বিএসইসি চেয়ারম্যান-কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি, নইলে কর্মবিরতি
Published: 5th, March 2025 GMT
পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বর্তমান চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের পদত্যাগ দাবি করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বুধবারের (৫ মার্চ) মধ্যে তারা পদত্যাগ না করলে কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দিয়েছেন কর্মকর্তা কর্মচারীরা। আগামী বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) থেকে বিএসইসির কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৫ মার্চ) সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে বিএসইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিক এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুর রহমান।
এ সময় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমান কমিশন নিয়ে বিএসইসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি আছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ— কমিশনারদের খারাপ আচরণ, বিভিন্ন কোম্পানির তদন্তের আলোকে কর্মকর্তাদের ধারাবাহিক শোকজ করা এবং নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আদেশ জারি করা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের কাছে ৫ দফা দাবি জানাই। তবে তারা এ দাবি মেনে নেয়নি। বরং আজ সেনাবাহিনীকে ভুল তথ্য দিয়ে ডেকে এনে তারা আমাদের কর্মকর্তাদের ওপর লাঠিচার্জ করিয়েছেন। এতে আমাদের ৬ জন কর্মী আহত হয়েছেন।
এ পরিস্থিতিতে আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশনের সঙ্গে কাজ করতে পারছি না। তাই, আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের পদত্যাগ দাবি করছি। তারা যদি বুধবারের মধ্যে পদত্যাগ না করেন তাহলে বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) থেকে পুরো কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন। আমরা সরকারের কাছে গণমাধ্যমের মাধ্যমে এ বিষয়টি তুলে ধরছি। সরকারকে এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য বিএসইসির সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, এখানে (বিএসইসি) যোগ্য ও অভিজ্ঞ বসানো হোক। বাংলাদেশ ব্যাংকে যেমন অভিজ্ঞ অভিভাবক দেওয়া হয়েছে, আমরাও তেমন অভিভাবক চাই। যে অভিভাবক তাদের নিজেদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মান দিতে জানে না, তাদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করা সম্ভব। আমরা তাদের দুর্ব্যবহার অনেক সহ্য করেছি, আর নয়। আমরা যদি কোনো অপরাধ করে থাকি, আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু সেটা না করে তারা এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয় বলে আমরা জানিয়েছি। কিন্তু তারা সেটা শুনেননি। বরং তারা আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।
বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দাবিগুলো হলো-
১.
২. বিতর্কিত তদন্ত প্রতিবেদনের মাধ্যমে কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের শোকজ বন্ধ করতে হবে এবং পূর্বে প্রদত্ত শোকজ সব প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. ১২৭ জনের নিয়োগের ব্যাপারে কমিশন কর্তৃক বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ এবং ৩ দিনের মধ্যে আপিল করে কমিশনের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।
৪. কমিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে অশোভন, অপেশাদারমূলক দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
৫. উপরিউক্ত ৪টি দাবি না মানলে এখনই পদত্যাগ করতে হবে।
এর আগে, বুধবার বেলা ১১টার দিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের ফ্লোর (পঞ্চম তালা) ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসইসি ভবনের সামনে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিএসইসির ভেতরে ঢুকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর অনেক বাগবিতণ্ডা এবং উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরে সাড়ে ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ অবস্থা থাকার পর চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার ফারজানা লালারুখ ও মো. আলী আকবর নিজ গাড়িতে করে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় কমিশন ত্যাগ করেন।
ঢাকা/এনটি/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর স থ ত র রহম ন পদত য গ
এছাড়াও পড়ুন:
মুশফিকের থেকে তামিমের চাওয়া ‘অন্তত ১০০ টেস্ট’
‘ক্রিকেটের মক্কা’ খ্যাত লর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকুর রহিমের। বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের যেই রেলগাড়িতে মুশফিকুর চড়েছিলেন, ধীরগতির সেই বাহন এখন তাকে নিয়ে গেছে নব্বই পেরিয়ে।
বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটের হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে নব্বইয়ের ঘর ছুঁয়েছিলেন মুশফিকুরের। তার টেস্ট ম্যাচ সংখ্যা এখন ৯৪। ইনজুরিতে না পড়লে গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে আরো দুইটি টেস্ট ম্যাচ যোগ হতো। তার সামনে একশ টেস্ট খেলার হাতছানি। পারবেন কী মুশফিক? সেটাই এখন বিরাট প্রশ্নের।
সেই প্রশ্নটা আরো একবার উঠল তার ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণার দিনে। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছাড়েন মুশফিকুর। গতকাল রাতে ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার অনন্য মাইলফলকের সামনে মুশফিকুর। বন্ধু তামিম ইকবালের একমাত্র চাওয়া, মুশফিক যেন অন্তত ১০০ টেস্ট খেলতে পারে।
আরো পড়ুন:
বিষন্ন মুশফিকুরের ওয়ানডে ছাড়ার ঘোষণা
এভাবেও ম্যাচ হারা যায়?
এক ভিডিও বার্তায় তামিম বলেছেন, ‘‘তুই একটা ফরম্যাট খেলবি, টেস্ট ফরম্যাট। আমি প্রত্যাশা ও প্রার্থনা করি তুই যেন ভালো করিস এবং অন্তত যেন ১০০ টেস্ট ম্যাচ খেলতে পারিস। যেটা বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত কোনো ক্রিকেটার খেলেনি। আমি আশা করবো ১০০ টেস্ট অবশ্যই খেলবি। এটাই।’’
১০০ টেস্ট খেলতে হলে মুশফিককে এ বছর পুরোটা সময় ফিট থাকতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। এপ্রিলে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসছে। আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম অনুযায়ী জুন-জুলাইয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা সফর করবে। সেখানে ২ টেস্ট খেলবে। এরপর বছরের শেষ দিকে আয়ারল্যান্ড সফরে রয়েছে আরো ২ টেস্ট। এই ৬ টেস্ট খেলতে পারলে মুশফিকের নাম ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে লিখা থাকবে নিশ্চিতভাবেই।
মুশফিকুরের ওয়ানডে অবসরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তামিম। তার কথা বলতে গিয়ে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন, ‘‘এমন একজন ব্যক্তি আজ (গতকাল) অবসরে গেলেন, যার সঙ্গে আমার অলমোস্ট ২০-২৫ বছরের সফর। একটা স্ট্যাটাস দিয়ে আসলে মানুষকে বুঝাতে পারতাম না আমার অনুভূতিটা তার প্রতি কী বা আমার কেমন মনে হচ্ছে।’’
‘‘মুশফিককে আমি এতোটুকুই বলতে চাই, দোস্ত তোর সাথে আমার খেলা শুরু অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায় থেকে এবং আমি তোকে প্রতিটি স্তরে উন্নতি করতে দেখেছি। আমি দেখেছি, তুই একটা নরম্যাল ব্যাটসম্যান থেকে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়েছিস। অনেক মানুষের, আপনাদের হয়তো ওর কঠোর পরিশ্রমটা দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আমরা যেহেতু একসঙ্গে খেলি আমি দেখেছি যে, একটা ছেলে কতটা কষ্ট করতে পারে। একটা মানুষের পক্ষে যতটা কষ্ট করা সম্ভব আমার কাছে মনে হয় সে সবই করেছে এবং এখনও করে যায়। আমরা এটা নিয়ে অনেক সময় হাসাহাসিও করি যে, একটা মানুষ এতো কষ্ট করে কেন? কিন্তু তার নিবেদন, তার খেলার প্রতি ভালোবাসা এটা কল্পনার বাইরে। আমি কথা বলে কোনোদিন কাউকে বোঝাতে পারব না।’’
মুশফিকুরের অবদান বাংলাদেশ ক্রিকেট মনে রাখবে বলে বিশ্বাস তামিমের, ‘‘আমি যেহেতু ওর খুব কাছের একজন, বন্ধু আমি, এটা অনুভব করতে পারছি এটা ওর জন্য প্রচন্ড কষ্টদায়ক। বন্ধু তুই যা অর্জন করতে পেরেছিস, যে-টুকুই তুই করেছিস তা অসাধারণ ছিল। অধিনায়ক হিসেবে, খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশের জন্য…বাংলাদেশের প্রত্যেকে বছরের পর বছর তা মনে রাখবে।’’
‘‘আমি সত্যি বলতে, এখন বেশ আবেগতাড়িত। আমি অনুভব করতে পারছি তোর এখন কেমন লাগছে।বাংলাদেশ তোকে নিশ্চিতভাবেই মিস করবে। বাংলাদেশের জন্য তুই যা করেছি তা অনেক বছর মনে রাখবে। আমি ভাগ্যবান যে ডিপিএল তোর সঙ্গে খেলতে পারছি। আরো কিছু সময় কাটাতে পারব। অনেক ধন্যবাদ মুশফিক, সব কিছুর জন্য।’’
ঢাকা/ইয়াসিন