‘থার্ড টার্মিনাল চালুর দিন থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করবে বিমান’
Published: 5th, March 2025 GMT
বিমান পরিচালনা পর্ষদ বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরি বলেছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল যেদিন থেকে চালু হবে, সেদিন থেকেই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ শুরু করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বিমানের।
আজ বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইন্সের জিএসই বিভাগ আয়োজিত নতুন গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট কমিশনিং ২০২৫ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিমানের চেয়ারম্যান বলেন, সরকার প্রাথমিকভাবে পরীক্ষামূলক দুই বছরের জন্য বিমানবন্দর থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করার অনুমতি দিয়েছে বিমানকে। আশা করি, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ জনবল দ্বারা দক্ষতার সাথে এ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করবে বিমান কর্মীরা।
মুয়ীদ চৌধুরি বলেন, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে জাইকা সন্দিহান থাকলেও আশা করি তাদের সহযোগিতায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা আন্তর্জাতিক মানে উন্নত করবে বিমান।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো.
তিনি বলেন, আজ অনুষ্ঠানে দেখলাম থার্ড টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য বিমান যেসব ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি করছে তাতে আন্তর্জাতিক মানে সেবা দিতে পারবে বিমান।
অনুষ্ঠানে বিমান কর্মকর্তারা বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেক্টরে জিএসই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ যা বর্তমানে ১৯ ধরনের মোট ২৮৭টি ইকুইপমেন্ট অপারেট করছে। দেশি-বিদেশি প্রায় ৩২টি এয়ারলাইন্স ও ১২টি কার্গো ফ্রেইটারের সামগ্রিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা নিরবচ্ছিন্ন রাখার নিমিত্ত জিএসই রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ বর্ণিত ইকুইপমেন্টের সচলতা নিশ্চিত করছে।
কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে আমরা তৃতীয় টার্মিনালের অপারেশনের দ্বারপ্রান্তে। সুষ্ঠুভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা প্রদানের জন্য বিমান কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত এক বছরে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৪৩ টি ইকুইপমেন্ট জিএসই বহরে সংযোজিত হয়েছে। আজ যুক্ত হতে যাচ্ছে মোট ৩২টি ইকুইপমেন্ট যার মোট মূল্য ৫৪ কোটি টাকা। অচিরেই আরও ৩৪টি নতুন ইকুইপমেন্ট আগামী ৬ মাসের মধ্যে যুক্ত হয়ে ফ্লিট সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়ক হবে। নতুন পুরাতন ইকুইপমেন্ট মিলিয়েই জিএসই ফ্লাট। সকল সচল পুরাতন ইকুইপমেন্টগুলো পেইন্ট করার কাজে হাত দিয়েছি, যা এখন শেষ পর্যায়ে। পুরাতন ইকুইপমেন্ট পেইন্ট করার ফলে আউটলুক দর্শনীয় হয়েছে যা বিমানের ভাবমূর্তি বৃদ্ধিতে সবিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এ সময় অনুষ্ঠানে অন্যান্যও মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিমানে এমডি ও সিইও ড. মো. সাফিকুর রহমান, বিমানের পরিচালক গ্রাক সেবা মো. রাশদেুল করিমসহ বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী বৃন্দ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালটি নিজেই অসুস্থ
হাওরবেষ্টিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সংকটে জর্জরিত। রয়েছে চিকিৎসক-নার্স সংকট, অপর্যাপ্ত শয্যা, জরাজীর্ণ অবকাঠামো এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা। সব মিলিয়ে এই হাসপাতালটি যেন নিজেই এখন অসুস্থ। তবুও বাধ্য হয়ে প্রতিদিন শত শত রোগী ভিড় করছেন সেবা পেতে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ১৭৪টি অনুমোদিত পদ থাকলেও ১১৪টিই শূন্য রয়েছে। বাস্তবে কাজ করছেন ৬০ জন, যাদের অনেকেই প্রেষণে আছেন। ৬ লাখ জনসংখ্যার এই উপজেলায় ২৩ চিকিৎসকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন। এর মধ্যেও চারজন সংযুক্ত রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। আর একজন জ্যেষ্ঠ শিশু বিশেষজ্ঞ মাসে আসেন হাতেগোনা কয়েক দিন। ফলে প্রতিদিন তিন চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করছে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগের শত শত রোগীর চিকিৎসাসেবা। এ ছাড়া ৫৫ স্বাস্থ্য সহকারীর পদে ৪১ পদই শূন্য। ৩৬ জন নার্সের স্থলে কর্মরত ১৪ জন।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা জরুরি বিভাগে। যেখানে দ্রুত ও দক্ষ সেবা দেওয়ার কথা, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন দু’জন অসুস্থ ব্যক্তি। এদের একজন ক্যান্সার আক্রান্ত এবং অপরজন প্যারালাইসিসে। যাদের নিজেদেরই উন্নত চিকিৎসার দরকার, অথচ জনবল সংকটের কারণে তারাই কিনা চেষ্টা করছেন অন্যদের সেবা দিতে।
অন্যদিকে, হাসপাতালটির অন্তর্বিভাগের অবস্থাও খুব একটা ভালো নেই। ৫০ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি থাকছেন ১০০-১২০ রোগী। যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। শয্যার অভাবে অনেকেই মেঝেতে, করিডোর, এমনকি হাসপাতালের বারান্দায় পর্যন্ত চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, অপর্যাপ্ত ওষুধ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে রোগীরা বঞ্চিত হচ্ছেন কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নাসিরনগর-লাখাই-সরাইল আঞ্চলিক মহাসড়কে পাশে সাড়ে তিন একর জমির ওপর ১৯৭৫ সালের ২৩ জুন ৩১ শয্যার হাসপাতালটি স্থাপন করা হয়। যা ২০০৭ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে অবকাঠামো ও জনবল এখনও ৩১ শয্যার পর্যায়ে রয়ে গেছে। উপজেলায় একটি পল্লি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তিনটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও আটটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকলেও কোথাও চিকিৎসক নেই। হাসপাতালে ১২টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পদের মধ্যে ১০টি শূন্য। হৃদরোগ, চর্ম ও যৌনরোগ, নাক-কান-গলা, চক্ষু, স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ, মেডিসিন, অস্থি, শল্যবিদসহ কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ফলে জরুরি অস্ত্রোপচার বা বিশেষায়িত চিকিৎসা কল্পনার বাইরে। বিশেষ করে স্ত্রীরোগ ও অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞের অভাবে এক যুগ ধরে বন্ধ রয়েছে সিজারিয়ান অপারেশন। অথচ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ধুলায় ঢেকে আছে, যা সময়ের সঙ্গে বিকল হয়ে যাচ্ছে। ফলে দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বেসরকারি হাসপাতালে বেশি টাকা খরচ করে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
গত ১৫ মার্চ সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে, চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে রোগীদের দীর্ঘ লাইন পড়ে গেছে। ফলে সেবা পেতে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে ক্যান্সার আক্রান্ত ওয়ার্ড বয় আমির হোসেন প্রতিদিনের মতোই রোগীদের কাটা-ছেঁড়ার কাজ সারছেন। অপর প্যারালাইসিস আক্রান্ত প্যারামেডিকেল চিকিৎসক অসীম কুমার শারীরিকভাবে অসুস্থ। তাই আজ তাঁকে হাসপাতালে পাওয়া যায়নি।
জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা গোকর্ণ ইউনিয়নের মনতাজ উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে ব্যথা পেয়ে আসছি, কিন্তু যারা চিকিৎসা দেবেন তারাই অসুস্থ। উপজেলার ধরমণ্ডল ইউনিয়ন থেকে আসা রোকেয়া বেগম নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিতে এসে জানতে পারেন, এই পদটি ১৫ বছর ধরে শূন্য।
গোয়ালনগর গ্রাম থেকে হেঁটে আসা হালিমা বেগম শিশু বিশেষজ্ঞের অভাবে সন্তানের চিকিৎসা না করিয়েই ফিরে যান। কারণ, যিনি নাসিরনগর হাসপাতালে কর্মরত, তিনি নিয়মিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যক্তিগত প্র্যাকটিস করেন।
নছিমন বিবি নামে এক হতভাগী মা তাঁর অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন হাসপাতালে। চিকিৎসক জানান, সিজার করতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় এখানে অস্ত্রোপচার হয় না।
হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব হাসান আলীর হতাশা যেন ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্তবতার পুরো প্রতিচ্ছবি। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা অপেক্ষায় একজন চিকিৎসকের দেখা পান। পরে জানতে পারেন, এখানে হাড়ের ডাক্তার নেই।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০-৭০০ রোগী চিকিৎসা নেন। এত কম চিকিৎসক ও জনবল দিয়ে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া কঠিন। এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোগীরা এখানে আসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সিভিল সার্জন ডা. নোমান মিয়া সমকালকে বলেন, বর্তমান সরকার শিগগিরই ২ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।