নির্বিচার আমলা ছাঁটাই ট্রাম্পকে যেভাবে নিঃসঙ্গ করবে
Published: 5th, March 2025 GMT
হারমান হেসের দ্য জার্নি টু দ্য ইস্ট উপন্যাসের কাহিনিতে দেখা যায়, একদল তীর্থযাত্রী আধ্যাত্মিক অভিযানে বের হন। তাঁদের গাইড হিসেবে থাকেন লিও নামের এক ব্যক্তি। লিও একজন বিনয়ী সেবক। তিনি তীর্থযাত্রীদের নানা ধরনের কাজ করে দেন। তাঁদের প্রয়োজন মেটান এবং তাঁদের সংগঠিত রাখেন। কিন্তু যাত্রার মাঝামাঝি লিও হঠাৎ লাপাত্তা হয়ে যান আর তীর্থযাত্রাটি বিশৃঙ্খলায় ভেঙে পড়ে। তীর্থযাত্রীরা (যাঁরা নিজেদেরই এ যাত্রার নেতা ভাবছিলেন) লিওর শান্ত, কিন্তু অপরিহার্য উপস্থিতির অভাবে পথ হারিয়ে ফেলেন।
ঠিক একইভাবে অভিজ্ঞ সরকারি পেশাজীবীদের হারানোর মাধ্যমে রাষ্ট্রের গোছানো সবকিছু তছনছ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয়। এই সরকারি পেশাজীবীরা হলেন ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভেন্ট, প্রশাসক ও বিশেষজ্ঞ। যদিও হেসের গল্পে লিও ছিলেন একজনমাত্র মানুষ, তবে লিও সেসব বেনামি আমলা ও সিভিল সার্ভেন্টদের প্রতিনিধিত্ব করেন, যাঁরা রাষ্ট্র নামের জাহাজকে ভাসিয়ে রাখেন।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন যে সমস্যা চলছে, তার কেন্দ্রে রয়েছে ‘প্রিন্সিপাল-এজেন্ট ডিলেমা’ (মূল ব্যক্তি ও তাঁর প্রতিনিধির দ্বন্দ্ব) নামের একটি ধারণা। ১৯৭০-এর দশকে অর্থনীতিবিদ স্টিফেন রস, মাইকেল জেনসেন ও উইলিয়াম এইচ মেকলিং এ ধারণার প্রবর্তন করেছিলেন।
এ ধারণা বোঝায়, যখন একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী (প্রিন্সিপাল বা মূল ব্যক্তি) অন্য কাউকে (এজেন্ট বা প্রতিনিধি) তার পক্ষে কাজ করার দায়িত্ব দেয়, তখন এই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। কারণ, প্রতিনিধির নিজস্ব উদ্দেশ্য, জ্ঞান বা পছন্দ মূল ব্যক্তির উদ্দেশ্যের সঙ্গে সব সময় মিল না–ও খেতে পারে।
সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে এ সমস্যা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। রাজনৈতিক নেতারা (প্রিন্সিপাল) তাঁদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের (এজেন্ট) ওপর নির্ভর করেন। নেতারা চান, তাঁদের নির্দেশনা হুবহু অনুসরণ করা হোক। কিন্তু কর্মকর্তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা, নৈতিকতা ও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রেখে কাজ করেন। ফলে অনেক সময় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দেন, যা রাজনৈতিক নেতাদের চাওয়া অনুযায়ী না–ও হতে পারে।
এই অসামঞ্জস্য কাটিয়ে উঠতে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রিন্সিপালরা এজেন্টদের প্রতিস্থাপন করার বা সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এমন শুদ্ধি অভিযান সাধারণত উল্টো ফল দেয়। কারণ, একবার একজন সন্দেহপ্রবণ নেতা যখন তাঁর নিজের এজেন্টদের সরিয়ে দেন, তখন তিনি তাঁর কার্যকরভাবে শাসন করার উপায় হারিয়ে ফেলেন।
আধুনিক প্রশাসনিক তত্ত্বের ভিত্তি যিনি স্থাপন করেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেই জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার দেখিয়েছিলেন, কার্যকর শাসনের জন্য একটি পেশাদার আমলাতন্ত্র প্রয়োজন। অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীরা বাজেট, আইন প্রয়োগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো প্রকল্পের মতো জটিল কাজ বোঝেন এবং পরিচালনা করতে পারেন। যদি নিয়মভিত্তিক ও যোগ্যতার ওপর নির্ভরশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকে, তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের খামখেয়ালিপনার কারণে শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।শাসনকার্যে সন্দেহপ্রবণতা (প্যারানোইয়া) একটি বিপজ্জনক মানসিকতা। যদি কোনো নেতা সব সময় তাঁর নিজস্ব কর্মকর্তাদের বিশ্বাসঘাতক বলে সন্দেহ করেন, তাহলে তিনি একটা পর্যায়ে এমন শত্রু দেখতে শুরু করবেন, প্রকৃতপক্ষে যার কোনো অস্তিত্বই নেই। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ডিপ স্টেট’ বা পর্দার আড়ালের শক্তি থেকে হুমকি আসছে বলে মনে করতেন, যদিও বাস্তবে তা কতটা সত্য ছিল, তা তর্কসাপেক্ষ।
এই মানসিকতার ফলে একটি দুষ্টচক্র তৈরি হয়। যখন নেতারা সন্দেহের বশে তাঁদের কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন বা সরিয়ে দেন, তখন সরকারের অভ্যন্তরীণ জ্ঞান ও দক্ষতা কমে যায়। এতে প্রশাসন দুর্বল ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে সরকারের কার্যক্রম বিশৃঙ্খল হয়ে যায়, সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
সরকারি সংস্থাগুলোর (যেমন এফবিআই, সিআইএ) বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের জোরপূর্বক অবসরে পাঠানো হলে বা পদত্যাগে বাধ্য করা হলে জাতীয় নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়ে। এতে প্রশাসনের দক্ষতা কমে যায়, মনোবল নষ্ট হয় এবং ভবিষ্যতে মেধাবী লোকদের এসব সংস্থায় যোগদানে অনীহা তৈরি হয়। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক আনুগত্যের ভিত্তিতে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও বিনিময়প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদেশগুলো সংবেদনশীল তথ্য ভাগাভাগি করতে ভয় পেতে পারে। তাদের মধ্যে এই আশঙ্কা হতে পারে, যদি সেই তথ্য ইলন মাস্ক বা তুলসী গ্যাবার্ডের মতো ব্যক্তিদের হাতে পড়ে যায়!
আরও পড়ুননির্বাচন করিয়ে জেলেনস্কির পতন ঘটালে ফল হবে ভয়াবহ ০৪ মার্চ ২০২৫ইউএসএআইডি ধ্বংসের ফলে যুক্তরাষ্ট্র তার দীর্ঘদিনের আন্তর্জাতিক সংযোগ ও কূটনৈতিক প্রভাব হারাচ্ছে। এটি বৈশ্বিক পরিসরে মার্কিন কৌশলগত স্বার্থকে সুরক্ষিত রাখা কঠিন করে তুলবে। এ ছাড়া ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের (এনএসএফ) মতো সংস্থাগুলো থেকে অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের অপসারণ গবেষণা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করবে। ফলে উন্নত প্রযুক্তি বিকাশে দেরি হবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জনস্বাস্থ্য–সংকটের মতো নতুন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা হ্রাস পাবে।
আধুনিক প্রশাসনিক তত্ত্বের ভিত্তি যিনি স্থাপন করেছিলেন বলে মনে করা হয়, সেই জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার দেখিয়েছিলেন, কার্যকর শাসনের জন্য একটি পেশাদার আমলাতন্ত্র প্রয়োজন। অভিজ্ঞ সরকারি কর্মচারীরা বাজেট, আইন প্রয়োগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো প্রকল্পের মতো জটিল কাজ বোঝেন এবং পরিচালনা করতে পারেন। যদি নিয়মভিত্তিক ও যোগ্যতার ওপর নির্ভরশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকে, তবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের খামখেয়ালিপনার কারণে শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।
সমানভাবে বিপজ্জনক হলো সরকারি প্রশাসনকে একটি প্রাইভেট কোম্পানির মতো চালানোর চেষ্টা, যেখানে সাফল্য ও ব্যর্থতা শুধু অ্যাকাউন্টিংয়ের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষতা, খরচ সাশ্রয় ও লাভ পরিমাপ করা হয়। যদিও আর্থিক দায়িত্বশীলতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সরকারি খাতের উদ্দেশ্য–সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব নিয়ে করপোরেট-স্টাইলের আর্থিক নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ করা ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। টেসলা থেকে ধার করা একজন অ্যাকাউন্ট্যান্ট ব্যালেন্স শিটে যৌক্তিক দেখায় এমন সম্ভাব্য সরকারি সঞ্চয় চিহ্নিত করতে পারেন বটে, কিন্তু সেটি দীর্ঘ মেয়াদে দেশকে অনেক বেশি খরচের দিকে নিয়ে যাবে।
এখন ট্রাম্প প্রশাসন এটিকে ‘প্যারানয়েড প্রিন্সিপাল ডিলেমা’তে রূপ দিয়েছে, যেখানে নেতা আমলাদের শত্রু ভেবে তাঁদের ক্ষমতা কেড়ে নিচ্ছেন। ফলে আমলারা নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন, নেতার প্রতি আস্থাহীন হচ্ছেন এবং নেতা একা হয়ে পড়ছেন। নেতা কারও ওপর ভরসা করতে পারছেন না এবং সত্যিকারের শাসনক্ষমতা হারাচ্ছেন। ‘জার্নি টু দ্য ইস্ট’ উপন্যাসের মতো (যেখানে তীর্থযাত্রীরা লিও ছাড়া পথ হারিয়ে ফেলে) একটি সরকারও যদি অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে, তবে সেই সরকার এমন এক পরিস্থিতিতে পড়তে পারে, যেখানে সব কর্মকর্তার সংহতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
সামি মাহরুম অলিভার উইম্যানে গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক ইনস্টিটিউশনের পরিচালক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র র জন ত ক ন ত ব যবস থ ওপর ন র ক ষমত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘কিছু লোকজনের অনুরোধে’ ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে ‘বিব্রত’ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা
১ মাস ৯ দিন আগে কুমিল্লা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন। লাইসেন্স পেতে তিনি যাবতীয় প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বৃহস্পতিবার লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা একজন বিদ্যালয় শিক্ষক। তিনি জেলার মুরাদনগর উপজেলার আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি নিয়ে আমি নিজেই বিব্রত। আমি শিক্ষক মানুষ, ঠিকাদারির কিছুই বুঝি না। গত বছরের নভেম্বরে স্থানীয় কিছু লোকজন আমাকে ধরল, এলজিইডিতে অনেক কাজটাজ আসতেছে, আপনার একটা লাইসেন্স থাকলে এলাকার মানুষ উপকৃত হবে। এলাকার কিছু মানুষ আপনার লাইসেন্সে কাজ এনে করতে পারবে। এতে কিছু মানুষের কাজের ব্যবস্থাও হবে। আসলে বিষয়টি আমার ছেলে (উপদেষ্টা) কিছুই জানেও না। পরে এলাকার মানুষের বারবার অনুরোধের কারণে গত বছরের নভেম্বরে আমি ওই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এক মাস আগে লাইসেন্স পেয়েছি, কিন্তু এটা দিয়ে এক টাকার কাজও করিনি।’
বিষয়টি নিয়ে এত সমালোচনা আর কেলেঙ্কারি হবে, বিষয়টি ভাবনাতেও ছিল না উল্লেখ করে বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমার ভুলের জন্য ছেলেকে (উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ) বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, কখনো চিন্তাও করিনি। এ ঘটনায় আমি নিজেই লজ্জিত।’
সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স পেয়েছেন উল্লেখ করে মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘যখন সবাই আমাকে ধরল একটা লাইসেন্স করার জন্য, তখন চিন্তা করলাম, দেশের নাগরিক হিসেবে একজন মানুষের অধিকার আছে ঠিকাদারি লাইসেন্স করার। আমিও সেই জায়গা থেকেই সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করেছি এবং নভেম্বরে আবেদনের পর দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত ১৬ মার্চ লাইসেন্স পেয়েছি। আমি উপদেষ্টার বাবা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই আবেদন করেছি। যদি জানতাম বিষয়টি নিয়ে এত কেলেঙ্কারি হবে আর উপদেষ্টাকে বিতর্কের মুখে পড়তে হবে, তাহলে কখনোই আমি এমন কাজ করতাম না। এ ছাড়া আমি আজ পর্যন্ত কোথাও ঠিকাদারি কাজের বিষয়ে জেলা ও উপজেলার কোথাও কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। কেউ বলতে পারবে না উপদেষ্টার বাবা হিসেবে এক টাকার ঠিকাদারি কাজ করেছি।’
আরও পড়ুনবাবার ঠিকাদারির লাইসেন্স ছিল, জানিয়ে ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ৫ ঘণ্টা আগেএলজিইডি কুমিল্লার সূত্রে জানা গেছে, আয়কর সনদ, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্সসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর কুমিল্লার জেলার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সের আবেদন করেন বিল্লাল হোসেন। গত ১৬ মার্চ ৫ হাজার ৯০০ টাকার ব্যাংক চালান দেওয়ার পর ওই দিন এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হিসেবে মো. বিল্লাল হোসেনের ওই লাইসেন্সে স্বাক্ষর করেন। তাঁর এই ঠিকাদারি লাইসেন্সের মেয়াদ চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়।
এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বুধবার রাতে মো. বিল্লাল হোসেন তাঁর ঠিকাদারি লাইসেন্সটি বাতিলের জন্য আবেদন করেন। তবে রাতে তিনি আবেদনটি হাতে পাননি। আজ সকালে আবেদনটি হাতে পেয়ে অফিসে গিয়ে প্রথমেই বিধি মোতাবেক সীমিত দরপত্র পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া লাইসেন্সটি বাতিল করে কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, এর আগে বিল্লাল হোসেন সব বিধি মেনেই ঠিকাদারি লাইসেন্স পেয়েছিলেন। গত ১৬ মার্চ মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সটি ইস্যু করা হয়। তবে এখনো এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বিল্লাল হোসেন অন্য কোনো নামেও ঠিকাদারি কাজ করেননি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে আজ বিকেল পর্যন্ত উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা মো. বিল্লাল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গতকাল রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যম কর্মী। তিনি বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চান আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে জানান যে তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। আর বিষয়টি তাঁকে জানান বলেও ওই গণমাধ্যমকর্মী তাঁর পোস্টে উল্লেখ করেন। এরপরই আজ আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন।
‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়ে আসিফ মাহমুদ পোস্টে লেখেন, ‘আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তাঁর কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারেন। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সে জন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।’