গুলশানে তল্লাশির নামে বাসা ভাঙচুর : ৩ আসামি কারাগারে
Published: 5th, March 2025 GMT
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের সাবেক স্ত্রীর গুলশানের বাসায় তল্লাশির নামে তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (৫ মার্চ) ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো.জিয়াদুর রহমান শুনানি শেষে রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর এ আদেশ দেন।
কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন- শাকিল খন্দকার, জুয়েল খন্দকার ও শাকিল আহম্মেদ। এর মধ্যে জুয়েল খন্দকার ও শাকিল খন্দকার সম্পর্কে পিতা-পুত্র।
আরো পড়ুন:
কয়েদিদের সঙ্গে হাতাহাতি, আ.
কারাগারের ভেতর সাবেক চেয়ারম্যানের কাছে মিলল ইয়াবা
এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক মো. ফরিদ হোসেন তাদের আদালতে হাজির করে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আসাম পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধীতা করে।
শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ মার্চ রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে গুলশানে ২ নাম্বার রোডের বাসায় ১৪ থেকে ১৫ জন আকস্মিকভাবে বে-আইনি জনতাবদ্ধভাবে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাংচুর ও তছনছ করে। বাসার ২ জন লোককে মারধর করে কী কী আছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আসামি শাকিল খন্দকার আলমারি ভেঙে একটি স্বর্ণের চেইন, আসামি জুয়েল খন্দকার একটি স্বর্ণের চেইন, শাকিল আহমেদ একটি স্বর্ণের পায়েল, একটি হাতের আংটিসহ মোট ২ ভরি আট আনা স্বর্ণ নেন। যার মূল্য ৩ লাখ টাকা। অন্যান্য আসামিরা আলমারি থেকে জিনিসপত্র ভাংচুর করে মেঝেতে ফেলে দেয়।
এ ঘটনায় ওই বাসার কেয়ারটেকার আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঢাকা/মামুন/রাসেল
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে বাসায় মবের হানা, লুট স্বর্ণালংকার
রাজধানীর গুলশানের একটি বাসায় মঙ্গলবার রাতে হানা দিয়েছিল একদল বিশৃঙ্খল জনতা (মব)। এর নেতৃত্বে ছিলেন জাতীয়তাবাদী চালক দলের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল খন্দকার (৪৮)। তিনিসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে তিনটি গহনা জব্দ করা হয়েছে।
অভিযুক্তদের দাবি, বাড়িটি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচটি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের। তানভীর সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি)। সেখানে বিপুল অর্থ, অবৈধ অস্ত্র ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে– এমন অভিযোগে তারা বাসায় হানা দেন।
স্থানীয়রা জানান, গুলশান ২-এর ৮১ নম্বর সড়কের ৮/আই কনকর্ড কটেজের চারতলার ফ্ল্যাটের মালিক প্রয়াত রহমান শরীফ। তাঁর মেয়ের সঙ্গে তানভীর ইমামের বিয়ে হয়েছিল। ২০০১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়েছে।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গুলশানের ওই বাসায় অবৈধ অর্থ, অস্ত্র ও আওয়ামী লীগের দোসরদের লুকিয়ে রাখা হয়েছে– এমন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে দরজা ভেঙে ‘তল্লাশি’র নামে ২০ থেকে ২৫ জন ঢুকে পড়ে। বাসাটি তছনছ, ভাঙচুর ও লুটপাটের চেষ্টা করে তারা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ মর্মে আবারও সতর্ক করছে, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়। কোথাও কোনো অপরাধ ঘটলে যেন থানাকে জানায়। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বদ্ধপরিকর।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, তানভীরের সাবেক স্ত্রী ওই বাসায় থাকেন। আওয়ামী লীগের লোকজন অবস্থান করছেন– এমন অভিযোগে সোমবার রাত ১০টার দিকে ৪০ থেকে ৫০ জন ওই বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তাদের সঙ্গে পুলিশ ছিল। পরে পুলিশসহ চারজন ওই বাসায় ঢোকে। কিন্তু কাউকে না পেয়ে পুলিশ এবং তারা ফিরে যায়। পরদিন মঙ্গলবার রাত ১১টা ৫০ মিনিটে জুয়েল খন্দকারের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন ফের বাড়িটির সামনে জমায়েত হয়। নিরাপত্তা কর্মী বাড়ির প্রধান ফটক খোলেননি। কয়েকজন দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে তালা ভাঙে। এর পর সবাই ঢুকে চার তলায় যায়। তানভীরের সাবেক স্ত্রী তখন বাসায় ছিলেন না। কেয়ারটেকার ও চালক আব্দুল মান্নান এবং দু’জন গৃহকর্মী বাসায় ছিলেন। দরজা ভেঙে জুয়েল খন্দকার ও তার লোকজন ভাঙচুর চালায়। আলমারি থেকে শুরু করে সবকিছু তছনছ ও ভাঙচুর করে। স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান জিনিস লুট করে। ৯৯৯-এ খবর পেয়ে গুলশান থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। সেখান থেকে জুয়েল ও তাঁর ছেলে শাকিল খন্দকারসহ (২৪) তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তির নাম শাকিল আহম্মেদ (২৮)।
বাসার কেয়ারটেকার ও গাড়িচালক আব্দুল মান্নান বলেন, রাতে লোকজন দরজার ছিটকিনি ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে। তারা পুরো বাসা তছনছ করে। লুটপাট চালায়। এ ঘটনায় তিনি গতকাল ওই তিনজনসহ অজ্ঞাতপরিচয় ১৪-১৫ জনের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়েছে, আলমারি ভেঙে দুটি স্বর্ণের চেন ও একটি আংটিসহ চারটি গহনা লুট করে আসামিরা।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মোটরচালক দলের সভাপতি সেলিম রেজা বাবু বলেন, জুয়েল খন্দকার একসময় মোটরচালকদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি কিছু লোক নিয়ে চালক দল গঠন করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনার তারেক মাহমুদ জানান, শাকিল আহম্মেদ এক সময় ওই বাসার কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি বাড্ডার বাসিন্দা জুয়েল খন্দকারকে তথ্য দেন, তল্লাশি চালালে ২০০-৩০০ কোটি টাকা পাওয়া যেতে পারে। মূলত লুটপাটের উদ্দেশে তারা ওই বাসায় ঢুকেছিলেন। তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
গুলশান থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছে।