একজন ব্যাটসম্যানের টাইমড আউট হওয়াই বিরল ঘটনা। সেই টাইমড আউটের আগে–পরে মিলিয়ে কারণে মাত্র ৩ বলেই যদি ৪ ব্যাটসম্যান আউট হন, সেটাকে কী বলবেন!

বিস্ময়কর এ ঘটনাই ঘটেছে পাকিস্তানে। তা–ও যেনতেন টুর্নামেন্টে নয়। পাকিস্তানের প্রথম শ্রেণির ঘরোয়া প্রতিযোগিতা প্রেসিডেন্ট ট্রফি গ্রেড ওয়ানের ফাইনালে। আর টাইমড আউট হওয়া ব্যাটসম্যানটিও বেশ পরিচিতই—সৌদ শাকিল। কদিন আগেই যিনি আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলেছেন।

পাকিস্তান দল আগেভাগে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে বিদায় নেওয়ার পর কয়েকজন খেলোয়াড় নেমে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রফির ফাইনাল খেলতে। মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু ম্যাচে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের (এসবিপি) মুখোমুখি হয় পাকিস্তান টেলিভিশন (পিটিভি)। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা এসবিপি ৮৭ রানে প্রথম উইকেট হারালে ব্যাটিংয়ে নামেন অধিনায়ক উমর আমিন।

তবে তিনে নামা উমর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৬ রান করে বোল্ড হন মোহাম্মদ শাহজাদের বলে। ঠিক পরের বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন অভিজ্ঞ ফাওয়াদ আলম।

পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামার কথা ছিল শাকিলের। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষে ৬২ রান করা এই ব্যাটসম্যান নামতে দেরি করছিলেন।

উইজডেনের খবরে বলা হয়, ফাওয়াদ আউট হওয়ার পর চার মিনিট পেরিয়ে গেলেও শাকিল ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসেননি। নিয়মানুযায়ী আম্পায়ার তাঁকে আউট ঘোষণা করেন। ছেলেদের পেশাদার ক্রিকেটে এটি টাইমড আউটের নবম ঘটনা।

আরও পড়ুনআইসিসির কাছে বলে থুতু ব্যবহারের সুযোগ চান শামি১ ঘণ্টা আগে

শাকিলের টাইমড আউট হওয়া উইকেটটি বোলারের ছিল না। পিটিভির শাহজাদ তখনো হ্যাটট্রিকের অপেক্ষায়। পরবর্তী ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন মোহাম্মদ ইরফান খান।

গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান শাহজাদের হ্যাটট্রিক বলে গড়বড় করে ফেলেন। তাঁকে বোল্ড করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন শাহজাদ। জন্ম হয় বিরল এক ঘটনার—তিন বলের মধ্যে চার ব্যাটসম্যান আউট। যে তিন বলের মধ্যে কোনো ওয়াইড, নো বা অতিরিক্ত বল ছিল না।

হ্যাটট্রিকসহ ৫ উইকেট নেন মোহাম্মদ শাহজাদ (ডান থেকে তৃতীয়)।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন আউট হওয় শ হজ দ

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ার টক দই ইফতারে ছড়াচ্ছে ঐতিহ্যের স্বাদ

ইফতারে বছরের পর বছর বিশেষ জায়গা দখল করে রেখেছে বগুড়ার বিখ্যাত টক দই। এটি স্বাদ ও গুণে অতুলনীয়। রোজাদারের শরীরে প্রশান্তি আনে; বৃদ্ধি করে হজম শক্তি এবং ইফতারে উপহার দেয় অনন্য স্বাদ।

শতবর্ষের ঐতিহ্য আর খাঁটি দুধের মিশেলের দইটি শুধু বগুড়ায় সীমাবদ্ধ নেই। রাজধানীসহ দেশের নানা ইফতারি বাজারে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দোকান ছাড়াও মিলছে অনলাইনে।

বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া গেলেও বগুড়ার টক দইয়ের স্বাদ ও মান একেবারে আলাদা। মোলায়েম টক স্বাদ ও ঘনত্ব একে দিয়েছে ভিন্নমাত্রা। দই ব্যবসায়ীরা জানান, খাঁটি দুধের সর থেকে দই তৈরি হয়। ঘনত্ব বজায় রাখতে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রেখে জমিয়ে তার পর বাজারজাত করা হয়। নিখুঁত প্রক্রিয়ার জন্যই বগুড়ার দই দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দইয়ের তুলনায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।

ব্যবসায়ীরা জানান, রমজান এলেই বেড়ে যায় বগুড়ার টক দইয়ের চাহিদা। বিভিন্ন শোরুম ছাড়াও মুদি দোকান, রাস্তা, পাড়া-মহল্লায় অস্থায়ী টেবিল ও ফেরি করে বিক্রি হয়। দোকানে ৭০ থেকে ২৮০ টাকায় টক ও সাদা ভিন্ন স্বাদের দই বিক্রি হয়। ফুটপাতে নেয় আকারভেদে ৬০ থেকে ১৮০ টাকা। ফুটপাতের দই ঘনত্বে কিছুটা পাতলা হলেও ইফতারে এর আকর্ষণ ভিন্ন। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টক দইয়ের জোগান দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

রমজানে জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকার টক ও সাদা দই বিক্রি হচ্ছে, যা অন্য সময়ের তুলনায় ৩ থেকে ৪ গুণ। শহরের ব্যবসায়ী হিরন বাড়িতে দুই শতাধিক সাদা দই তৈরি করে নবাববাড়ি ফুটপাতে বসেছিলেন। মাত্র এক ঘণ্টায় বিক্রি শেষ। হিরন জানান, দই তৈরিতে যে সময় প্রয়োজন, তা পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা প্রচুর, ঠিকমতো সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বগুড়া আকবরিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসেন আলী আলাল জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দই আমেরিকায় গেছে বহুবার। প্রবাসীরা বগুড়ায় এসে স্বজনের জন্য নিয়ে গেছেন। তিনি মনে করেন, পণ্যটি বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানিতে সরকারি প্রণোদনা দরকার। এখন নতুন পদ্ধতিতে মেশিনে দই বানানো হয়। ফলে খাদ্যমান ঠিক থাকে।

টক দই কিনতে আসা আবুল কাদের জানান, রোজার ক্লান্তি দূর করতে সাদা দইয়ের ঘোল খুব উপকারী। পরিবারের সবার পছন্দের। সঙ্গে নিয়মিত মাঠা কেনা হয়। মাঠা সাদা ও টক দইয়ের মিশ্রণে তৈরি। দুপুরের পর শহরে মাঠা বিক্রির কয়েকশ ভ্রাম্যমাণ গাড়ি ঘিরে ভিড় লেগে যায়।

চিনিপাতা দইয়ের মালিক মুক্তার আলম জানান, বগুড়ায় দিনে গড়ে ৩০ টন দই তৈরি হয়। ছুটি ও উৎসবের দিনে আরও ১০ টন চাহিদা বেড়ে যায়। এখন মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ায় টক বা সাদা দই পছন্দের শীর্ষে রাখছেন।

বগুড়া শহরেই রয়েছে শতাধিক দইয়ের দোকান। শহরের আশপাশে রয়েছে আরও দুই শতাধিক। এসব দোকানে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হচ্ছে। যদিও সম্প্রতি ক্রেতাদের অভিযোগ, বগুড়ার দইয়ের স্বাদ, গুণগত মান ও ঘনত্ব আগের মতো নেই। কারণ হিসেবে জানা যায়, রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করে মুনাফার আশায় নষ্ট করছেন এর গুণগত মান। তারা দুধের পরিবর্তে গুঁড়া দুধ, স্টার্চ ও অন্যান্য রাসায়নিক উপাদানে তৈরি করছেন দই। বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা বগুড়ার আসল ও নকল দইয়ের পার্থক্য করতে পারছেন না। ফলে শতবর্ষী দই শিল্পের সুনাম ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ