চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে তারা ‘যেকোনো ধরণের’ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য শুল্কের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর মঙ্গলবার চীনা দূতাবাস এই সতর্কবার্তা দিয়েছে। 

ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে চীনা পণ্যের উপর আরো শুল্ক আরোপ করেছেন। এ ঘটনার পর বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশ বাণিজ্য যুদ্ধের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। চীন দ্রুত মার্কিন কৃষিপণ্যের উপর ১০-১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

চীনা দূতাবাস এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছে, “যদি আমেরিকা যুদ্ধ চায়, তা শুল্ক যুদ্ধ হোক, বাণিজ্য যুদ্ধ হোক বা অন্য যেকোনো ধরণের যুদ্ধ হোক, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত।”

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে এটি চীনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য। বার্ষিক ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের জন্য বেইজিংয়ে যখন চীনা নেতারা জড়ো হচ্ছেন তখন এই কড়া বার্তা দেওয়া হলো। বেইজিংয়ের নেতারা চীনের জনগণকে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছেন যে, বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকি থাকা সত্ত্বেও দেশের প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে তারা আশাবাদী।

বুধবার, চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ঘোষণা দিয়েছেন, চীন চলতি বছর আবারো তার প্রতিরক্ষা ব্যয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি করবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছেন, ‘এক শতাব্দিতে অদেখা পরিবর্তনগুলো বিশ্বজুড়ে দ্রুত গতিতে ঘটছে।’
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

কর্ণফুলী নদীতে দখলবাজি

কর্ণফুলী নদীতে চলছে দখলবাজি। ৯০টি অয়েল ট্যাঙ্কারে বৈধ ঠিকাদার খাজা শিপিং লাইন্সকে নাবিকদের ঘাট পারাপার, রশি বাঁধা ও জাহাজ পরিষ্কারের কাজ করতে দিচ্ছে না ‘তেল শুক্কুর’ বাহিনী। ঠিকাদারকে জিম্মি করে এসব কাজ করছে তারা।

কর্ণফুলীর পাঁচটি ঘাটে খাজা শিপিংয়ের কাজে বাধা দিয়ে মাসে প্রতিষ্ঠানটির ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই বাহিনী। এ ছাড়া ট্যাঙ্কারগুলো থেকে মাসে ৭০ থেকে ৯০ হাজার লিটার কালো তেল নিয়ে যাচ্ছে। খোলাবাজারে এই তেল বিক্রি করে মাসে প্রায় ৭০ লাখ টাকা পাচ্ছে তারা।

খাজা শিপিং লাইন্সের মালিক মো. ইকবাল হোসেন রেহান বলেন, ‘তিন বড় কোম্পানিসহ কয়েকটি কোম্পানির ৯০টি অয়েল ট্যাঙ্কারে কাজের বৈধ ঠিকাদার আমরা। ট্যাঙ্কারগুলোতে দেড় মাস কাজ করেছি। কিছুদিন ধরে তেল শুক্কুর বাহিনী পদে পদে আমাদের কাজে বাধা দিচ্ছে, কর্মচারীদের মারধর করছে। পানিতে ফেলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে। থানা ও আদালতে মামলা করেছি। কর্ণফুলী নদীতে শুক্কুর বাহিনীর দখলবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। আমাদের বৈধ আয়ও তারা জোর করে ছিনিয়ে নিচ্ছে।’

শ্রমিক থেকে শতকোটি টাকার মালিক শুক্কুর

দুই যুগ আগেও শুক্কুর বাহিনীর মো. শুক্কুর ছিলেন মহিষ শ্রমিক। এখন তিনি শতকোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী জুলধা ইউনিয়নে তাঁর আছে বিশাল বাড়ি। তাঁর বিরুদ্ধে তেল চোরাচালানের অভিযোগে ১৮টি মামলা হয়েছে। পতেঙ্গা গুপ্তাখাল ডিপো এলাকাসহ বঙ্গোপসাগরের চোরাই তেলের একক নিয়ন্ত্রক তিনি।

রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সঙ্গে সখ্যের কারণে সব সময়ই ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখন বিএনপি নেতাদের ছত্রছায়ায় কর্ণফুলীতে দখলবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন নানা অবৈধ ব্যবসা।

৯০ জাহাজের বৈধ ঠিকাদার খাজা

অয়েল ট্যাঙ্কার কোম্পানি ‘কিং ফিশার’ গত ২২ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে খাজা শিপিং লাইন্সকে তাদের ২৮টি ট্যাঙ্কার থেকে নাবিকদের নৌকা পারাপার, রশি বাঁধা ও ছাড়ার অনুমতি দেয়। কর্ণফুলী নদীর আরএম ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৯ নম্বর ঘাটে ঠিকাদার হিসেবে কাজের অনুমতি দেয়। এ ছাড়া হাইস্পিড গ্রুপ অব কোম্পানিজ গত ১৫ জানুয়ারি কর্ণফুলীর পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার ৩, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ঘাটে তাদের ২২টি ট্যাঙ্কার জাহাজে নৌকার পারাপার, রশি বাঁধাসহ সার্বিক কাজের অনুমতি দেয়। নটিক্যাল শিপিং এজেন্সিজ লিমিটেডও খাজা শিপিং লাইন্সকে তাদের সাতটি ট্যাঙ্কারের নাবিকদের ঘাট পারাপার, জাহাজ লোডিংয়ের সময় রশি বাঁধা ও ছাড়ার কাজে ঠিকাদার নিয়োগ করে। এ ছাড়া পদ্মা, মেঘনা, যমুনা অয়েল কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানির আরও ২০টি ট্যাঙ্কারে কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু কাজ করতে গেলে শুক্কুর বাহিনীর লোকজন প্রথমে বাধা দেয়, তারপর তাদের নৌকাকে তাড়িয়ে দেয়। কর্মচারীদের মারধর করে কর্ণফুলী নদীর নির্দিষ্ট এলাকাছাড়া করে। এ ঘটনায় নগরের ইপিজেড থানায় খাজা শিপিং লাইন্স জিডি করে। গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রাম আদালতে একটি মামলাও করে খাজা শিপিং। এতে শুক্কুর ছাড়াও তসলিম মাঝি, রফিক, মনির, ইলিয়াস, জামাল, আইয়ুব, উসমান ও মো. সোলেমানের বিরুদ্ধে নদীতে দখলবাজি, নির্যাতন, মারধর করে জিম্মি করার অভিযোগ আনা হয়।

কর্ণফুলী নদীতে অয়েল ট্যাঙ্কার ও অন্যান্য জাহাজ থেকে জোর করে নামমাত্র মূল্যে প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৯০ হাজার লিটার তেল সংগ্রহ করে শুক্কুর বাহিনী। সেই তেল শহরে এনে পাইকারদের কাছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করা হয়। তাদের কাছ থেকে একশ্রেণির ডিপো মালিক ৬৮ থেকে ৭০ টাকা লিটার দরে তা কিনে নেন। মাসে এ খাতে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় শুক্কুর বাহিনী। তারা নদীতে কোনো বৈধ ঠিকাদারকে কাজ করতে দেয় না। 

শুক্কুরের সিন্ডিকেটে ১৭ দখলবাজ

খাজা শিপিং ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ট্যাঙ্কার জাহাজে সরকারের বৈধভাবে নিয়োগ করা ঠিকাদারদের কর্ণফুলীতে নামতেই দেয় না শুক্কুর বাহিনী। এ বাহিনীতে আছে ১৭ দখলবাজ। তাদের প্রত্যেকের নামেই আছে তেল চোরাচালান, মারধর, নির্যাতনের মামলা। তারা হলেন– রফিক, নাছির, আলী, বেলাল, নুরুচ্ছফা, জাফর, জিয়া, জসিম, মহিউদ্দিন, তৈয়ব, হোসেন, হারুন, খোরশেদ, আনছার, আমির, কাদের ও ইউসুফ।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শুক্কুর বলেন, ‘খাজা শিপিংয়ের কাজে আমরা বাধা দিচ্ছি না। তাদের কাজ তারা করছে, আমাদের কাজ আমরা করছি। আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।’

সদরঘাট নৌ থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, তেল চোর চক্রের বিরুদ্ধে কর্ণফুলী নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে নৌ পুলিশ। প্রতি মাসে দুই থেকে তিনটি মামলাও হচ্ছে। শুক্কুর তেল চোরাচালানের অন্যতম হোতা। তাঁর বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা আছে। ইপিজেড থানার এসআই আরিফ হোসেন বলেন, খাজা শিপিং একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। তদন্ত শুরু হয়েছে। কর্ণফুলীতে তাদের কাজে বাধা দেওয়ার সত্যতা পেয়েছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ