ডিএনসিসির ৬টি খালের খনন-পরিষ্কার কার্যক্রম চলছে
Published: 5th, March 2025 GMT
ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি এলাকার মোট ১৯টি খাল সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ২ ফেব্রুয়ারি প্রথম ধাপে ৬টি খাল সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে জানানো হয়েছে।
খালগুলো হলো- ডিএনসিসি এলাকার ৪টি খাল: বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি এবং ডিএসসিসি এলাকার ২টি খাল: মান্ডা ও কালুনগর। খাল সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ, খাল পরিষ্কার, পাড় সংরক্ষণসহ ব্লু নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে।
বুধবার (৫ মার্চ) ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন মিরপুরে বাউনিয়া ও উত্তরার খিদির খাল পরিদর্শন করেন পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থপতি ফজলে রেজা সুমন এবং খালের খনন ও পরিষ্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা।
পরিদর্শনকালে ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল উদ্ধার ও খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। খালের খনন ও পরিষ্কার এবং অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা একসঙ্গে চলমান। খালের উন্নয়ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে দৃশ্যমান। পানি দূষণ রোধ করতে ভবনের পয়োঃবর্জ্যের সংযোগ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুলশান, বনানী, বারিধারা সোসাইটির নেতাদের সঙ্গে সভা করেছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিটি বাড়িতে পয়োঃবর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ইটিপি স্থাপন করতে বলেছি।
পরিদর্শনকালে পানি সম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে এখানকার খালগুলো খননের বিকল্প নেই। একটু বৃষ্টি হলেই ঢাকার ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আমাদের ঢাকার খালগুলোতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং এজন্য খাল খনন কার্যক্রম চলমান থাকবে। শহরের জীববৈচিত্র্য ঠিক রাখতে খালগুলো আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ৬টি খাল খননের কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং আরও ১৩টি সহ মোট ১৯টি খাল খননের কার্যক্রম এ বছরের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, দিন দিন ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ঢাকার খালগুলো খনন করে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর উন্নত হবে। ঢাকার খালগুলো খননের পর খালের পাড়ে দৃষ্টিনন্দন ফুলের চারা এবং ফল ও পাখিদের খাওয়ার উপযোগী বৃক্ষরোপণ করা হবে।
পরিদর্শনকালে আরো উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এ বি এম সামসুল আলম, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো.
ঢাকা/আসাদ/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এনস স র পর ষ ক র ব যবস থ শহর র খনন র
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ার টক দই ইফতারে ছড়াচ্ছে ঐতিহ্যের স্বাদ
ইফতারে বছরের পর বছর বিশেষ জায়গা দখল করে রেখেছে বগুড়ার বিখ্যাত টক দই। এটি স্বাদ ও গুণে অতুলনীয়। রোজাদারের শরীরে প্রশান্তি আনে; বৃদ্ধি করে হজম শক্তি এবং ইফতারে উপহার দেয় অনন্য স্বাদ।
শতবর্ষের ঐতিহ্য আর খাঁটি দুধের মিশেলের দইটি শুধু বগুড়ায় সীমাবদ্ধ নেই। রাজধানীসহ দেশের নানা ইফতারি বাজারে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দোকান ছাড়াও মিলছে অনলাইনে।
বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেলেও বগুড়ার টক দইয়ের স্বাদ ও মান একেবারে আলাদা। মোলায়েম টক স্বাদ ও ঘনত্ব একে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। দই ব্যবসায়ীরা জানান, খাঁটি দুধের সর থেকে দই তৈরি হয়। ঘনত্ব বজায় রাখতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে জমিয়ে তার পর বাজারজাত করা হয়। নিখুঁত প্রক্রিয়ার জন্যই বগুড়ার দই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দইয়ের তুলনায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।
ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান এলেই বেড়ে যায় বগুড়ার টক দইয়ের চাহিদা। বিভিন্ন শোরুম ছাড়াও মুদি দোকান, রাস্তা, পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ী টেবিল ও ফেরি করে বিক্রি হয়। দোকানে ৭০ থেকে ২৮০ টাকায় টক ও সাদা ভিন্ন স্বাদের দই বিক্রি হয়। ফুটপাতে নেয় আকারভেদে ৬০ থেকে ১৮০ টাকা। ফুটপাতের দই ঘনত্বে কিছুটা পাতলা হলেও ইফতারে এর আকর্ষণ ভিন্ন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টক দইয়ের জোগান দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।
রমজানে জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার টক ও সাদা দই বিক্রি হচ্ছে, যা অন্য সময়ের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ। শহরের ব্যবসায়ী হিরন বাড়িতে দুই শতাধিক সাদা দই তৈরি করে নবাববাড়ি ফুটপাতে বসেছিলেন। মাত্র এক ঘণ্টায় বিক্রি শেষ। হিরন জানান, দই তৈরিতে যে সময় প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা প্রচুর, ঠিকমতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
বগুড়া আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসেন আলী আলাল জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দই আমেরিকায় গেছে বহুবার। প্রবাসীরা বগুড়ায় এসে স্বজনের জন্য নিয়ে গেছেন। তিনি মনে করেন, পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানিতে সরকারি প্রণোদনা দরকার। এখন নতুন পদ্ধতিতে মেশিনে দই বানানো হয়। ফলে খাদ্যমান ঠিক থাকে।
টক দই কিনতে আসা আবুল কাদের জানান, রোজার ক্লান্তি দূর করতে সাদা দইয়ের ঘোল খুব উপকারী। পরিবারের সবার পছন্দের। সঙ্গে নিয়মিত মাঠা কেনা হয়। মাঠা সাদা ও টক দইয়ের মিশ্রণে তৈরি। দুপুরের পর শহরে মাঠা বিক্রির কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ঘিরে ভিড় লেগে যায়।
চিনিপাতা দইয়ের মালিক মুক্তার আলম জানান, বগুড়ায় দিনে গড়ে ৩০ টন দই তৈরি হয়। ছুটি ও উৎসবের দিনে আরও ১০ টন চাহিদা বেড়ে যায়। এখন মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় টক বা সাদা দই পছন্দের শীর্ষে রাখছেন।
বগুড়া শহরেই রয়েছে শতাধিক দইয়ের দোকান। শহরের আশপাশে রয়েছে আরও দুই শতাধিক। এসব দোকানে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি ক্রেতাদের অভিযোগ, বগুড়ার দইয়ের স্বাদ, গুণগত মান ও ঘনত্ব আগের মতো নেই। কারণ হিসেবে জানা যায়, রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে মুনাফার আশায় নষ্ট করছেন এর গুণগত মান। তারা দুধের পরিবর্তে গুঁড়া দুধ, স্টার্চ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানে তৈরি করছেন দই। বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা বগুড়ার আসল ও নকল দইয়ের পার্থক্য করতে পারছেন না। ফলে শতবর্ষী দই শিল্পের সুনাম ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে।