শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই: আমীর খসরু
Published: 5th, March 2025 GMT
শেখ হাসিনার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের কোনো সম্পর্ক নেই, নির্বাচনেরও কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘শেখ হাসিনার বিচার চায় না এমন লোক বাংলাদেশে কে আছে আমার জানা নেই।... আমরা আইনের শাসনে যদি বিশ্বাস করি, বিচারিক প্রক্রিয়া চলছে, চলবে। সেটাতে শেখ হাসিনার শাস্তি তখন হবে, তার পরেও হবে। তাঁর অনেকগুলো মামলা আছে, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা পর একটার সমাধান হতেই থাকবে।’
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে জাহাজশিল্পের এক সেমিনারে অংশ নেওয়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথাগুলো বলেন। বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসবিআরএ) এ আলোচনার আয়োজন করে।
উল্লেখ্য, গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রায়েরবাজারে অভ্যুত্থানের সময় শহীদ হওয়া ছাত্র-জনতার কবর জিয়ারত করতে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। এরপর দলটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছিলেন, ‘যত দিন না পর্যন্ত খুনি হাসিনাকে ফাঁসির মঞ্চে দেখছি, তত দিন যেন কেউ ভুলক্রমেও নির্বাচনের কথা না বলে।’
সারজিসের ওই বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে এটার জন্য হবে না নির্বাচন, কালকে আরেকটার জন্য হবে না, পরশু আরেকটার জন্য হবে না, এ রকম কত কথাই তো শুনছি। এই সব কথাবার্তা বলে নির্বাচনী ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পিছিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, এটা পরিষ্কার কথা।’
গত ১৬ বছর নির্যাতিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে বিদায় করেছে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হবে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হবে, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারবে, দল গঠন করতে পারবে, তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে, তাদের মতামত জনগণের কাছে নিয়ে যেতে পারবে। সুতরাং যেকোনো দল তাদের মতামত নিয়ে আসতে পারে।
আমীর খসরু বলেন, আগে ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে আসতে হবে… এরপর যেকোনো বিষয় সংসদে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে, তারপর সংসদে পাস হবে। সোজা কথা, ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব সিদ্ধান্ত আসবে সেখানে কারও তো কোনো সমস্যা নেই; কিন্তু আমি এটা প্রস্তাব করছি, এটা হতে হবে, এটা করতে হবে, এ ধরনের মনমানসিকতা যদি থাকে, তাহলে তো আবার শেখ হাসিনার কথা মনে পড়ে যায়। ঐকমত্য হলে ভালো কিন্তু ঐকমত্য না হলে আপনাকে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া পথ নেই।
বিএসবিআরএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ইয়াসমীন সুলতানার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যাকন অ্যারাল্ড গুলব্র্যান্ডসেন, উপ-রাষ্ট্রদূত খিজস উউস্ট্রা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার হুবার্ট ব্লুম, জাইকার শিপ রিসাইক্লিং উপদেষ্টা ওকামোটো আকিরা, বিএসবিআরএর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শওকত আলী চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী চৌধুরী, চট্টগ্রাম শ্রমিক দলের এএম নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
পুনর্বহালের দাবি জানালেন অপসারিত কাউন্সিলররা
অন্তর্বর্তী সরকার দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের এক নোটিশে অপসারণ করলেও তাঁরা সবাই নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে করেননি। অপর দিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হলেও স্বপদে বহাল আছেন।
বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশন আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটরিয়ামে কাউন্সিলর সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে বক্তারা এসব অভিযোগ করেন। এ সময় বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অপসারিত কাউন্সিলররা সরকারের কাছে তাঁদের স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানান।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন ও ৩২৩টি পৌরসভার সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের অপসারণ করে দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। পরে কাউন্সিলরদের স্থলে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার।
এই প্রশাসকদের বিষয়ে বক্তারা বলেন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় নিয়োগ দেওয়া প্রশাসকদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ দেওয়া এসব প্রশাসক আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহযোগী ছিলেন। জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ করে সরকার সাধারণ মানুষদের বঞ্চিত করছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও স্বপদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে কাউন্সিলররা এই সমাবেশের আয়োজন করেন।
সমাবেশে ঝিনাইদহের একটি পৌরসভার সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বুলবুলি ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। কিন্তু এখন সেবা দিতে পারছি না। পৌরসভার যেসব কর্মকর্তাদের প্রশাসক পদে বসানো হয়েছে। তাঁরা মাসে এক দিন অফিসে আসেন। অথচ তাঁরাই ফ্যাসিবাদী সরকারের সহযোগী ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আমার স্বামী-সন্তান সবাই মামলা হামলার শিকার হয়েছিল। আওয়ামী–সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন করতে গিয়ে তারা বাড়িতে ঘুমাতেও পারত না।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল হাসান বাচ্চু বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। অথচ সব কাউন্সিলরকে এক পাল্লায় নিয়ে অপসারণ করা হলো। যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, আইনি পক্রিয়ায় তাঁদের অপসারণ করলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’
এই সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, তিনি ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর ১৮–দলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে হরতাল পালন করতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। রাজশাহীর কনস্টেবল সিদ্ধার্থ হত্যা মামলায় এখনো আসামি হিসেবে আছেন বলেও জানান তিনি।
সমাবেশে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান বলেন, ‘কলমের খোঁচায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অপসারণ দুঃখজনক। এটার সঙ্গে আমলারা জড়িত। প্রশাসক হয়ে তাঁরা এখন রাতারাতি কোটিপতি হয়ে যাচ্ছেন।’
স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অর্থ দিয়ে ভোট কেনাবেচার অভিযোগ তুলে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেন, দ্রুত সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে সাধারণ জনগণের ভোগান্তি লাঘব করতে হবে। পাশাপাশি ছাত্রজনতার আন্দোলনে হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে, অন্যথায় ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে। প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করে জনগণের মতামত জানতে হবে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অপসারণের কারণে প্রান্তিক জনগণ ভোগান্তিতে রয়েছেন উল্লেখ করে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, যাচাই-বাছাই করে তাঁদের স্বপদে পুনর্বহাল করা উচিত। এ সিদ্ধান্তের জন্য সাত থেকে আট মাস সময় ব্যয় করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলরদের দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বপদে পুনর্বহালের সময় বেঁধে দেন বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ন্যথায় আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করতে বাধ্য হব।’
বাংলাদেশ সিটি ও পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আকন, দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার কাউন্সিলররা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দুই শতাধিক সাবেক কাউন্সিলর।