ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সময় বাড়িয়েও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। কমিটির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রতিবেদন দিতে পারছেন না তাঁরা। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে, সেটিও বলতে পারছেন না তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই কমিটির সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ। সদস্য হিসেবে আছেন শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবু জাকির মোর্শেদ। কমিটির জন্য নির্ধারিত তিন কার্যদিবস শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ কর্মদিবস সময় বাড়ানোর জন্য প্রশাসন বরাবর আবেদন করে তদন্ত কমিটি। সেই বর্ধিত সময়ের শেষ দিন ছিল ৫ মার্চ অর্থাৎ আজ বুধবার।

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফায় দফায় সংঘর্ষ

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম তিন কার্যদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিসকক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় প্রথম কয়েক কার্যদিবস তদন্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বসার জায়গা না পাওয়ায় কমিটির সদস্যরা সবাই একসঙ্গে বসতেও পারেননি। তদন্ত কমিটি পরে একাডেমিক বিভাগগুলোর বিভিন্ন কক্ষে অস্থায়ীভাবে বসে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। ৭ কর্মদিবস সময় বাড়িয়েও প্রতিবেদন না দিতে পারায় আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে কমিটি।

জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এম এম এ হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা চলে গেছেন। কারও বাড়ি সুনামগঞ্জ, কারও বাড়ি চট্টগ্রাম। কষ্ট করে দু-একজনকে ডেকে ডেকে আমরা কাজ চালাচ্ছি। এটা সহজ কাজ নয়, এটার জন্য সময় লাগবে। শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারগুলো না নিতে পারলে আমরা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারছি না। তবে আমাদের কাজ চলছে। ঘটনার অংশীজনদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা যাচাই করার চেষ্টা করছি।’

কুয়েটে প্রথম হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যাবে, জানতে চাইলে অধ্যাপক এম এম এ হাসেম বলেন, ‘ভুলভাল তথ্য দিলে তো হবে না। আমাদের সঠিক তথ্য দিতে হবে। না হলে দিন শেষে আমাদের কমিটির মানমর্যাদা থাকবে না। আমরা শিক্ষক। আমরা ভুলভাল যেনতেন রিপোর্ট তৈরি করে দিতে পারি না। আমরা এরই মধ্যে সময় লাগবে জানিয়ে আবেদন করেছি। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় এমনিই বন্ধ। দেখা যাক কর্তৃপক্ষ বা সিন্ডিকেট কত দিন সময় দেয়।’ কত দিন সময় চেয়েছেন জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির বিষয়ে জানিয়েছি এবং বলেছি যে এটাতে সময় লাগবে।’

তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের

উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা এই কমিটির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভার কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ‘কুয়েট ১৯’ নামের একটি ফেসবুক পেজে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। ‘কুয়েট ১৯’ নামের ওই ফেসবুক পেজ থেকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত ১ মার্চ রাতে পোস্ট করা ওই বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি নিয়ে কুয়েটের শিক্ষার্থীবৃন্দের স্পষ্ট অবস্থান’। এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বর্জন করা উপাচার্যের নিয়োগ করা তদন্ত কমিটিকে তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি আমরা ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের আমলে দেখতে পেয়েছিলাম, যেগুলো মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আন্দোলনকে নস্যাৎ করা। ফ্যাসিবাদী কায়দায় গঠিত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটিকে আমরা ঘৃণাভরে ভরে প্রত্যাখ্যান করছি এবং তদন্ত কমিটি দ্বারা প্রকাশিত কোনো রিপোর্ট কিংবা আদেশ এবং এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট মিটিংয়ের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা কুয়েটের পাঁচ ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থীই কখনোই মেনে নেব না।’

কুয়েটে সংঘর্ষ: আটক ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত র সময় ব ড় তদন ত ক ন কর ছ স ঘর ষ কম ট র র জন য সদস য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় সময় বাড়িয়েও প্রতিবেদন দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সময় বাড়িয়েও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। কমিটির দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া যাচ্ছে না। তাই প্রতিবেদন দিতে পারছেন না তাঁরা। কবে নাগাদ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে, সেটিও বলতে পারছেন না তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এম এম এ হাসেমকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। ওই কমিটির সদস্যসচিব বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহ। সদস্য হিসেবে আছেন শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু ইউসুফ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক আবু জাকির মোর্শেদ। কমিটির জন্য নির্ধারিত তিন কার্যদিবস শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ৭ কর্মদিবস সময় বাড়ানোর জন্য প্রশাসন বরাবর আবেদন করে তদন্ত কমিটি। সেই বর্ধিত সময়ের শেষ দিন ছিল ৫ মার্চ অর্থাৎ আজ বুধবার।

কুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফায় দফায় সংঘর্ষ

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম তিন কার্যদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অফিসকক্ষ তালাবদ্ধ থাকায় প্রথম কয়েক কার্যদিবস তদন্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বসার জায়গা না পাওয়ায় কমিটির সদস্যরা সবাই একসঙ্গে বসতেও পারেননি। তদন্ত কমিটি পরে একাডেমিক বিভাগগুলোর বিভিন্ন কক্ষে অস্থায়ীভাবে বসে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। ৭ কর্মদিবস সময় বাড়িয়েও প্রতিবেদন না দিতে পারায় আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে কমিটি।

জানতে চাইলে কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এম এম এ হাসেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা চলে গেছেন। কারও বাড়ি সুনামগঞ্জ, কারও বাড়ি চট্টগ্রাম। কষ্ট করে দু-একজনকে ডেকে ডেকে আমরা কাজ চালাচ্ছি। এটা সহজ কাজ নয়, এটার জন্য সময় লাগবে। শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকারগুলো না নিতে পারলে আমরা প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে পারছি না। তবে আমাদের কাজ চলছে। ঘটনার অংশীজনদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে আমরা যাচাই করার চেষ্টা করছি।’

কুয়েটে প্রথম হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া যাবে, জানতে চাইলে অধ্যাপক এম এম এ হাসেম বলেন, ‘ভুলভাল তথ্য দিলে তো হবে না। আমাদের সঠিক তথ্য দিতে হবে। না হলে দিন শেষে আমাদের কমিটির মানমর্যাদা থাকবে না। আমরা শিক্ষক। আমরা ভুলভাল যেনতেন রিপোর্ট তৈরি করে দিতে পারি না। আমরা এরই মধ্যে সময় লাগবে জানিয়ে আবেদন করেছি। এখন তো বিশ্ববিদ্যালয় এমনিই বন্ধ। দেখা যাক কর্তৃপক্ষ বা সিন্ডিকেট কত দিন সময় দেয়।’ কত দিন সময় চেয়েছেন জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতির বিষয়ে জানিয়েছি এবং বলেছি যে এটাতে সময় লাগবে।’

তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের

উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁরা এই কমিটির তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভার কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ‘কুয়েট ১৯’ নামের একটি ফেসবুক পেজে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। ‘কুয়েট ১৯’ নামের ওই ফেসবুক পেজ থেকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত ১ মার্চ রাতে পোস্ট করা ওই বিজ্ঞপ্তির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি নিয়ে কুয়েটের শিক্ষার্থীবৃন্দের স্পষ্ট অবস্থান’। এতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের বর্জন করা উপাচার্যের নিয়োগ করা তদন্ত কমিটিকে তাঁরা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি আমরা ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারের আমলে দেখতে পেয়েছিলাম, যেগুলো মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে আন্দোলনকে নস্যাৎ করা। ফ্যাসিবাদী কায়দায় গঠিত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটিকে আমরা ঘৃণাভরে ভরে প্রত্যাখ্যান করছি এবং তদন্ত কমিটি দ্বারা প্রকাশিত কোনো রিপোর্ট কিংবা আদেশ এবং এই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট মিটিংয়ের কোনো সিদ্ধান্ত আমরা কুয়েটের পাঁচ ব্যাচের কোনো শিক্ষার্থীই কখনোই মেনে নেব না।’

কুয়েটে সংঘর্ষ: আটক ৪ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে

সম্পর্কিত নিবন্ধ