মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের সুবিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন
Published: 5th, March 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারী ও সমর্থকদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন তৎকালীন সরকারের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা এবং ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা। তাদের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনকে দমন করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। এতে জড়িতদের সুবিচার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক।
বুধবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ে কাউন্সিলের ৫৫তম অধিবেশনে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশে ২০২৪ সালে ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন ভলকার তুর্ক।
প্রতিবেদন থেকে ভলকার তুর্ক বলেন, বাংলাদেশে পদ্ধতিগতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নারী-শিশুসহ বিরোধীদের নির্যাতন এবং সহিংসতা চালানো হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলন দমন করা এবং সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। সবকিছুই হয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নির্দেশনায়। আন্দোলনকারী ও তাদের সহযোগীদের দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধও হয়েছে। সরকার আন্দোলনকারীদের চিকিৎসাসেবা পেতে দেয়নি। এদিকে আন্দোলন শেষ হওয়ার পর ক্ষমতাচ্যুতদের বিরুদ্ধে গুরুতর প্রতিশোধ নিতেও দেখা গেছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার বলেন, ৫ আগস্টের পর আগের সরকারের সমর্থক এবং পুলিশ ও সংখ্যালঘুদের ওপর গুরুতর প্রতিশোধ নিতে দেখা গেছে। পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে জবাবদিহি নিশ্চিতের বিষয়টি তুলে ধরেন ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, জবাবদিহি নিশ্চিতে প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ (আইসিটি) আদালতে অনেক মামলা করা হয়েছে। তবে এসব মামলায় সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘ একাধিকবার মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে আপত্তি বাংলাদেশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। জাতিসংঘ চাইছে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যেন বাতিল হয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে সরকারকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশে চলমান সংস্কার কার্যক্রম জটিল বলে উল্লেখ করেছেন ভলকার তুর্ক। তিনি বলেন, আইন প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কার্যক্রম কঠিন বিষয়। সেই সঙ্গে বিদ্যমান নিপীড়নমূলক আইন ও প্রতিষ্ঠানগুলো বিলুপ্ত করা ও সংস্কার জটিল। এ সময় সরকারের তিনি সংস্কার কার্যক্রমকে স্বাগত জানান। এ সময়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতাও কামনা করেন ভলকার তুর্ক।
জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের তৈরি প্রতিবেদনকে স্বাগত জানান আইন উপদেষ্টা ড.
সংস্কারের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলকে সহযোগিতার বাইরেও সরকার একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করেছে, যারা সব ধরনের গুমের তদন্ত করেছে। কমিশন একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। সরকার বাংলাদেশের আইনে গুম-সংক্রান্ত অপরাধ যুক্ত করতে যাচ্ছে।
সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে প্রশ্ন এলে আইন উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক সহিংসতা হয়েছে। যাদের ওপর এসব সহিংসতা হয়েছে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বহু বছর ধরে হত্যা ও নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর আমরা তাদের ওপর চালানো সহিংসতার নিন্দা জানাই। তাদের বেশির ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আর কিছু ছিলেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে এটিকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন বলায় তাতে আপত্তি জানান উপদেষ্টা। আমাদের কাছে সত্যতা যাচাইকৃত পরিসংখ্যান রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ভোটাধিকার নিয়ে প্রশ্নের আসিফ নজরুল বলেন, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, পুরো বাংলাদেশের সবার ভোটাধিকার নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করেছি, যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কাজ করছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করতে একমত হয়েছে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে খসড়া চুক্তির আদান-প্রদানও হয়েছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশ নিয়ে সুপারিশ ও বাস্তবায়ন তুলে ধরা নিয়ে ভলকার তুর্ক বলেন, তথ্যানুসদ্ধান প্রতিবেদন ইতোমধ্যে তুলে ধরেছি। প্রতিবেদন তৈরিতে অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে। আমরা এখন আমাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের হালনাগাদ নিয়ে কাজ করব। আশাকরি বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছি।
বাংলাদেশে আমাদের উপস্থিতি সরকারকে গুম, কারিগরি সহযোগিতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করতে পারবে। আমরা মানবাধিকার কাউন্সিলকে সুপারিশ বাস্তবায়নের হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করব।
তিনি বলেন, এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া, সত্য তুলে ধরার জন্য এটি বাংলাদেশ সমাজের জন্য একটি বড় সুযোগ। ধর্মীয় বা জাতিগত নিজেদের মধ্যে যে মতানৈক্যই থাকুক না কেন, বাংলাদেশ একটি দেশ, সবারই নাগরিকত্ব বাংলাদেশি, আমার মনে হয়, সংস্কার চেষ্টার মাধ্যমে এখন এ চেষ্টাই চলছে। ফলে আমাদের সবাইকে সংস্কার কার্যক্রমকে সহযোগিতা করতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায় মানবাধিকারকে সংযুক্ত করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি সব বাংলাদেশির জন্য একটি বিরল সুযোগ, তারা যে গ্রুপ বা কমিউনিটিরই হোক না কেন। এটাই মানবাধিকার দৃষ্টিকোণে একটি বড় আশা। অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে আলোচনায় তিনিও বলেছিলেন, ট্রানজিশন ও সংস্কার মানবাধিকারকে সামনে রেখে করা হচ্ছে। এটি কঠিন একটি কাজ। এটি সহজ নয়। এটিই সঠিক প্রচেষ্টা। এ সংস্কার প্রচেষ্টাকে আমাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।
আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের শেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের চালানো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বল প্রয়োগের ভিডিও ডকুমেন্টারি তুলে ধরা হয়। এরপর জুলাই-আগস্টে আহতদের সহায়তাকারী স্বেচ্ছাসেবক স্থপতি ফারহানা শারমিন ইনু সে সময়ের নিজ অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বড় ভাই মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত, ভাই হারানোর বিচারের দাবি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ভলক র ত র ক আইন উপদ ষ ট ন শ চ ত কর ন উপদ ষ ট আম দ র স দ র ওপর সহয গ ত সরক র র ক জ কর র জন য অপর ধ ক ষমত আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক এমপি এমএ মালেক গ্রেপ্তার
ঢাকার ধামরাইয়ের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) এম এ মালেককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার চারটি মামলা রয়েছে। বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুরের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনূর কবির। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে হামলার ঘটনায় আহত ও নিহতদের স্বজনরা ধামরাই ও আশুলিয়া থানায় একাধিক মামলা করেছেন। এমন চারটি মামলার আসামি এমএ মালেক। আজ বৃহস্পতিবার রিমান্ড চেয়ে তাকে ঢাকার আদালতে পাঠানো হবে।
এমএ মালেক ধামরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
উল্লেখ্য, এমএ মালেক ধামরাই উপজেলার কুশুরা ইউনিয়ন পরিষদের পরপর তিনবারের সাবেক চেয়ারম্যান ও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য হন। এরপর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেনজীর আহমদের কাছে পরাজিত হন তিনি।