মহাবিশ্বের শুরু থেকেই কি পানি ছিল
Published: 5th, March 2025 GMT
দীর্ঘদিন ধরেই মহাবিশ্বে থাকা পানির উৎসের সন্ধান করছেন বিজ্ঞানীরা। পানি প্রথম কবে বা কীভাবে পৃথিবীতে এসেছে, তা নিয়েও অনেক তত্ত্ব চালু রয়েছে বিজ্ঞান দুনিয়ায়। এবার যুক্তরাজ্যের পোর্টসমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন যে বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরে সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় মহাবিশ্বে প্রথম পানি তৈরি হয়েছিল। অর্থাৎ আমাদের ধারণার চেয়ে কোটি কোটি বছর আগে পানি তৈরি হয়েছিল মহাবিশ্বে। তাঁদের দাবি, মহাবিশ্বের প্রাথমিক মুহূর্তেই পানির উৎপত্তি হয়েছে। তার পেছনের কারণও খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্র ধ্বংসের পর যে সুপারনোভা বিস্ফোরণ হয়েছিল, তার পরপরই পানি তৈরি হয়েছে। সেই বিস্ফোরণের ফলে উৎপন্ন অক্সিজেন ঠান্ডা হয়ে আশপাশের হাইড্রোজেনের সঙ্গে মিশে যাওয়ার ফলে পানি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ডেনিয়েল হোয়েলেন গবেষণাপত্রে লিখেছেন, বিগ ব্যাংয়ের ১০ থেকে ২০ কোটি বছর পরে মহাবিশ্বে পানির উদ্ভব হয়। তত দিনে জীবনের জন্য প্রাথমিক নানা উপাদান বিদ্যমান ছিল। সিমুলেশনের তথ্য বলছে, পানি সম্ভবত প্রথম ছায়াপথগুলোর একটি মূল উপাদান ছিল।
আরও পড়ুনমহাবিশ্বের শুরু কখন২৩ নভেম্বর ২০২৪বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, পানি রাসায়নিকভাবে দুটি উপাদান হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে তৈরি। বিগ ব্যাংয়ের প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই অতি উত্তপ্ত কণার সমুদ্র ঠান্ডা হয়ে পরমাণুতে জমাট বাঁধতে শুরু করে। এর ফলে হাইড্রোজেন হিলিয়াম ও লিথিয়ামের মতো অন্যান্য হালকা উপাদানের সঙ্গে যুক্ত হয়। তখন অক্সিজেনের পরমাণু ছিল না। অক্সিজেন ও অন্যান্য ভারী উপাদান পারমাণবিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়েছিল। বিগ ব্যাংয়ের প্রায় ১০ কোটি বছর পর হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের মেঘ মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে একত্র হয়েছিল। ঘনত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে চাপ অনেক বেড়ে গেলে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার সূত্রপাত হয়। তখন গ্যাসীয় মেঘ তারাতে রূপান্তরিত হয় এবং মহাবিশ্বে প্রথম আলো তৈরি করে। এসব তারা তাদের হাইড্রোজেন জ্বালানির সরবরাহের মধ্য দিয়ে পুড়ে যায় এবং বিশাল সুপারনোভা বিস্ফোরণে ভেঙে যায়। অল্প সময়ের জন্য তখন তাপমাত্রা প্রায় ১০০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেলে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণু অক্সিজেনকে যুক্ত করে বৃহত্তর অণুতে পরিণত হয়। সেই সুপারনোভা নামক নক্ষত্রীয় বিস্ফোরণের পরই পানি তৈরি হয়েছে। তখন অক্সিজেন তৈরির জন্য যথেষ্ট গরম ছিল বলে পানি তৈরির সম্ভাবনাও বেশি।
আরও পড়ুনমহাবিশ্বের বেশির ভাগ এলাকাই কি অন্ধকার৩১ আগস্ট ২০২৪নেচার অ্যাস্ট্রোনমিতে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে দুটি সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর কী ঘটেছে, তা প্রকাশ করা হয়েছে। এই সিমুলেশনে দেখা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় সুপারনোভা থেকে যথাক্রমে শূন্য দশমিক শূন্য ৫১ সৌরভরের সমান অক্সিজেন ও ৫৫ সৌরভরের সমান অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। বিস্ফোরণের পর হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের একটি মেঘ নক্ষত্রের বিশাল বলয়ে পরিণত হয়ে পানি তৈরি করে।
সূত্র: ডেইলি মেইল
আরও পড়ুনমহাবিশ্বের বৃহত্তম কাঠামোর সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, কত বড় জানেন১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাটির বস্তার পরিবর্তে জিওব্যাগ আবাদ নিয়ে শঙ্কায় কৃষক
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের মাছুখালী ফসল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজে বাঁশের আড় ও মাটির বস্তার পরিবর্তে জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। টেকসই না হলে বাঁধ ভেঙে আবারও ফসলডুবি হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন হাওরে বোরো ধান আবাদ করা কৃষক।
কৃষকরা জানান, পুরো হাওরের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মাছুখালীর বাঁধ। কারণ নদীর মোহনায় বাঁধটি রয়েছে। নদীতে পানি আসার সঙ্গে চাপ বাড়বে বাঁধে। জিওব্যাগ দিয়ে ঝুঁকি এড়ানো কঠিন হবে। বাঁধটি বাঁশের আড় ও মাটির বস্তা দিয়ে টেকসই করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। অন্যথায় শঙ্কা থেকেই যাবে। ২০১৭ সালে হাওরের ফসল পাকার আগেই অকালবন্যায় এ বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবির ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ ২০২২ সালে নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধে একাধিকবার ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয় কৃষকরা স্বেচ্ছাশ্রমে দিনরাত কাজ করে বাঁধটি রক্ষা করেন।
সরেজমিন দেখা যায়, জগন্নাথপুর ও দিরাই উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া কামারখালী নদীর পার ঘেঁষা নলুয়া হাওরের মাছুখালী বেড়িবাঁধের ৬ নম্বর প্রকল্প সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। এ বাঁধে এবার বাঁশের আড় ও মাটির বস্তার বদলে জিওব্যাগ দেওয়া হয়েছে। এতে বাঁধটি টেকসই হওয়া নিয়ে স্থানীয় কৃষকের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
উপজেলার দাসনোওয়াগাঁও গ্রামের কৃষক গুনেন্দ্র দাস বলেন, হাওরে এখন আধা কাঁচা ধানের শীষ দুলছে। আশা করি, এ সপ্তাহেই ধান পেকে যাবে। মাছুখালী বাঁধে এবার বাঁশের আড় ও মাটির বস্তা না দেওয়ায় শঙ্কিত আমরা। কারণ নদীতে পানি আসার সঙ্গে সঙ্গে বাঁধে চাপ পড়বে। বাঁধ টেকসই না করা হলে হাওরের ফসলডুবির শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন কৃষক জানান, এ উপজেলার কৃষক বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। বোরো ফসল ঘরে তুলতে তাদের নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়। অনেক সময় অকালবন্যায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে কৃষকের চোখের সামনে কষ্টার্জিত ফসল তলিয়ে যায়।
মাছুখালী বাঁধ সংস্কার প্রকল্পের সভাপতি শাহাদাত মিয়া বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী তারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিন বাঁধ দেখাশোনার কাজ করছেন তারা। এ প্রকল্পের ০.৯২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য ২৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন জগন্নাথপুর উপজেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ কাদির বলেন, নলুয়া হাওরের ধান দিয়ে সারাদেশের মানুষের তিন দিনের খাবার জোগাড় হয়। তাই এ ফসল রক্ষায় কোনো ধরনের গাফিলতি মেনে নেওয়া হবে না। তিনি জানান, মাছুখালী বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভাঙন ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী সবুজ কুমার শীল বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধগুলো সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। মাছুখালী বাঁধে বাঁশ ও বস্তার বরাদ্দ না থাকায় এবার কাজ হয়নি। প্রয়োজন হলে জরুরি ভিত্তিতে বাঁশ ও বস্তার ব্যবস্থা করা হবে।
জগন্নাথপুর ইউএনও বরকত উল্লাহ বলেন, পাউবোর নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধে জিওব্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে। তবুও প্রশাসন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। হাওরের ফসল রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।