ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চারটি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের নাম পরিবর্তন করে ‘শাহ আজিজুর রহমান হল’ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের আদেশ জারির পরপরই বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মতামত দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে শাহ আজিজুর রহমানের নামে হলের নামকরণ করায় সমালোচনা বেশি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী।

এদিকে এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংসদ। বুধবার এক যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহমুদুল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নূর আলম এ ব্যাপারে নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মাওলানা ভাসানীর নামে হলের নামকরণ করার দাবি জানান।

বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, শাহ আজিজুর রহমানের মতো একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধীর নামে আবাসিক হলের নামকরণ জাতির জন্য এক কলঙ্কজনক সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাপরিপন্থী। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের হাতে লুট হয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বৈষম্যহীন দেশ গড়ার শপথই ছিল জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী শাহ আজিজুর রহমানের নামে আবাসিক হলের নামকরণের মধ্য দিয়ে ইবি প্রশাসন মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে বলে তাঁরা মনে করেন।

ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা আরও বলেন, শাহ আজিজুর রহমান ছিলেন একাত্তরে পাকিস্তান ন্যাশনাল ল

লিগের সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আবদুল মোতালেব মালিকের নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্য হন এবং রাজস্বমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের জাতিসংঘে পাঠানো প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। তিনি জাতিসংঘে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।

শাহ আজিজুর রহমান জাতিসংঘে দেওয়া বক্তব্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে সাহায্য করার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে অন্যায় কিছু করেনি। স্বাধীনতাসংগ্রামের নামে সেখানে যা চলছে, তা হলো ভারতের মদদপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের উচিত সেটাকে পাকিস্তানের ঘরোয়া ব্যাপার হিসেবে গ্রহণ করা।’ এ ছাড়া তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছিলেন। এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নামে আবাসিক হলের নামকরণের ঘটনায় ছাত্র ইউনিয়ন ক্ষুব্ধ। তাঁরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান।

মুক্তিযুদ্ধ, ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী ও মানুষের অধিকার আদায়ের অগ্রনায়ক মাওলানা ভাসানীর নামে আবাসিক হলের নামকরণের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, চারটি আবাসিক হল ও একটি ভবনের নাম পরিবর্তন করা হলো। কিন্তু সেখানে মাওলানা ভাসানীর মতো জাতীয় নেতার নামে কোনো স্থাপনা রাখা হয়নি, যা দুঃখজনক। ইবি প্রশাসনের কাছে রাজাকারের নাম পরিবর্তন ও মাওলানা ভাসানীর নামে আবাসিক হলের নামকরণের আহ্বান জানান দুই নেতা।

ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অনি আতিকুর রহমান লেখেন, ‘জনগণের টাকায় তৈরি রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নাম হবে স্ব-স্ব স্থানের নামে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের ক্ষেত্রেও তাই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেহেতু একাধিক হল বা ছাত্রাবাস থাকে, সেগুলোর নামকরণ হবে রাষ্ট্রের জন্ম ও বিকাশের নানা পর্যায়ে ভূমিকা রাখা গুণীজনের নামে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্ম, সংস্কৃতির নানা অঙ্গনের গুণীজন স্থান পাবেন। রাজনৈতিক ক্যাটাগরি বিবেচনায় নিলে ভাসানী, শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ। এঁদের কাউকেই বাদ দিলে হিংসা জিইয়ে রাখা ছাড়া কিছুই হবে না। আজ শেখপাড়ার পাশের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন যে কাজটা করেছে, এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র। এটা জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ফ্যাসিস্ট শক্তিকে এনাবল করার ষড়যন্ত্র।’

আরেক শিক্ষার্থী জিকে সাদিক লিখেছেন, ‘শাহ আজিজুর রহমান একজন চিহ্নিত রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী; বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ও পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহত্যার পক্ষে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই লোক মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের গণহত্যার পক্ষে কাজ করে গেছে। তার নামে আবাসিক হল, জুলাই অভ্যুত্থানের যে চেতনা, সেটার বিরুদ্ধে যায়।.

..‘জুতা নিক্ষেপ করে’ এমন কর্মের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে এর নিন্দা জানিয়ে রাখলাম।’

আরও পড়ুনইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ মুজিবুর হলের নাম বদলে করা হলো শাহ আজিজুর হল২ ঘণ্টা আগে

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, আমরা বড়ই মুনাফেক।’ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিজের ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেশের স্থপতিকে অসম্মান করে কোনো প্রতিষ্ঠান বড় হতে পারে না।’

যোগাযোগ করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক মুখলেসুর রহমান সুইট প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে, এটা ঠিক হয়েছে। কেননা বিগত ১৬ বছর সেই পরিবারতন্ত্র করে গেছে। তবে প্রশাসন পরিবর্তিত নামের ক্ষেত্রে আরও সচেতন হতে পারত।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হ আজ জ র রহম ন শ হ আজ জ র র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে: নুরুল হক

প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে বলে অভিযোগ করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। প্রশাসন নিয়ে তিনি বলেছেন, দু–একটি দলের সঙ্গে সখ্য গড়ে তাদের কাজ চালাতে চাচ্ছে। যারা দলবাজি করবে, তাদের পরিণতি বেনজীর–হারুনের মতো হবে।

জুলাই আগস্টে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গণহত্যার বিচার এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নুরুল হক এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলা বাসস্ট্যান্ডের পাশে এই সমাবেশের আয়োজন করে গণ অধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখা।

গণ–অভ্যুত্থানের আট মাসেও গণহত্যার বিচার ও গণহত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন নুরুল হক। গণ–অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত ও আধিপত্য কায়েমে ব্যস্ত হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, এসব কারণে আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা রাজপথে নেমে হুংকার দিচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর দলগুলো নিজেদের সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। সে কারণেই অভ্যুত্থানের আট মাস পার হলেও তাদের বিচার করা সম্ভব হয়নি।

ফ্যাসিবাদ নির্মূলে শুক্রবার থেকে গণ অধিকার পরিষদের প্রতিরোধ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে নুরুল হক বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের অংশীদার রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা ও ক্ষতিপূরণ নিয়েও রাজনীতি চলছে, যা মোটেও কাম্য নয়।

সড়ক-পরিবহন, কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি-দখলবাজি চলছে বলে অভিযোগ করেন নুরুল হক। তিনি বলেন, কিশোর গ্যাং, মাদক ব্যবসায়ীসহ অপরাধীদের রাজনৈতিক নেতারা আশ্রয়–প্রশয় দিচ্ছেন। জনগণ এগুলো পছন্দ করছে না।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণ অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান। দলটির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি নাজিম উদ্দীন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি রকিবুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফারজানা কিবরিয়া প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ষড়যন্ত্রের পরও মাজারে হামলা বন্ধের দাবিতে ‘সমাবেশ সফল’
  • প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন: মামুনুল হক
  • জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
  • রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মামলায় আমির খসরুসহ ৫ জন খালাস
  • আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে আপ বাংলাদেশের মিছিল
  • ফিলিস্তিনে নির্বিচার মুসলিম গণহত্যা বন্ধের দাবিতে মহাসমাবেশ
  • ‘ম্যাস গ্যাদারিং ফর প্যালেস্টাইনে’ জনতার ঢল, বিশ্বমুসলিম ঐক্যের আ
  • ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ 
  • নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি
  • প্রশাসন আগের মতো দলবাজি শুরু করছে: নুরুল হক