Samakal:
2025-04-29@17:57:40 GMT

সিন্ডিকেটের কবলে ভোজ্যতেল

Published: 6th, March 2025 GMT

সিন্ডিকেটের কবলে ভোজ্যতেল

সিন্ডিকেটের কবলেই থেকে গেল সিলেটের ভোজ্যতেলের বাজার। রমজানে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় থাকলেও তেল নিয়ে চলছে তেলেসমাতি।

স্থানীয় পর্যায়ের দোকানগুলোতে তেল মিলছে না। পাইকারি বাজারেও তেলের দেখা মেলা কঠিন। পাওয়া গেলেও দাম আকাশচুম্বি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো ব্র্যান্ডের তেল নেই বাজারে। নতুন নামে বিভিন্ন তেলের কোম্পানি বাজারে এলেও এতে আস্থা রাখতে পারছেন না ক্রেতারা। এছাড়া এসব তেলের দামও বেশি। কোনো কোনো তেল মাপে প্রায় একশ গ্রাম কম আসছে লিটারে।

গত শনিবার থেকে টানা কয়েকদিন সিলেট নগরীর খুচরা ও পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটাই সহনীয়। তবে বাজার থেকে হাওয়া সয়াবিন তেল। খুচরা বাজারে আলু ২০ টাকা, পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১২০ টাকা, দেশি চিনি ১৩০ এবং ভারতীয় চিনি ১১৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সবজির বাজারও অনেকটা সহনীয়। গেল বছর খেজুরের দাম ছিল অনেকটা বেশি। এবার বাজারজুড়ে দেখা মিলছে খেজুরের। দামও সহনীয়।

নগরীর প্রধান পাইকারি বাজার কালীঘাটে গিয়ে দেখা যায় লোকজনে ঠাসা। বাজারে সব পণ্যই মিলছে। নেই শুধু সয়াবিন তেল। দোকানদারদের অভিযোগ, তারা ডিলারদের কাছে তেল দেওয়ার চাহিদা দিয়ে রেখেছেন। ডিলাররা তাদের তেল দেননি। কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত নন বলেও তারা দাবি করেন। 

কালীঘাটের মদিনা ট্রেডার্সের আবদুল মালিক জানান, কয়েকদিন ধরেই তারা রয়েছেন মহাসংকটে। রমজানে নিত্যপণ্যের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হচ্ছে ভোজ্যতেল। সেটি তারা ক্রেতার চাহিদা মতো দিতে পারছেন না। কিছু কিছু দেওয়া গেলেও দাম চড়া। এছাড়া ব্র্যান্ডের তেল বাজারে নেই। বিভিন্ন নামে বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে। যারা স্বাস্থ্য সচেতন তারা এসব তেল নিতে চান না। যারা নিচ্ছেন তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই নিচ্ছেন।

নগরীর নয়াসড়ক গির্জার সামনে একটি কাভার্ডভ্যানে দেখা গেল নিত্যপণ্য বিক্রি করতে। আটা, ময়দা, মসুর ডাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে ভ্যানে। সেখানে মোটা ডাল কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। তীর কোম্পানির সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ২ লিটার ৪০০ টাকায়। এছাড়া প্যাকেটজাত কলি কোম্পানির পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ২ লিটার ১৭০ টাকা।

নগরীর আম্বরখানা, মদিনা মার্কেট, উপশহর টিলাগড়সহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব এলাকায়ও সয়াবিন তেল নেই। পাড়ার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে পামঅয়েল। পামঅয়েলও অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান এলাকার লোকজন। 

নগরীর টিলাগড়ের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, তাঁর ৫ লিটার সয়াবিন তেলের চাহিদা ছিল। ‌এজন্য তিনি কালীঘাটে যান। সেখানে গিয়ে নামে বেনামে বিভিন্ন কোম্পানির তেল দেখতে পান। ভরসা করতে না পেরে ৫ লিটার রাইসবেন তেল এক হাজার ২০০ টাকায় কিনে নিয়ে যান। তিনি বলেন, এখন সব তেলের দাম চড়া। অন্যান্য পণ্যে বাজার অনেকটাই সহনীয়। 

বাংলাদেশ পিপলস পার্টি (বিপিপি) সিলেটের সমন্বয়ক তালুকদার মো.

মকবুল হোসেন জানান, হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি তেল আমদানির এজেন্টের দায়িত্ব পেয়েছে। এজন্য সরকারই দায়ী। সিলেটের ভোজ্যতেল আমদানিকারক সমিতির সদস্য অনন্ত মোহন পাল জানান, এক মাস ধরে ডিলারদের কাছে চাহিদমত তেলের অর্ডার দেওয়া হলেও কোম্পানি তেল দিচ্ছে না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ত যপণ য ভ জ যত ল নগর র সহন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের বন্ধু হতে চাইলে

সন্তান যে কতটা প্রিয় তা ভাবে ও ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা অধিকাংশ মানুষেরই থাকে না। সন্তান সব মা-বাবার জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ। জন্মসূত্রে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর, গভীর, ভালোবাসা, স্নেহ, স্বার্থহীন, নির্ভেজাল এ সম্পর্ক তৈরি হয়। 
ছোট্ট শিশু থেকে বেড়ে ওঠার সময়টায় মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক আনন্দের, মজার, কষ্টের, দুঃখের, হাসির– মোট কথা ঘটনাবহুল ও স্মৃতিময়। মা-বাবা সন্তানের জন্য বহুমুখী সম্পর্ক পালন করেন। কখনও বন্ধু, শিক্ষক, সাহায্যকারী, সহমর্মী, অভিভাবক, ভ্রমণসঙ্গী হয়ে। এ যাত্রা মোটেও সহজ নয়। সামান্য কারণে সন্তানের সঙ্গে তৈরি হতে পারে দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝি। 
সন্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য মা-বাবার কী করা উচিত– জানতে চেয়েছিলাম সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মনোচিকিৎসক বাপ্পা আজিজুলের কাছে। তিনি জানান, ‘প্যারেন্টিং বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো কোর্স বা ডিগ্রি নেই। প্যারেন্টিং শিশুর বয়স অনুসারে পরিবর্তিত হয়। মোটামুটি ৩টি বয়সে ভাগ করে মা-বাবার শিশুর সঙ্গে আচরণ ও ব্যবহারে ভিন্নতা আনা যেতে পারে।’ 
১. বাচ্চার বয়স ০-১২ বছর পর্যন্ত চাইল্ড প্যারেন্টিং। 
২. ১৩-১৯ বছর বয়সীদের জন্য টিন প্যারেন্টিং। 
৩. ২০ বছর থেকে শুরু করে ৩০-৩২ বছর পর্যন্ত অ্যাডাল্ট প্যারেন্টিং। 
একেক বয়সী সন্তানের জন্য পিতামাতার ভূমিকা একেক রকম হয়। সন্তানকে আদর, সোহাগ, কোলে-পিঠে নেওয়া, চুমু, স্নেহ, চক্ষুশীতল করে গড়ার মূল বয়স ১০ বছর বয়স পর্যন্ত। তাই বলে আপনার যে বাচ্চার বয়স ১০ পেরিয়ে গেছে তার জন্য হতাশ হবেন না, তার সঙ্গে দূরত্ব বাড়াবেন না। এখনই পজিটিভ প্যারেন্টিং শুরু করুন। সব ঠিক হয়ে যাবে। সন্তান আপনাকে বন্ধু ভাববে। দূরত্ব যাবে ঘুচে। সাধারণত প্যারেন্টিং চার ধরনের– 
ডিকটোরিয়াল বা একনায়কতন্ত্র: এমন ধরনের পিতামাতার ইচ্ছা পালন করতে হবে। সন্তান নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। 
অথরিটিটিভ বা কর্তৃত্বশীল: এমন ধরনের মা-বাবা সন্তানের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ হন। যেমন– তুমি যদি আমাদের কথা শোন তবে আমরা তোমাকে এ সুযোগ-সুবিধা দেব।
পারমিসিভ বা অনুমতিসূচক: এমন ক্ষেত্রে মা-বাবা সন্তানকে অবাধ স্বাধীনতা বা ছাড় দেন; যা ইচ্ছা করলেও খারাপ কিছু যাতে না করে সেই পরামর্শ দেওয়া থাকে। 
ডেমোক্রেটিক বা গণতান্ত্রিক: এ পদ্ধতিতে পিতামাতা সন্তানের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্যারেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি এখন সারাবিশ্বে সমাদৃত হচ্ছে।
কিশোর-কিশোরীদের ওপর অতিরিক্ত ও অযাচিত শাসন চাপিয়ে দেবেন না। এ বয়স বুঝিয়ে বলার। যেসব মা-বাবা বাচ্চাদের লেখাপড়ার ফলাফল আশানুরূপ না হলে বকা দেন বা পড়াশোনাকেই সাফল্যের একমাত্র উপায় মনে করেন তাদের বলছি– 
১. সন্তানকে অভয় দিন। আশ্বস্ত করুন; যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এখন কানের কাছে বারবার একই কথা বলতে থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আপনার শীতল গলা, অকৃত্রিম ভালোবাসা, মানসিক সাপোর্ট তার আত্মপর্যালোচনার জন্য যথেষ্ট হবে। 
২. সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন। সময় দেওয়া মানে সন্তানের পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা নয়। সন্তানের বন্ধু হোন। ওর চোখে আদর্শ মা-বাবা হোন। মানসম্মত সময় দিন। সন্তানের সঙ্গে খেলুন। সৃজনশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত থাকুন। ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে গল্প করুন। 
৩. সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাহলে মা-বাবার সঙ্গে গ্যাপ (জেনারেশন গ্যাপ) কমে আসবে। কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে সেটিও জানা যাবে। আপনার সন্তানের মনে সাহস ও আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। মন হালকা হবে। ইমোশন ভেন্টিলেশন হবে।
৪. সন্তানের লক্ষ্য নির্ধারণে সহযোগী হোন। নিজের সিদ্ধান্ত সন্তানের কাঁধে জোর করে চাপিয়ে দেবেন না। রেজাল্ট, সুযোগ, সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনায় আনুন। সন্তানকে সুপরামর্শ দিন। তবে দিনশেষে নিজের জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তাকে নিতে দিন। 
৫. সন্তানের কাছে প্রত্যাশা কম করুন। ওদের আচরণে, ব্যবহারে বা লেখাপড়ার ফলাফলে হতাশ হবেন না। প্রত্যাশা কেবল চাপ তৈরি করে। এক সন্তানের সঙ্গে অন্যজনের বা অন্যদের সঙ্গে অযথা তুলনায় যাবেন না। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ