টকশোতে এক ছাত্র প্রতিনিধিকে ‘রাজাকারের ছেলে’, ‘আল-বদরের ছেলে’ বলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেছেন ছাত্র-জনতা। এ সময় তারা অবিলম্বে ফজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার দাবি করেন।

বুধবার (৫ মার্চ) বিকেলে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে ফজলুর রহমানের ছবিতে অগ্নিসংযোগ করেন আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলোর নিষিদ্ধের দাবিতে ২১দিন ধরে গণঅবস্থানকারী ছাত্র-জনতা।

এর আগে, অনলাইন টক শো ‘ফেস দ্য পিপল’-এ ছাত্র প্রতিনিধি মিসবাহ উদ্দিনকে বিএনপি নেতা ফজুলর রহমান ‘রাজাকারের ছেলে’, ‘আল-বদরের ছেলে’ বলে সম্বোধন করেন। মঙ্গলবার রাতে এই টক শো’র ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে।

এ সময় জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান বলেন, “আজকে আমরা ফজলুর রহমানের ছবিতে আগুন জ্বালাচ্ছি। কারণ ৫ আগস্টের পরে আমরা যে নতুন স্বাধীনতা পেয়েছি, তিনি তা মানতে পারেননি। তিনি যেখানে সেখানে ছাত্রদের, বিপ্লবীদেরকে যা মন চায়, তা বলে কটাক্ষ করছেন। তিনি ফ্যাসিবাদের সুরে কথা বলছেন। সর্বশেষ একটি টকশোতে একজন ছাত্র প্রতিনিধিকে তিনি রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। শেখ হাসিনা এই রাজাকারের বাচ্চা বলে জুলাই গণহত্যা ঘটিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন।”

তিনি বলেন, “আমরা ফজলুর রহমানসহ সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, স্বাধীন বাংলাদেশে নতুন করে কোনো তরুণকে রাজাকারের সন্তান বললে তা বরদাস্ত করা হবে না। নব্য ফ্যাসিবাদীদের বাংলাদেশে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।”

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ অবিলম্বে বিএনপি নেতা ফজুলর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, “একজন ছাত্রকে ‘রাজাকারের ছেলে’ বলায় ফজুলর রহমানকে সমগ্র ছাত্র সমাজের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।”

বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, “ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার প্রেতাত্মা ফজলুর রহমানের ঘাড়ে চেপেছে। তা না হলে ৫ আগস্টের পর আমাদের ছাত্র ভাইকে রাজাকারের ছেলে সম্বোধন করার দুঃসাহস তার হত না।”

এ প্রতিবাদী কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার, আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সদস্য তামিম আনোয়ার, ইসতিয়াক আহমদ ইফাত, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার, সহকারী সদস্য সচিব আশরাফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য সচিব মুহিব মুশফিক খান, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মো.

আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফজল র রহম ন র ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

অবশেষে সব বই সরবরাহ করল এনসিটিবি

শিক্ষাক্রম পরিবর্তন, পাঠ্যবই পরিমার্জনসহ কিছু সমস্যার কারণে এবার শিক্ষা বিভাগ থেকে আগেই ধারণা দেওয়া হয়েছিল, এবার বই পেতে কিছুটা দেরি হবে। কিন্তু একপর্যায়ে এই দেরি মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায়। বই পেতে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। এ নিয়ে সমালোচনাও হয়েছে। অবশেষে শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রায় তিন মাসের মাথায় সারা দেশের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের পাঠ্যবই সরবরাহ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৪ মার্চ সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহের অনুমোদন বা পিডিআই দেওয়া হয়েছে। তাঁদের তথ্যমতে, সব শিক্ষার্থীই বই পেয়ে যাওয়ার কথা। না পাওয়ার অভিযোগ তাঁদের কাছে আসেনি। তবে, কোথাও কোথাও কারিগরি স্তরের নবম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী সব বই পেতে কিছু অসুবিধায় পড়েছে বলে তাঁরা শুনেছেন।

আগামী বছর যাতে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা সব বই পেতে পারে, সে জন্য এখন থেকে বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী, সদস্য (শিক্ষাক্রম), জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড

পাঠ্যবই ছাপা হওয়ার পর সেগুলোর মান ঠিক আছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করে সরবরাহের আদেশ দেওয়া হয়। সেগুলো উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ বই সংগ্রহ করে তা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করে। ফলে পাঠ্যবই সরবরাহ করার পরে শিক্ষার্থীদের হাতে তা বিতরণ করতে কয়েক দিন লেগে যায়। এবার যখন সর্বশেষ পাঠ্যবই সরবরাহ হয়েছে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছিল।

পবিত্র রমজান এবং ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লম্বা ছুটি শেষে গতকাল অনেক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিদ্যালয় খোলেনি। গতকাল রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষক জানালেন, ইতিমধ্যেই তাঁরা সব শিক্ষার্থীর জন্য বই পেয়ে তা বিতরণও করেছেন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ওবাইদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ছুটি শেষে আগামীকাল বুধবার তাঁদের বিদ্যালয় খুলবে। তবে ইতিমধ্যে তাঁদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য সব বিষয়ের বই পেয়েছেন।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার গতকাল প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁদের বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ছাত্রী ৫৩৬ জন। সব শিক্ষার্থীই ঈদের আগে বই পেয়েছে।

প্রসঙ্গত, ছুটির কারণে সব বিদ্যালয়ের সব তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

এনসিটিবির সূত্রমতে, চলতি শিক্ষাবর্ষে চার কোটির মতো শিক্ষার্থীর জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সাড়ে ৩৯ কোটির বেশি বই ছাপানো হয়। এর মধ্যে মাধ্যমিকে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ) মোট বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি ৪০ লাখ ৪১ হাজার ৬৯২টি। অন্যদিকে প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবই ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজারের মতো। এনসিটিবির প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কর্মকর্তারা সবাই পাঠ্যবই সরবরাহ করার তথ্য দিয়েছেন।

দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল ২০১০ সালে। তবে গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু এবার বই দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে।

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে এবার শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই ছাপানো হয়। পাঠ্যবই পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজ দেরি হবে, তা বোঝাই যাচ্ছিল ছিল। কিন্তু দরপত্র, অনুমোদন, চুক্তির মতো কাজগুলোও যথাসময়ে না করায় এবং কাগজসংকটের কারণে আরও বেশি দেরি হয়।

গত দু-তিন বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে ১ জানুয়ারি উৎসব করে বই বিতরণ শুরু হলেও দরপত্রসংক্রান্ত জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছরের শুরুতে সব শিক্ষার্থীর হাতে সব নতুন বই দেওয়া যায়নি। সব বই দিতে কিছুদিন দেরি হয়েছিল। কিন্তু এবার বই দিতে মাত্রাতিরিক্ত দেরি হয়েছে।

বর্তমানে এনসিটিবির নিয়মিত চেয়ারম্যান নেই। সম্প্রতি অবসরে গেছেন এত দিন চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান। বর্তমানে চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থাটির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ইতিমধ্যে সব বই সরবরাহ করা হয়েছে। আগামী বছর যাতে বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা সব বই পেতে পারে, সে জন্য এখন থেকে বই ছাপানোর কাজের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ