বহিষ্কারের ২০ দিন পর ছাত্রীদের চিঠি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা
Published: 5th, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ছাত্রীকে বহিষ্কারের ঘটনার চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার ছাত্রীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানানো এসব চিঠি ছাত্রীদের বিভাগ ও আবাসিক হলে পৌঁছেছে। তবে এসব চিঠি ইস্যু করা হয়েছিল গত রোববার। আর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এসব চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘বিজয় ২৪’ হলের (সাবেক জননেত্রী শেখ হাসিনা হল) ঘটনায় ১০ ছাত্রী ও ধর্ম অবমাননার ঘটনায় এক ছাত্রীসহ দুজনের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজয় ২৪ হলের বহিষ্কারের ঘটনা নিয়ে অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীর অনেকেই এসব চিঠি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে সমালোচনা করছেন।
চিঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিজয় ২৪ হলের ৯ জন ছাত্রীকে পাঠানো বহিষ্কারে চিঠির ভাষা হুবহু এক। কেবল ছাত্রীদের নাম উল্লেখ করে পৃথকভাবে চিঠিগুলো পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘৫ ফেব্রুয়ারি রাতে শেখ হাসিনা হলের সংঘটিত ঘটনার সূত্রপাত ও বিস্তৃতিতে নেতৃত্ব দান, দায়িত্ব পালনরত প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, দায়িত্ব পালনে বাধাদান, সাংবাদিক হেনস্তা, হলের গেট ভেঙে বাইরে যাওয়া, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
একই দিনের ঘটনায় বহিষ্কার হওয়া আরেক শিক্ষার্থীর চিঠিতে সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনার অভিযোগের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এসব তথ্য উল্লেখ করে ছাত্রীদের কাছে কেন দুই বছরের বহিষ্কারাদেশ বহাল রাখা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে বিভাগের সভাপতির মাধ্যমে লিখিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে জানাতে ছাত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি নিয়ে সমালোচনাবহিষ্কারে চিঠির ইস্যুর বিষয়টি জানানোর পর ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও বাংলা একাডেমির পুরস্কার পাওয়া লেখক জি এইচ হাবীব তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘বেদম হাসি পেল চিঠিটা দেখে। হলটার পুরো নাম কী ছিল? কী ঘটনা? কারা গিয়েছিল সেই হলে অরাজকতা করতে প্রথমে?’
ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘মবের উসকানিদাতা, মব করার জন্য শিক্ষার্থীদের মেসেজ দেওয়া প্রক্টরবৃন্দ কত বছরের জন্য শিক্ষক ও প্রশাসনের পদ থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছেন?’ আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘আমার দৃষ্টিসীমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফ্যাসিবাদ এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জি এইচ হাবীব প্রথম আলোকে বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি নিয়ে তিনি শিক্ষক হিসেবে খুব লজ্জিত। এটা উদ্ভট একটা ব্যাপার। প্রশাসন কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে! ছাত্ররা কেন রাতের বেলা ছাত্রীদের হলে যাবে? এই প্রশ্ন কেউ করছে না। ছাত্ররা সেখানে রাতের বেলা গিয়ে তালা দিয়ে বিশৃঙ্খলা করেছে। এর প্রতিবাদই তো ছাত্রীরা করেছে। আমার বাসায় দিনে বা রাতে যেকোনো সময় কেউ হামলা করলে, গেটে তালা দিলে আমি উদ্বিগ্ন হব না? প্রতিবাদ করব না?’
জি এইচ হাবীব বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই ছাত্রীদের বক্তব্য শুনতে চাওয়া হয়েছে। এতে এটি স্পষ্ট, ছাত্রীদের বক্তব্য না নিয়েই একপাক্ষিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে তাঁদের। আবার ওই রাতে যে ছাত্ররা হামলা করেছিল, এটি চিঠিতে উল্লেখ নেই। এটি কেন চেপে যাওয়া হলো? মূল ঘটনার বর্ণনা কেন নেই?’
বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনায় নানান প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করছেন। জানতে চাইলে বহিষ্কৃতদের একজন জান্নাতুল মাওয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি হলের বাইরে ছিলেন এরপরও তাঁর চিঠিতে হলের গেট ভাঙার অভিযোগ আনা হয়েছে। আবার প্রক্টরিয়াল বডিকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার কথা চিঠিতে বলা হয়েছে। কিন্তু কোন জায়গায় বাধা দেওয়া হয়েছে, এই কথা নেই। ভাঙচুর আটকানোও তো তাঁদের দায়িত্ব। অন্যদিকে ৫ ফেব্রুয়ারি কী হয়েছিল, এর বর্ণনা চিঠিতে নেই। ৯ ছাত্রীর চিঠির ভাষাও একই। অনেকেই উল্লিখিত ঘটনায় উপস্থিতও ছিলেন না।’
আরেক শিক্ষার্থী সুমাইয়া শিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিনকার অনেক ঘটনার সময়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এরপরও চিঠিতে এটা উল্লেখ রয়েছে।’
তবে চিঠিতে কোনো অসংগতি নেই বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠিতে অসংগতি রয়েছে, এটি তিনি কখনোই মনে করেন না। ব্যক্তিগতভাবে কারও কাছে অসংগতি মনে হতে পারে, এটি তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এটাই সিদ্ধান্ত ছিল। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দিকেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য, ১৩ ফেব্রুয়ারি জননেত্রী শেখ হাসিনা হলের (বর্তমানে বিজয় ২৪ হল) ১০ ছাত্রীকে বহিষ্কার সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ছাত্রী হলের সামনে রাখা নৌকা আকৃতির বসার স্থান ভাঙচুর করতে যাওয়া কিছু শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিতণ্ডাও হয়েছিল আবাসিক ছাত্রীদের।
ছাত্রীদের অভিযোগ, মধ্যরাতে একদল শিক্ষার্থী হলে এসে ছাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। এসব ঘটনায় হলের আবাসিক শিক্ষক ও প্রক্টরিয়াল বডিকে ফোনে পাওয়া যায়নি। এ কারণেই তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে সহকারী প্রক্টর কোরবান আলীকে শারীরিক লাঞ্ছনা করতে দেখা গেছে এক ছাত্রীকে। এ ছাড়া কয়েকটি ভিডিওতে প্রক্টরিয়াল বডির একাধিক সদস্যকে ছাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে দেখা যায়।
এর মধ্যে সম্প্রতি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি স্ক্রিনশটে দেখা যায় ছাত্রীদের বহিষ্কার করতে প্রশাসনকে চাপ দিতে ‘অনুগত’ ছাত্রদের বলেছিলেন দুজন সহকারী প্রক্টর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। এসব নিয়েও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া এসব স্ক্রিনশটে ছিল সহকারী প্রক্টর কোরবান আলী ও নুরুল হামিদের সঙ্গে তাঁদের ‘অনুগত’ ছাত্রদের কথোপকথন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক শ ক ষ র থ প রথম আল ক এসব চ ঠ ফ সব ক হয় ছ ল ঘটন য় সহক র ঘটন র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে ভারত-পাকিস্তান সংকটের কেন্দ্র হয়ে উঠল ‘কাশ্মীর’
সাত দশকের বেশি সময় ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে কাশ্মীর অঞ্চল। গত মঙ্গলবার কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের গুলিতে ২৬ জন নিহত হওয়ার পর আবারও আলোচনায় এসেছে এই অঞ্চলটি।
১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী দেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই ভূখণ্ড নিয়ে দুটি যুদ্ধ করেছে। দুই দেশই এই অঞ্চলের পুরোটা নিজেদের দাবি করে, তবে নিয়ন্ত্রণ করে আংশিকভাবে।
চীনও এই অঞ্চলের কিছু অংশে শাসন পরিচালনা করে এবং এটি বিশ্বের অন্যতম অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সামরিকায়িত অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
২০১৯ সালে ভারতের পার্লামেন্ট এই অঞ্চলের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে, যা এই অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসনের কিছুটা অধিকার দিয়েছিল।
তখন জম্মু-কাশ্মীর দুই অংশকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালিত দুটি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।
এর পর থেকে ভারত সরকার বারবার দাবি করেছে যে এই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ থামানো গেছে। তবে মঙ্গলবারের মর্মান্তিক ঘটনার পর ভারত সরকারের সে দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সমালোচকেরা।
১৯৪৭ থেকে ইতিহাস
ব্রিটিশ শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর সে সময়কার রাজকীয় শাসকদের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
তৎকালীন কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ছিলেন একজন হিন্দু শাসক, কিন্তু এই অঞ্চলটি ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই দুই দেশের মাঝে অবস্থিত এই অঞ্চল নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে পরিবহন এবং অন্যান্য পরিষেবা বজায় রাখার জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
১৯৪৭ সালের অক্টোবরে, মুসলিমদের ওপর আক্রমণের খবরে এবং হরি সিংয়ের বিলম্ব করতে থাকা কৌশলে হতাশ হয়ে পাকিস্তানের নৃগোষ্ঠী কাশ্মীরে আক্রমণ করে।
মহারাজা হরি সিং তখন ভারতের সামরিক সহায়তা চেয়েছিলেন।
ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন বিশ্বাস করতেন যে কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে সাময়িকভাবে যুক্ত হলে শান্তি বজায় থাকবে এবং পরে তার চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে গণভোট হবে।
সেই মাসেই হরি সিং ‘অধিগ্রহণ চুক্তি’ স্বাক্ষর করেন, যার মধ্য দিয়ে পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতির নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ভূখণ্ডের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে নেয়, আর পাকিস্তান উত্তরের বাকি অংশ দখল করে। ১৯৫০-এর দশকে চীন এ রাজ্যের পূর্ব অংশ আকসাই চিন দখল করে।
এই ‘অধিগ্রহণ চুক্তি’ আগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল নাকি ভারতীয় সেনা আগে প্রবেশ করেছিল, সেটি এখনো ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বড় বিতর্কের বিষয়।
ভারত জোর দিয়ে বলে যে মহারাজা হরিং সিং প্রথমে স্বাক্ষর করেছিলেন, ফলে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বৈধ। আর পাকিস্তান বলে, মহারাজা সৈন্য আগমনের আগে স্বাক্ষর করেননি, তাই ভারত ও মহারাজা পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।
পাকিস্তান কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি গণভোট দাবি করে, আর ভারত বলে যে ধারাবাহিকভাবে রাজ্য ও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাশ্মীরিরা ভারতের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
পাকিস্তান জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রস্তাবের কথা বলে, যেখানে জাতিসংঘ পরিচালিত গণভোটের কথা বলা হয়েছে, তবে ভারত বলে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি অনুযায়ী সমস্যার সমাধান রাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে।
কয়েক দশক ধরে দুই পক্ষের এমন অবস্থানে খুব একটা নড়চড় হয়নি। এ ছাড়া কিছু কাশ্মীরি রয়েছে যারা স্বাধীনতা চায়, যেটা ভারত বা পাকিস্তান কেউই মেনে নিতে রাজি না। কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তান ১৯৪৭-৪৮ এবং ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ করেছে।
তারা সিমলা চুক্তিতে মূল যুদ্ধবিরতির যে রেখা ছিল সেটিকে নিয়ন্ত্রণ রেখা হিসেবে চূড়ান্ত করে, তবে এতে সংঘর্ষ বন্ধ হয়ে যায়নি। ১৯৯৯ সালে সিয়াচেন হিমবাহ অঞ্চলে আরও সংঘর্ষ হয়, যেটি ছিল নিয়ন্ত্রণরেখার বাইরে। ২০০২ সালেও দুই দেশ আবার যুদ্ধের কাছাকাছি চলে যায়।
১৯৮৯ সালে কাশ্মীরে ইসলামপন্থীদের নেতৃত্বে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। বিতর্কিত ‘সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন’ (এএফএসপিএ) চালু করে ভারত সেনাবাহিনীকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়।
এ আইন নিয়ে মাঝেমধ্যে পর্যালোচনা হলেও এটি এখনো ভারতশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে কার্যকর।
কাশ্মীরের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ সময়
১৮৪৬ - কাশ্মীর রাজ্য গঠিত হয়।
১৯৪৭-৪৮ - পাকিস্তানি নৃগোষ্ঠী বাহিনীর হামলার পর কাশ্মীরের মহারাজা ভারতের সঙ্গে অধিগ্রহণ চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
১৯৪৯ - ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে কাশ্মীর ভাগ হয়।
১৯৬২ - আকসাই চিন সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের যুদ্ধ হয়। এতে ভারত পরাজিত হয়।
১৯৬৫ - দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়, যেটি যুদ্ধবিরতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের উত্থান: জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ভারত ও পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরকে পুনরায় একত্র করে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন।
১৯৭২- শিমলা চুক্তি: যুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা চূড়ান্ত করে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে একমত হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়।
১৯৮০-৯০ দশক: ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে সশস্ত্র প্রতিরোধ, গণবিক্ষোভ ও পাকিস্তান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়।
১৯৯৯ - কারগিল যুদ্ধ: পাকিস্তান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী ভারতের অধীন কারগিল অংশে অনুপ্রবেশ করলে ভারত ও পাকিস্তান আবার স্বল্পমেয়াদি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
২০০৮ – ভারত ও পাকিস্তান ছয় দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো নিয়ন্ত্রণরেখা পারাপারের বাণিজ্য রুট চালু করে।
২০১০ - ভারতশাসিত কাশ্মীরে ভারতবিরোধী বিক্ষোভে শতাধিক যুবক নিহত হন।
২০১৫ – রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণ: জম্মু ও কাশ্মীরের নির্বাচনে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি প্রথমবারের মতো এ অঞ্চলে বড় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়, যখন তারা আঞ্চলিক মুসলিম পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে আংশিকভাবে জোট সরকার গঠন করে।
২০১৯ – ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামাতে ভারতের সেনাবাহিনীর বহরে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ৪০ জন সেনা নিহত হন। অগাস্ট মাসে ভারত সরকার জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে, যা রাজ্যটিকে উল্লেখযোগ্য স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিল। এরপর রাজ্যটিকে ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তর করা হয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা