সুন্দরের গান গেয়ে মাদ্রিদ ডার্বিতে এগিয়ে রিয়াল
Published: 5th, March 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস লীগে বুধবার (৪ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে শেষ ষোলোতে মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ-অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। এই ম্যাচে হয়েছে দৃষ্টি নন্দন তিন গোল। যা দেখে উপমা হিসেবে টেনে আনা যায় বাংলা চলচিত্রের দুই বিশ্ববিখ্যাত চলচিত্রকার সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক ও মৃণাল সেনকে।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেতিকোর বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতেছে রিয়াল।
বাংলা চলচিত্রের তিন দিকপালকে টেনে আনা হলো একই ম্যাচের গোল গুলোর সৌন্দর্য বোঝাতে। আবার এই সৌন্দর্যের মাঝেই আছে ভীষন ‘প্রতিদ্বন্দ্বীতা’ কিংবা ‘রাইভালরি’; যার উত্তাপও টের পাওয়া যাবে এই উপমায়। সত্যজিৎ এর সিনেমা দেখে আরেক স্টিভেন স্পিলবার্গ ও মার্টিন স্কোরসিসরা অনুপ্রাণিত। বাংলা সিনেমার প্রথম বড় নাম মানিকবাবু খ্যাত সত্যজিৎ। তার কিছুদিন পরেই চলচিত্র শুরু করা ঋত্বিকও বেলাতার সহ বহু আধুনিক বিশ্ববিখ্যাত পরিচালকের আদর্শ।
আরো পড়ুন:
চ্যাম্পিয়নস লিগ বলেই মাদ্রিদ ডার্বিতে এগিয়ে রিয়াল
ঘরের ছেলের ছোবলে হারল রিয়াল
সত্যজিৎ ও ঋত্বিক বাংলা সিনিমাকে অনেক উপরে নিয়ে গিয়েছেন। তবে সমসাময়িক এই দুই শিল্পী এক সাথে বহু আড্ডা দিলেও ছিল দর্শনগত আকাশ পালাত ফারাক। ‘হীরক রাজার দেশে’র মত রাজনৈতিক সিনেমা বানানোর পরও সত্যজিৎ সারাজীবনই রাজনীতির বাইরে কাহিনী বুনার চেষ্টা করেচ্ছিলেন। আর ঢাকার ছেলে ঋত্বিক ছিলেন আগাগোড়া নিপীড়িত মানুষের শিল্পী। এত কাছে থাকার পরও এই দুই পরিচালক যেমন ঠিক বিপরীত মেরুতে রাজনৈতিক দর্শন ও চিন্তা ভাবনায়, একই ভাবে মাদ্রিদ নগরীর ক্লাব হয়েও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল ও অ্যাটলেতিকো।
এদিকে গত রাতে ফ্রেডরিক ভালভারদের পাস থেকে রিয়ালকে ম্যাচের ৪ মিনিটেই এগিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার রদ্রিগো। অন্যদিকে ম্যাচের ৩২ মিনিটে অ্যাাটলেতিকোকে সমতায় ফেরানো আলভারেজ হচ্ছেন আর্জেন্টিনার। দুজনে যে দুটা গোল করলেন তা এক কথায় নান্দনিক ও চোখের শান্তি। তবে দুজনই ক্লাব পর্যায়ে এবং জাতীয় দলে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী।
এখানেই শেষ না। আলভারেজের ক্যারিয়ারটা রিয়ালেই হওয়ার কথা ছিল। তবে রিয়ালের নিয়ম অনুসারে আলভারেজের বয়স ১৩’র কম হওয়াতে তিনি নাম লেখাতে পারেননি লস ব্ল্যাঙ্কসদের হয়ে। পরে তার রিভার প্ল্যাট ঘুরে ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের গল্প সবারই জানা। খুব সূক্ষভাবে দেখলে স্পষ্ট হবে যে রিয়ালের সেই প্রত্যাখান মেনে নিতে পারেননি আলভারেজ। যখনই রিয়ালকে পেয়েছেন সামনে কিছু একটা প্রমাণের জন্য জ্বলে উঠেছেন। সিটির জার্সিতে ২০২৩ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে গোল পেয়েছিলেন। লস ব্ল্যাঙ্কসদের বিপক্ষে ৭ দেখায় ৩ গোল করেছেন।
আলভারেজ গতরাতের গোলটি করে ৬৬ বছরের এক বিশাল গোল খরা কাটিয়েছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে ১৯৫৯ সালে (তখন ভিন্ন নাম ছিল) অ্যাটলেতিকোর হয়ে সবশেষ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে গোল করেছিলেন চুজোর। তাছাড়া লেওনেল মেসির পর দ্বিতীয় আর্জেন্টাইন হিসেবে রিয়ালের ঘরের মাঠে গোল করলেন আলভারেজ।
দ্বিতীয়ার্ধের দশম মিনিটে ফের রিয়াল এগিয়ে যায়। কাউন্টার অ্যাটাক থেকে ফারলেন্দ মন্দির পাস নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ব্রাহিম ডিয়াজ। পায়ের কারুকাজে প্রতিপক্ষের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে জায়গা বানিয়ে নেনে। তারপর অ্যাটলেতিকোর বিক্যাত ডিফেন্সের ফাঁক গলে কয়েকজনের মাঝ দিয়ে ডান পায়ের শটে বল জালে জড়িয়ে দেন।
শুরুতেই তিন জন পরিচালকের নাম নিয়েছিলাম। যার সর্বশেষ জন মৃণাল সেন। দিয়াজের গোলের সাথে মৃণালের সুদীর্ঘ চলচিত্র যাত্রার একটা বিশেষ মিল আছে। মৃণাল আগাগোড়াই এমন সিনেমা বানিয়েছেন যা বাংলা চলচিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে ফরিদপুরে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী সারাজীবন রয়ে গিয়েছেন সত্যজিৎ ও ঋত্বিকের ছায়াতলে। অনেক ক্ষেত্রে সময় এবং পরিবেশ সিদ্ধান্ত নেয় কোন কাজটা বেশি সমাদৃত হবে। মৃণাল ফেঁসেছিলেন সেই ফাঁদে। একই ভাবে ম্যাচের সবচেয়ে দূরহ গোলটা করেও দিয়াজ চাপা পড়ে গিয়েছেন রদ্রিগো এবং আলভারেজের কৃর্তীর কাছে।
রিয়াল এই ম্যাচে জয় না পেলে, পিছিয়ে থেকেই দ্বিতীয় লেগে নামতে হতো। কারণ অ্যাটলেতিকোর মাঠ মেত্রোপলিতানোয় নক আউট ম্যাচ মানেই স্বাগতিকরা এগিয়ে থাকা। তবে ১ গোলের সুবিধা নিয়ে আগামী বুধবার (১২ মার্চ, ২০২৫) দিবাগত রাতে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে অ্যাটলেতিকোর মুখোমুখি হবে রিয়াল।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ য ম প য়নস ল গ আতল ত ক ম দ র দ চ য ম প য়নস ল গ চলচ ত র আলভ র জ গ ল কর
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রপতির সম্মতি, ওয়াক্ফ বিল আইনে পরিণত
ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিক্ষোভ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তীব্র আপত্তির মধ্যেই ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিলে সম্মতি দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর মধ্য দিয়ে বিতর্কিত বিলটি আইনে পরিণত হলো।
গত শনিবার আইন মন্ত্রণালয়ের নোটিশে বলা হয়, ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ এবং মুসলমান ওয়াক্ফ (রহিতকরণ) বিল ২০২৫ দুটি বিলেই সম্মতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। পার্লামেন্টের বাজেট অধিবেশনে বিল দুটি পাস হয়।
গত বুধবার গভীর রাতে বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিল পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হয়। বিলের পক্ষে ২৮৮ আর বিপক্ষে ২৩২টি ভোট পড়ে। পরদিন উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিলটি ১২৮–৯৫ ভোটে পাস হয়।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল উত্থাপনের পরপরই এ নিয়ে লোকসভা অধিবেশন উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এনডিএর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈ। তিনি বলেন, এই বিল সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ওপরে আঘাত। এর মাধ্যমে সরকার সংবিধান দুর্বল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মর্যাদাহানি, ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভোটাধিকারবঞ্চিত করতে চায়।
তবে ওয়াক্ফ বিল পাসের ঘটনাকে ‘ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ বলে মন্তব্য করেন বিজেপি সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপকারে আসবে, যারা নিজেদের চাওয়া ও সুবিধা উভয় থেকেই বঞ্চিত।
এই বিলের সমালোচনা করে গত বৃহস্পতিবার সকালে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী সংসদীয় দলের বৈঠকে বলেন, দেশকে বিজেপি ক্রমেই এক গভীর খাদের কিনারে দাঁড় করাচ্ছে। বারবার তারা সংবিধানের অমর্যাদা করছে।
লক্ষ্য ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ
দৃশ্যত ওয়াক্ফ সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণ নিতেই এই বিল পাস করা হয়েছে। ওয়াক্ফ বিলের সবচেয়ে বিতর্কিত ধারাগুলোর একটি হলো, এখানে একজন অমুসলিমকে ওয়াক্ফ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিতর্কিত ধারা অনুযায়ী রাজ্যগুলোর ওয়াক্ফ বোর্ডে নিজ নিজ রাজ্য সরকার অন্তত দুজন অমুসলিমকে নিয়োগ দিতে পারবে। একজন জেলা প্রশাসক (ডিসি) বিতর্কিত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে নির্ধারণ বা সরকারের মালিকানায় হস্তান্তর করার ক্ষমতা পাবেন।
প্রসঙ্গত, ওয়াক্ফ সম্পত্তি হলো সেই স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি, যা আল্লাহর নামে নিবেদিত। পুরোনো আইন অনুযায়ী, কোনো সম্পত্তি ওয়াক্ফ ঘোষণার একমাত্র অধিকারী ছিল ওয়াক্ফ বোর্ড। নতুন বিলে সেই অধিকার দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসক বা সমপদমর্যাদার কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে।
ভারতে ওয়াক্ফ আইন প্রথম পাস করা হয় ১৯৫৪ সালে। ১৯৯৫ সালে সেটি সংশোধন করে ওয়াক্ফ বোর্ডের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। সেই থেকে বিজেপির অভিযোগ, ওয়াক্ফর বিপুল সম্পত্তি একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ভোগ করছে।
তীব্র প্রতিক্রিয়া
এদিকে ওয়াক্ফ বিল পাস হতে না হতেই সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি মুসলিম সংগঠন থেকে মামলা করা হয়। সেই সঙ্গে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড জানিয়েছে, এই আইনের বিরুদ্ধে তারা দেশজুড়ে আন্দোলন শুরু করবে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষোভ হয়েছে।
পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে বিলটি পাস হওয়ার পর গত শুক্রবার বিরোধী দল কংগ্রেস জানায়, তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করবে। ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই লোকসভার দলীয় নেতা মুহাম্মদ জাভেদ সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। একই দিনে মামলা করেন অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান ও লোকসভার সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি। তাঁরা দুজনেই ওয়াক্ফ বিল নিয়ে গঠিত সংসদের যৌথ কমিটির (জেডিসি) সদস্য ছিলেন।
জাভেদ তাঁর আবেদনে বলেন, হিন্দু ও শিখদের ধর্মীয় ট্রাস্ট স্বনিয়ন্ত্রিত, অথচ ওয়াক্ফে সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে। অমুসলিমদের সদস্য করা হচ্ছে। এই রীতি অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে কিন্তু নেই।
ওয়াক্ফ বিল সমর্থন করায় বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দল জেডিইউতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দুই দিনে পাঁচ নেতা তাঁর দল ত্যাগ করেছেন। ওই পাঁচ নেতার মধ্যে চারজন মুসলিম হলেও একজন হিন্দু। রাজু নায়ার নামে ওই হিন্দু নেতা তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘দলের ভূমিকায় আমি হতাশ। এটি আরেকটি কালা আইন। মুসলিমদের ওপর অত্যাচার ও অবিচার এতে আরও বাড়বে।’