মাত্র দুই কোয়া কমলার জন্য পিঠজুড়ে ক্ষত
Published: 6th, March 2025 GMT
অপরের বাড়িতে কাজ করলেও ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছেন মধুমালা খাতুন। এ জন্য বিভিন্ন জনের সহায়তায় নিতে হয়। একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ সাগর (১৬) ঝিনাইদহ সদরের মথুরাপুর আদর্শ এতিমখানার আবাসিক ছাত্র। সেখানেই বুধবার সাহ্রির পর এই কিশোর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক শিক্ষকের হাতে। দু’দিন আগে ইফতারের সময় বেঁচে যাওয়া দুই কোয়া কমলা খাওয়ায় তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তোলা হয়। সেই অভিযোগে পেটানো হয় সাগরকে।
জানা গেছে, সাগর সোমবার অন্য নিবাসীদের সঙ্গে এতিমখানায় ইফতার করে। এ সময় ডাইনিংয়ে দুই কোয়া কমলা বেঁচে যায়। সাগর সবার সামনেই ওই কমলা খেয়ে ফেলে। কিন্তু কয়েকজন শিক্ষার্থী সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদারকে জানায়, সাগর চুরি করে কমলা খেয়েছে। বুধবার সাহ্রির পর সাগরের কক্ষে গিয়ে এ বিষয়ে দোষারোপ করা হয় তাকে। পরে সহকারী শিক্ষক ইমরান হাওলাদার কাঠ দিয়ে তাকে বেধড়ক মারধর করেন। কিছুক্ষণ পর মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মেঝেতে বুধবার দুপুরে ছেলের পাশে বসে ছিলেন সাগরের মা মধুমালা খাতুন। তিনি বলেন, ‘খুব কষ্ট করে মানুষের সহায়তা নিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা শেখাচ্ছি। কিন্তু আমার ছেলেকে খুব মারধর করেছে। কোনো জায়গা বাকি রাখেনি। ঘটনার পর আমরা বেরিয়ে দেখি, এতিমখানার শিক্ষক আব্দুল মান্নান মোটরসাইকেলে করে ইমরান হাওলাদারকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।’ এ সময় তারা প্রধান শিক্ষককে বারবার কল দিলেও ইমরান হাওলাদারকে আটকাননি।
এলাকাবাসী জানান, ১০ বছর আগে সাগরের বাবা মারা যান। একমাত্র বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সাত বছর ধরে এই এতিমখানায় রেখে সাগরকে পড়াছেন মা মধুমালা।
এতিমখানার প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে আমি (ঘটনা) জানতাম না, সাগরের মা ফোনে জানিয়েছেন। ইমরান হাওলাদার সাগরকে মারধর করে খুবই অন্যায় করেছেন।’ তিনি বলেন, এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে। তবে ইমরান হাওলাদারকে কোনো শিক্ষক পালাতে সহায়তা করেননি বলেও দাবি করেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ
এছাড়াও পড়ুন:
কর্মবিরতিতে কর্মকর্তারা, থমথমে অবস্থা বিএসইসিতে
থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি)। চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদসহ পুরো কমিশনের পদত্যাগের দাবিতে একাট্টা সংস্থার সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মবিরতি পালন করছেন।
কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত ঘিরে বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভ ও চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ দাবির পর গতকাল থেকে পুরোপুরি অচলাবস্থা বিরাজ করছে এ সংস্থার কার্যক্রমে।
অবশ্য দেশের দুই শেয়ার বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সকাল ১০টায় স্বাভাবিক লেনদেন শুরু হয় এবং এখনও চলছে।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশন কার্যালয় পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কমিশনের কোনো বিভাগের কোনো কাজ চলছে না। কার্যালয়ের বাইরে ও ভিতরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যদের উপস্থিত লক্ষ্য করা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, দুপুর ১টা পর্যন্ত সংস্থার চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা কমিশন কার্যালয়ে আসেননি। অপর এক সূত্রে জানা গেছে, অদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার জন্য তারা সচিবালয় অবস্থান করছেন তারা।
এদিকে দুপুর পৌনে ১টায় সংস্থার মাল্টিপারপাস হলে জড়ো হয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীরা পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য বৈঠক করছেন। তারা সকলে লাল ব্যাচ ধারণ করে আছেন।
কয়েকজন কর্মকর্তা সকলকে জানান, চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদসহ কমিশনারদের কারোরই বিএসইসির মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থা পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা নেই।
তাদের অভিযোগ, বর্তমান চেয়ারম্যান ও কমিশনাররা সিকিউরিটিজ আইনকানুন বোঝেন না। আইনের বাইরে গিয়ে যথেচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কর্মকর্তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। কমিশনের জুনিয়র থেকে সিনিয়র সর্ব পর্যায়ের বেশিরভাগ কর্মকর্তাদের একই মত।
অবশ্য কমিশনের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিগত কমিশনের সময়কার নানা শেয়ার কারসাজি ও অনিয়মের বিষয়ে তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কমিশনের কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কার্যক্রম শুরু করার কারণে কতিপয় কর্মকর্তা উশৃঙ্খল আচরণ ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করছেন।