সাইবার নিরাপত্তা আইনে মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী রাখাল রাহাসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট।

বুধবার (৫ মার্চ) সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী এবং সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি করেন। 

তারা বলেন, আওয়ামী লীগ আমলে দীর্ঘদিনের নির্বাচনহীনতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিভিন্ন পরিষেবা খাতগুলোর বাণিজ্যিকীকরণ, আয় বৈষম্য, দুর্নীতি, বেকারত্ব, অর্থ পাচার, প্রাণ-প্রকৃতির ধ্বংস সাধন এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও নারী-শিশুদের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্যাতনসহ নানা অন্যায়ের কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

এ ক্ষোভকে দমন এবং শাসনকে দীর্ঘায়িত করতেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার সাইবার নিরাপত্তা আইনের মত নিবর্তনমূলক আইন তৈরি করে। লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট কিশোর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা এবং সাংবাদিক শামসুদ্দিন শামসের মতো হাজার হাজার মানুষের উপর বিগত সরকার এ আইনের দ্বারা নিপীড়ন চালিয়েছে।

গত ৭ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সাইবার নিরাপত্তা আইন (রহিতকরণ) অধ্যাদেশ-২০২৪-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২১ জানুয়ারি আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাকি কিছু কাজ শেষ করেই আইনটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এরপর প্রায় দেড় মাস কেটে গেলেও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ শেষ করেনি, আইনটি বাতিলও হয়নি; বরং এই আইনে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে।

সরকার ও প্রশাসন এ আইনে মামলা নেওয়া বন্ধের পরিবর্তে মামলা নিচ্ছে এবং তদন্ত ছাড়াই গ্রেফতারের তোড়জোড় করছে, যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিশ্রুতির পরিপন্থী।

তারা আরও বলেন, সর্বশেষ এ আইনের আওতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটির সদস্য রাখাল রাহার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রাখাল রাহা বাক-স্বাধীনতা, নাগরিক অধিকার, শিক্ষা রক্ষার আন্দোলনসহ আওয়ামী আমলের বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের উদ্যোগে এবং ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক, বুদ্ধিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় জ্ঞান-বিজ্ঞান-মনুষ্যত্ব ধ্বংসের শিক্ষাক্রম-২০২১ বাতিলের আন্দোলনে তিনি ছিলেন আমাদের অন্যতম ভরসাস্থল। শিক্ষাক্রম বাতিলের এই আন্দোলনে তার নেতৃত্বে অভিভাবকরা সংগঠিত হন এবং আন্দোলনকে বেগবান করেন। পরবর্তীতে অন্তবর্তীকালীন সরকার এটি বাতিলের ঘোষণা দেয়। 

পাঠ্যবই সংশোধন ও পরিমার্জন কমিটিতে তাকে যুক্ত করার পর থেকেই একটি সংগঠিত অপশক্তি শিক্ষা ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক চিন্তার প্রতিফলন ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং তাকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়; যা খুবই দুঃখজনক।

তারা দাবি জানিয়ে বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ সকল নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল এবং রাখাল রাহাসহ সাইবার নিরাপত্তা আইনের আওতাধীন সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে সরকার জুলাই চেতনাকে হত্যা করছে

গণ-অভ্যুত্থানের সাত মাস পরেও সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই চেতনা হত্যা করছে বলে মনে করে ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) ভিকটিমস নেটওয়ার্ক। সরকার ক্রমেই জনগণের আস্থা হারাচ্ছে বলেও মনে করছে তারা।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছে ডিএসএ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণ-অভ্যুত্থানের বাংলাদেশেও কুখ্যাত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল তো হয়ইনি; বরং এই আইনে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসন এই আইনে মামলা নেওয়া বন্ধের পরিবর্তে মামলা নিচ্ছে এবং তদন্ত ছাড়াই গ্রেপ্তারের তোড়জোড় করছে।

সাইবার নিরাপত্তাসহ সব নিবর্তনমূলক আইন বাতিল করা অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত আগস্ট মাসেই সরকার আইনটি বাতিলের ঘোষণা দিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে অন্তত চারবার সময় নিয়েও সরকার এই আইন বহাল রেখেছে। সর্বশেষ ২১ জানুয়ারি আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে আইন মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে বাকি কিছু কাজ শেষ করেই আইনটি বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এরপর প্রায় দেড় মাস কেটে গেলেও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কাজ শেষ করেনি, আইনটি বাতিলও হয়নি। এ আইনে আগের মামলাগুলোও বাতিল হয়নি; বরং নতুন নতুন মামলা হচ্ছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক আইনগুলো বাতিলে সরকারের আন্তরিকতায় ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের এমন অবহেলা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে হত্যা করছে। অযোগ্যতা ও অদক্ষতার ফলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমেই জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।

এমন অবস্থায় ডিএসএর পক্ষ থেকে সাইবার নিরাপত্তাসহ সব নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল, এসব আইনে গ্রেপ্তার বন্দীদের মুক্তি, ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ এবং নিবর্তনমূলক আইন বানানোর একচ্ছত্র ক্ষমতা কাঠামোকে জবাবদিহিমূলক করার দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক, গবেষক, আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, বাউলশিল্পী ও শিক্ষার্থীসহ ২৮ জন সই করেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার, সদস্যসচিব প্রীতম দাশ, রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের অর্থ সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মঞ্জিলা ঝুমা ও যুক্তরাষ্ট্রের পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা নিয়ে সরকার জুলাই চেতনাকে হত্যা করছে