিয়ার ভাষ্য, মঙ্গলবার তারাবির নামাজের পর রাতে বাছির মেম্বার তাঁর নম্বরে কল করে জানায়, হাফছা নাকি কেড়ির বড়ি (কীটনাশক) খেয়েছে। দ্রুত তিনি হাসপাতালে গিয়ে মেয়েকে মৃত অবস্থায় পান। মোখলেছ মিয়া বলেন, ‘আমার মাইয়া আত্মহত্যা করে নাই। তারে শ্বশুর-শাশুড়ি ও ননদ মিলে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার চাই।’

এ বিষয়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ইউপি সদস্য বাছির মিয়া বলেন, মঙ্গলবার রাতে সবুজ তাঁকে কল করে জানান, তাঁর (সবুজ) সঙ্গে ফোনে ঝগড়া করে নাকি স্ত্রী হাফছা বিষ খেয়েছে। দ্রুত তাদের বাড়িতে গিয়ে হাফছার সঙ্গে কথা বলেন। সে জানায়, তিনটি কেড়ির বড়ি খেয়েছে। চিকিৎসার জন্য দ্রুত সিএনজিতে করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতালে পাঠান। পথেই হাফছার মৃত্যু হয়। 

নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছেন। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব র হ মণব ড় য়

এছাড়াও পড়ুন:

অবৈধ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করা অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো বাংলাদেশিদেরও ফেরত পাঠানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে নথিপত্রহীন কয়েকজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠালে তাদের গ্রহণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সভায় স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সভা হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য দেশের নাগরিকদের মতো অবৈধ বাংলাদেশিদেরও ফেরত পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। এ-সংক্রান্ত একটি বার্তা ঢাকাকে জানিয়েছে ওয়াশিংটন। বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ হয়ে পড়া নিজ নাগরিকদের ফেরত নেবে।

ওই কর্মকর্তা জানান, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচিব মো. জসিম উদ্দিন বৈঠকে যোগ দেন। 

বৈঠকে অবৈধ বাংলাদেশিদের গ্রহণ করার প্রস্তুতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের যাতে দেশে ফিরতে কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে পেরেছে। হাজারখানেক বাংলাদেশিকে নিজের দেশে গ্রহণেও কোনো সমস্যা হবে না। 

কবে নাগাদ বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য না করলেও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি বলেছেন, বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে পাঠানোও হয়েছে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার পর অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। মেক্সিকোসহ দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের অনেক অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের নিয়েই ট্রাম্প প্রশাসনের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি। তবে, আফ্রিকা ও এশীয়দেরও ফেরত পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগে অবৈধ ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় বসবাস করা এক প্রবাসী বাংলাদেশি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যেসব বাংলাদেশি আছেন; তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জ্যাকসন হাইটসসহ বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে লোকসমাগম তেমন হচ্ছে না। তবে, যাদের বৈধ কাগজপত্র আছে, তাদের কোনো সমস্যা নেই। 

ঢাকায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কয়েকদিন আগে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা ধারণা দিয়েছেন, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, সে সংখ্যা হাজারের বেশি নয়। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এক্ষেত্রে ঢাকার সহযোগিতা চেয়েছে ওয়াশিংটন। সরকারও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে।

বিদেশ থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার অন্যতম হলো, তারা বাংলাদেশের নাগরিক কি না, তা যাচাই করা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি মেনে চলা হবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। 

ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনি প্রচারে অঙ্গীকার করেছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ বিদেশিদের বিতাড়নের উদ্যোগ নেবেন।

ঢাকা/হাসান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ