ফাইনালে ভারতের সামনে নিউজিল্যান্ড
Published: 5th, March 2025 GMT
নিউজিল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা— উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে এমন একটা ম্যাচকে কেমন যেন সাদা–কালো ব্যাপার বলেই মনে হয়। নিরুত্তাপ ও বর্ণহীন ক্রিকেট। হোক চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বৈশ্বিক কোনো আসরের সেমিফাইনাল; ধরেই নেওয়া হয় ভারত, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে এরকম দুটি দলের খেলা মানে ম্যচটার প্রতি কারও কোনো আগ্রহ থাকবে না।
আজ দুপুর পর্যন্ত লাহোরেও সেরকমই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর ঠিকই গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের গ্যালারি অর্ধেকের বেশি ভরে গেল। সময় যত যায়, গ্যালারির শুন্য আসন তত পূর্ণ হতে থাকে। এমনকি সেমিফাইনালে পাকিস্তান দল না থাকা স্বত্তেও পাকিস্তানের পতাকা দিয়ে বানানো ট্রেডমার্ক পাঞ্জাবী পরে মাঠে এসেছিলেন জলিল চাচা। বয়স ৭৫ পেরিয়ে যাওয়া পাকিস্তানের এই বিখ্যাত দর্শক শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ। তবু খেলার টানে ছুটে আসেন ছেলের সঙ্গে।
যে ম্যাচ নিয়ে আগ্রহের পারদ শেষ দিকে কিছুটা চড়ে গেল, সেটি লাহোরবাসীকেও কিছুটা ক্রিকেটীয় রোমাঞ্চ দিল বটে। ভিনদেশী ক্রিকেটারদের প্রতি দর্শকদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে নিউজিল্যান্ডের ইনিংসে রাচিন রবীন্দ্র ও কেইন উইলিয়ামসন সেঞ্চুরির বিনোদন ছড়ালেন।
শেষ দিকে হারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেভিড মিলারের ৬৭ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসটাও বেশ উপভোগ্য ছিল, যদি না আপনি ধরে নিয়ে থাকেন ততক্ষণে ম্যাচের ফলাফল হয়ে গেছে। স্বভাবসুলভ মারকাটারি ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির বাইরে মিলারের একমাত্র পাপ্তি, দক্ষিণ আফ্রিকার হারের ব্যবধান কিছুটা কমানো গেছে।
লুঙ্গি এনগিডির সঙ্গে শেষ উইকেটে মাত্র ২৭ বলে গড়েছেন ৫৬ রানের জুটি। তাতে নিউজিল্যান্ডের ৩৬২ রানের জবাবে ৩৬ ওভারের মধ্যে ২০০ রানে ৬ উইকেট হারানো দক্ষিণ আফ্রিকাও শেষ পর্যন্ত করেছে ৩১২ রান। কাগিসো রাবাদার সঙ্গে মিলারের আগের উইকেটেও হয়েছে ৩৮ রান। এ দুই জুটিতে মিলার অমন বিধ্বংসী না হয়ে উঠলে সেমিফাইনালটা শেষ দেখে ফেলতে পারত আরও আগেই।
নিউজিল্যান্ডের ৬ উইকেটে করা ৩৬২ রান চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসেই এক ইনিংসে সর্বোচ্চ। লাহোরের ব্যাটিং উইকেটে সেটা রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পূর্বাভাসই দিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে আরও দুই–একজন মিলার হয়ে উঠতে পারলে সেটা হতোও।
কিন্তু শুরু আর শেষটা ভালো হলেও মাঝে তারা এমন ভয়ঙ্কর হোঁচট খেয়েছে যে, শুরু–শেষ দিয়েও কাজ হয়নি। এক উইকেট হাতে রেখেও ৫০ রানের হার। দুবাইয়ে ৯ মার্চের ফাইনালে এখন ভারতের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। ২০০০ সালে শিরোপা জয়ের আসরের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে উঠল ব্ল্যাক ক্যাপরা।
সেমিফাইনালে পাকিস্তানের দর্শকদের সমর্থন দুই দিকেই ছিল, তবে দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে যেন একটু বেশি। টুর্নামেন্ট থেকে নিজেদের বিদায়ের পর থেকে অন্য দলগুলোর ম্যাচে পাকিস্তানীরা কোন দলকে সমর্থন করবে, তা নির্ভর করছে একটি বিশেষ বিবেচনার ওপর। যে দল জিতলে ভারত সমস্যায় পড়বে, পাকিস্তানের মানুষ সেই দলের সমর্থক।
ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকাই ভারতের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষ হবে বলে বিশ্বাস ছিল তদের। তার ওপর গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তানকে হারিয়েছে। ব্ল্যাকক্যাপরা তাদের সমর্থন পাবে কেন! কিন্তু মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলের মতো পাকিস্তানের মানুষকে হতাশ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। ২১৮ রানে দক্ষিণ আফ্রিকা অষ্টম উইকেট হারানোর পরই তাই বাড়ির পথ ধরেন অনেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়েছিল আরও আগে। ইনিংসের পঞ্চম ওভার আর দলের ২০ রানের সময় রিকেলটনকে হারানোর পর দ্বিতীয় উইকেটে বাভুমা–রাসি ফন ডার ডুসেনের ৯৫ রানের জুটিতে সমান তালেই এগুচ্ছিল তারা।
নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার এরপর ম্যাচটাই ঘুরিয়ে দিলেন। স্যান্টনার বোলিংয়ে আসেন ইনিংসের ১৭তম ওভারে। দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন ১ উইকেটে ৯০। বাভুমার ব্যাটে আরেকটু গতি থাকলে তা আরও বেশিও হতে পারত। আবার এই ভীত থেকেও হতে পারত বড় কিছু। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনার স্যান্টনার সাত ওভারের টানা স্পেলে পরের ৪২ রানের মধ্যে তুলে নেন বাভুমা, ডুসেন আর হাইনরিখ ক্লাসেনকে। ওই স্পেলে ২৯ রানে ৩ উইকেট নেওয়া স্যান্টনার পরে আরও দুই ওভার বোলিং করলেও আর উইকেট পাননি। তবে বড় রানের জবাব দিতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাও আর পারেনি ম্যাচে ফিরতে।
টস জয় থেকে শুরু করে ব্যাটিংয়ে নিজেদের ইনিংস, এমনকি দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসেও আধিপত্য ধরে রেখেই এগিয়েছে নিউজিল্যান্ড। অষ্টম ওভারে ওপেনার উইল ইয়ংকে হারানোরা পর ৩৪তম ওভার পর্যন্ত একসঙ্গে থেকেছেন রাচিন রবিন্দ্র ও কেইন উইলিয়ামসন। দ্বিতীয় উইকেটে ১৬৪ রানের জুটি। রাচিন রবীন্দ্রর ১০১ বলে ১০৮ রানে ইনিংসটি আইসিসির টুর্নামেন্টে তাঁর পঞ্চম সেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ডের হয়ে যেটি সর্বোচ্চ।
আর ৯৪ বলে ১০২ রানের ইনিংসে উইলিয়ামসন করেছেন আইসিসির টুর্নামেন্টে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। তাঁদের এই দুই সেঞ্চুরির সুবাদে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডও গড়েছে এবার নিউজিল্যান্ড। পরে ড্যারিল মিচেলের ৩৭ বলে ৪৯ আর গ্লেন ফিলিপসের ২৭ বলে অপরাজিত ৪৯–এ দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য কাজটা কঠিন করে দেয় নিউজিল্যান্ড।
তবে ম্যাচের শেষটা বলছে, মাঝ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার আরও দুই–একজন ‘মিলার’ হয়ে উঠতে পারলে ফলাফল ভিন্ন কিছুও হতে পারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোরনিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৬২/৬
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১২/৯
ফল: নিউজিল্যান্ড ৫০ রানে জয়ী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স য ন টন র স ম ফ ইন ল উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে: নুরুল হক
প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। প্রশাসন নিয়ে তিনি বলেছেন, দু–একটি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের কাজ চালাতে চাচ্ছে। যারা দলবাজি করবে, তাদের পরিণতি বেনজীর–হারুনের মতো হবে।
জুলাই আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা বাসস্ট্যান্ডের পাশে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণ অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।
গণ–অভ্যুত্থানের আট মাসেও গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন নুরুল হক। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও আধিপত্য কায়েমে ব্যস্ত হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, এসব কারণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা রাজপথে নেমে হুংকার দিচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর দলগুলো নিজেদের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে কারণেই অভ্যুত্থানের আট মাস পার হলেও তাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি।
ফ্যাসিবাদ নির্মূলে শুক্রবার থেকে গণ অধিকার পরিষদের প্রতিরোধ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়েও রাজনীতি চলছে, যা মোটেও কাম্য নয়।
সড়ক-পরিবহন, কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি-দখলবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধীদের রাজনৈতিক নেতারা আশ্রয়–প্রশয় দিচ্ছেন। জনগণ এগুলো পছন্দ করছে না।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি রকিবুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা কিবরিয়া প্রমুখ।