মিজানুর রহমান কামাল চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করেছেন ৩০ কাঠা (৫০ শতাংশ) জমিতে। দিন দশেক আগেও গাছের ডগা ছিল মিশমিশে কালো। ভালো ফলনের আশা করছিলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষক। তাঁর আশা ছিল অন্তত ৮০-৯০ মণ পেঁয়াজ পাবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর জমিতে পেঁয়াজ গাছের ডগা লালচে হয়ে মরতে শুরু করেছে। 

উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়া মাঠে শিক্ষক কামালের জমি। গতকাল বুধবার সকালে তিনি বলেন, ‘১০ দিনে বিভিন্ন কোম্পানির নামিদামি কীটনাশক ছিটিয়েছি প্রায় আড়াই হাজার টাকার। কৃষি কর্মকর্তাকেও ডেকে এনেছি। তবুও মাথা মরা বন্ধ হয়নি।’ মাসখানেক পরেই পেঁয়াজ ঘরে তুলবেন কৃষকেরা। এখন পেঁয়াজে গুটি নামার সময়। গাছের আগা মরে গেলে গুটি ছোট হবে। আর ফলনও কম হবে বলে জানান কামাল। চলতি মৌসুমে তাঁর ৩০ কাঠা জমিতে গত মৌসুমের তুলনায় ৩০-৪০ মণ ফলন কম হবে বলেও মনে করছেন। 

পশ্চিমপাড়া মাঠে জমি রয়েছে মনছুর আলীর। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে হালকা বৃষ্টি হয়েছিল। এর পর থেকেই গাছের ডগা মরে যাচ্ছে। কোনো ওষুধে কাজ হচ্ছে না। তাঁর ১৫ কাঠা জমিতে গত বছর ৪০ মণ পেঁয়াজ হয়েছিল। এবার ১৫ মণও ফলন হবে না। 

পেঁয়াজের চারা রোপণের প্রায় দুই মাস হয়েছে। এখন গুটি নামার সময়। ২০-৩০ দিন পরই যখন পেঁয়াজ ঘরে উঠবে। চাষিরা শেষ মুহূর্তের পরিচর্যায় ব্যস্ত– এমন সময়ই উপজেলার দুই-তৃতীয়াংশ কৃষকের পেঁয়াজ ক্ষেতে দেখা দিয়েছে এই দুর্যোগ। তারা প্রতি বিঘা জমিতে ১৫-২০ মণ ফলন কম হওয়ার শঙ্কা দেখছেন।

কৃষকদের ভাষ্য– জমির ইজারা, চাষ, বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ পেঁয়াজ চাষে বিঘাপ্রতি তাদের খরচ হয়েছে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ৫০-৬৫ মণ ফলন পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল। ২৩ ফেব্রুয়ারি হালকা বৃষ্টির পর থেকে গাছের ডগা মরে যাচ্ছে। এতে ফলন ও লাভ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তার দাবি, বৃষ্টি নয়, হঠাৎ তাপ বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজের ডগা মরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলন কিছুটা কমার শঙ্কা রয়েছে বলেও স্বীকার করেন।

কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

মামুনুর রশিদ বলেন, ফসলের ক্ষতি হওয়ার মতো তেমন আবহাওয়া এখনও হয়নি। তুলনামূলকভাবে গতবারের তুলনায় তাপমাত্রা কম আছে। গড়ে ৩০-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চলছে। ২৩ ফেব্রুয়ারি শূন্য দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ বৃষ্টিতে ক্ষতির কিছু নেই।

রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিনে উপজেলার যদুবয়রা, পান্টি, বাগুলাট ও চাপড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে পেঁয়াজ গাছের ডগায় লালচে ভাব ধরে মরতে দেখা যায়। কৃষকেরা এ অবস্থা ঠেকাতে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। তাদের চোখমুখে হতাশা, আর কপালে চিন্তার ভাঁজ।

যদুবয়রা ইউনিয়নের জোতমোড়া গ্রামের নীলের মাঠের কৃষক মো. জিন্নাহ মোল্লা বলেন, বৃষ্টির পর থেকেও গাছ মরে যাচ্ছে। দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে এখন পর্যন্ত ৬০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলন ৬০ মণ থেকে কমে ২০-৩০ মণ হতে পারে। তাতে এবার তাদের খরচই উঠবে না।

এই মাসের শেষের দিকে পেঁয়াজ ঘরে তোলার আশা করছেন একই ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর বিলের কৃষক আব্দুল বারেক (৬০)। তিনি বলেন, যেভাবে গাছ মরে যাচ্ছে, তাতে ফলন অর্ধেক কমে যাবে।

এক সপ্তাহে প্রায় দুই-তিন ইঞ্চি করে গাছ মরে গেছে বলে জানান শিলাইদহ ইউনিয়নের নাউতি গ্রামের কৃষক সাব্বির হোসেন। তিনি বলেন, কোনো ওষুধই কাজ করছে না। খরচ তোলা নিয়েই তাঁর মতো কৃষকের যতো দুশ্চিন্তা।

পড়াশোনার পাশাপাশি আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন মনিরুল ইসলাম। ডিগ্রি পড়ুয়া এই তরুণ চাপড়া ইউনিয়নের কবুরাট গ্রামের বাসিন্দা। প্রায় ১২ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল হাইব্রিড কিং জাতের পেঁয়াজ চাষ করেছেন মনিরুল। তিনি বলেন, গত বছর বিঘাপ্রতি ৮০-৯০ মণ ফলন হয়েছিল। এখন পেঁয়াজে গুটি নামার সময়, এখনই ডগা মরে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ফলন ৪০-৬০ মণের বেশি হবে না।

আবহাওয়াজনিত কারণেই পেঁয়াজ গাছের ডাগা মরার কথা স্বীকার করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় চার হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৮ হাজার টন। হঠাৎ তাপমাত্রা বাড়ার কারণে পাতা পচা ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়েছে। এতে ফলন কিছুটা কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর মকর ত উপজ ল র ফলন ক

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে চলন্ত বাসে আগুন, অল্পের জন্য রক্ষা

ঢাকা থেকে বরিশালগামী গ্রীন লাইন পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। তবে, এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল-সানুহারের মধ্যবর্তী মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হোসেনের বাড়ির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার মো. বিপুল হোসেন বলেন, ‘‘স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় আধাঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। কিন্তু, তার আগেই বাসটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বাসের ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগুন দেখতে পেয়ে যাত্রীরা নেমে যাওয়ায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।’’

স্থানীয় বাসিন্দা শাওন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রায় এক ঘণ্টা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।’’

গৌরনদী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুর রহমান বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পরে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’’

ঢাকা/পলাশ/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ