সোনারগাঁ থানায় দায়ের করা বৈষম্য বিরুধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টার মামলার অন্যতম আসামি ওসমান গনীকে সিদ্ধিরগঞ্জে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার জানায়, সোনারগাঁও থানা থেকে পুলিশ এসেছিলো। তারা এবং সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ মিলে ওই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। আটককৃত ওসমান গনীকে আবার সোনারগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওসমান গনী সিদ্ধিরগঞ্জের সানারপাড় এলাকায় মৃত আব্দুল আলীর ছেলে

জানা গেছে, গেল ২০২৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকা সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর সেনপাড়া এলাকায় সিনহা গার্মেন্টস এর সামনে রুহুল আমিনকে হত্যা চেষ্টা মামলায় এজহারভুক্ত আসামি ওসমান গণী।

এ মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে আসামী করে রুহুল আমিন বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলা নাম্বার-১০। মামলায় ওসমান গনী ১৫৯ নাম্বার এজহার ভুক্ত আসামি।

এদিকে ওসমান গনি গ্রেপ্তারের পর তাকে ছাড়িয়ে নিতে একটি পক্ষ সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় গিয়ে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামীলীগে তার কোন পদ না থাকলেও আওয়ামী কর্মী হিসেবে সকল মিছিল-মিটিংয়ে সক্রিয় ছিল ওসমান গনি।

সে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহবায়কও সাবেক নাসিক ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজালাল বাদলের অন্যতম সহযোগী। আওয়ামী দোসর বাদল, শাহ নিজাম, মহিউদ্দিন মোল্লার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল ওসমান গনি।

বিগত সরকারের আমলে বাদল, মহিউদ্দিন মোল্লার হয়ে ৩নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় নির্বিঘ্নে ভূমিদস্যূতা চালিয়েছে ওসমান গনি। তার বিরুদ্ধে এলাকায় ভূমিদস্যুতার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ভূমিদস্যুতা করে অঢেল সম্পত্তি বানিয়েছে তিনি।

সানারপাড় এলাকার বাসিন্দা আফরাফ উদ্দিন জানান, ওসমান গনী এলাকায় একজন ভুমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। জাল দলিল করে মানুষের জমাজমি দখল করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

এছাড়া নিরীহ লোকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তিন নাম্বার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের সহযোগী।

মামলার বাদি রুহুল আমিন জানান, আমি কাঁচপুর সিনহা গার্মেন্টস এলাকা থেকে আসার সময় ওসমান গনীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা স্বশস্ত্র অবস্থায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালায়। এসময় ওদের ছোড়া গুলি আমার পায়ে লাগে। আজও আমি এই পা নিয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছি। আমি ওসমান গণীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।

সোনারগাঁ থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল বারী জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা চেষ্টা মামলায় ওসমান গনীকে সিদ্ধিরগঞ্জ সানারপাড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ মামলার বাদী রুহুল আমিন। তাকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় এজহার ভুক্ত আসামী ওসমান গনী।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ থ ন গ র প ত র কর র হ ল আম ন ওসম ন গ এল ক য়

এছাড়াও পড়ুন:

নদী-খালের বুকে জেগে ওঠা এক মায়ার শহর খুলনা

‘ঘুরে এলাম খুলনা শহর রূপসা নদীর তীরে, রূপসা নদীর রূপের মায়া ডাকে ফিরে ফিরে, পুরোনো এই নগরী তো ইতিহাসে ভরা, যেমন তাহার গুণের বাহার রূপেতেও সে সেরা।’ খুলনা শহরকে নিয়ে এমন ছন্দে ছন্দে কবিতা লিখেছেন অবিরুদ্ধ মাহমুদ। কবিতার নাম দিয়েছেন ‘ঘুরে এলাম খুলনা’।

আসলেই খুলনা এক মায়ার শহর, সমৃদ্ধ শহর, কোলাহলমুক্ত নির্মল শ্বাস নেওয়ার শহর। যেখানে নদী গল্প বলে আর খাল গেয়ে ওঠে ইতিহাসের গান। বহুকাল আগে, যখন পদ্মা ও মেঘনার মিলিত স্রোতে দক্ষিণ বাংলার বুক চিরে বয়ে চলত রূপসা, ভৈরব আর আটরা খাল, তখন এই অঞ্চল ছিল নিবিড় বনভূমি ও জলাভূমির এক বিস্ময়কর মিশেল। ইতিহাস বলে, খুলনার গোড়াপত্তন হয়েছিল নদীপথকে ঘিরেই। স্থানীয় লোককথা, প্রত্নতত্ত্ব ও সাহিত্যিক দলিল মিলিয়ে খুলনার জন্মকথা যেন এক রূপকথারই প্রতিচ্ছবি।

‘খুলনা’ নামকরণটি নিয়েও অনেক কিংবদন্তি ও গল্প প্রচলিত আছে। অনেকের মতে, ‘খুলনা’ নামটি এসেছে ‘খুল্লতন নগর’ থেকে, যেখানে দেবতা শিবের পূজা–অর্চনা হতো। আবার কারও মতে, ‘খুল’ মানে জলপথ বা খাল, আর ‘না’ মানে নদীর প্রবাহ থামা। অর্থাৎ যেখানে খাল থেমে নদীতে মেশে, সেখান থেকেই নাম হয়েছে ‘খুলনা’।

খুলনার পুরাকীর্তি নামে একটি বই লিখেছেন মিজানুর রহমান। তিনি বর্তমানে ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। তিনি বলেন, এক সওদাগরের দুই মেয়ে ছিল। এক মেয়ের নাম খুল্লনা ও আরেকজনের নাম ছিল অহনা। ধারণা করা হয়, ওই সওদাগর তাঁর মেয়ের নামানুসারে শহরের নাম রাখেন খুলনা। এ ছাড়া সপ্তদশ শতকে খুলনার ভৈরব নদ থেকে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধার করা হয়। সেই জাহাজের গায়ে Culna শব্দটি লেখা ছিল। ব্রিটিশ আমলে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়, সেখানেও খুলনাকে Culna লেখা হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫ শতকে সুফি সাধক খানজাহান আলী যখন দক্ষিণ বাংলায় আসেন, তখন তিনি সুন্দরবনের প্রান্তঘেঁষা এ অঞ্চলটিকে সভ্যতার আলোয় আলোকিত করেন। তাঁরই নেতৃত্বে খনন করা হয় নানা দিঘি, খাল ও রাস্তা। ‘ডাকাতদের জনপদ’ থেকে ‘আধ্যাত্মিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র’—এই রূপান্তরের শুরু সেখান থেকেই।

অনেক পুরোনো শহর খুলনা। শহরের মিউনিসিপ্যাল বোর্ড গঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। খুলনা শহরের রয়েল মোড়ে

সম্পর্কিত নিবন্ধ